বাচ্চাদের পড়া মুখস্থ থাকে না কেন?

ডা. সাঈদ এনাম
2023-10-12 13:40:42
বাচ্চাদের পড়া মুখস্থ থাকে না কেন?

মায়ের কাছে শিশুর পড়ালেখা (ইনসেটে ডা. সাঈদ এনাম)

অভিভাবকরা তাদের বাচ্চাদের অতি সাধারণ একটা সমস্যা নিয়ে প্রায়শই আসেন। তার বাচ্চা পড়া মুখস্থ রাখতে পারে না, পড়লে ভুলে যায়। পড়ায় সে যথেষ্ট সময় দেয়, তারপরও ভুলে যায়। পড়া মুখস্থ করে মনে রাখা, পুনরায় বলা, পরীক্ষার হলে গড় গড় বলে যাওয়া, বা লিখে যাওয়া এসব নির্ভর করে প্রধানত পড়ার স্টাইলের উপর।

১. প্রথম কথা হলো যা পড়ছেন বা যা মুখস্থ করতে বসছেন, আপনাকে সেটা বুঝে বুঝে পড়তে হবে।

২. যতক্ষণ পড়ায় থাকবেন ততক্ষণ শিক্ষার্থীকে ভাবনায় সেই বিষয়টিতে থাকতে হবে। সেটা ৫ মিনিট হোক বা ১০ মিনিট যত সময় হোক ততটা সময়।

৩. অনেক সময় দেখা যায়, শিক্ষার্থী মুখস্থ করছেন এক টপিক কিন্তু ভাবনায় আরেকটা। এটা ঠিক নয়। এর ফলে শিক্ষার্থী ঘন্টার পর ঘন্টা সে বিষয়টি পড়লেও সেটা স্বাভাবিকভাবেই মনে থাকবে না।

একটা উদাহরণ দেই, ধরুন আপনি মুখস্থ করেছেন বাংলাদেশের জলবায়ু। সুতরাং পড়ার সময় ভাবনার মধ্যে রাখবেন জলবায়ু বিষয়ক চিন্তা ভাবনা।

৪. মুখস্থ করার পর দিনের অন্যান্য সময়ে সে টপিকটা সম্ভব হলে একাধিকবার মনে করার চেষ্টা করতে হবে। অর্থাৎ ধরুন সকালে মুখস্থ করার চেষ্টা করেছেন বাংলাদেশের জলবায়ু। সুতরাং দুপুরে, বিকালে বা রাত্রে সে মুখস্থ করার বিষয়টি মনে চেষ্টা করতে হবে। দেখবেন হুবুহু হয়তো সেটা মনে আসছে বা কিছু কিছু লাইন বাদ পড়ে যাচ্ছে। সমস্যা নেই, সেটাই স্বাভাবিক। প্রধান কাজ হলো যে অংশ বাদ পড়বে সেটা আবার একবার দেখে নেয়া।

৫. শিশুদের ক্ষেত্রে মা বাবা বা অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। শিশু যে বিষয়টি পড়েছিলো, খেলাচ্ছলে বা গল্পেরচ্ছলে দিনের কোন এক সময়ে তাকে বলতে হবে, "আচ্ছা বাবু সকালে যে বিষয়টি তুমি মুখস্থ করেছো দেখি একটু মনে করতো? এভাবে তাকে পড়া রিট্রাইভের প্র্যাক্টিস করাতে হবে। এতে মুখস্থ করা টপিকটি স্থায়ীভাবে তার মেমোরি সেন্টারে জায়গা করে নেবে।

৬. মুখস্থ করার সময়ে অন্য কোন কাজ করা যাবে না। যেমন- মোবাইলে গেইম খেলা, কারো সাথে গল্প করা, চ্যাটিং করা ইত্যাদি। এতে মুখস্থ হবে না। হলেও মনে থাকবে না।

৭. মুখস্থ করার পর সেটা লিখার চেষ্টা করা। লিখায় ভুল সংশোধন করা। পুনরায় শুদ্ধ করে লেখা।

৮. যা মুখস্থ করা হয়েছে সেই টপিকটাকে সেদিন বা অন্যান্য দিন বা কয়েকদিন পর পর মাঝেমধ্যে রিভিশন দিয়ার চেষ্টা করতে হবে। রিভিশন বাধ্যতামূলক। রিভিশন না হলে পড়া মনে থাকবে না।


৯. সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো, পর্যাপ্ত ঘুম এবং বিশ্রাম। ঘুমের সময় মুখস্থ করা টপিক ব্রেইনের একটা যায়গায় (মেমোরি সেন্টারে) স্থায়ীভাবে স্থান করে নেয়। সুতরাং পর্যাপ্ত ঘুম হতেই হবে।

১০. খাবারের একটা ভুমিকা আছে মনে রাখায়। প্রোটিন জাতীয় খাবার খাবেন। আমাদের ব্রেইনের নিউরোট্রান্সমিটার গুলো প্রোটিনের তৈরি। বাহিরের ফাস্ট ফুড, চকোলেট, চিপস, ভিটামিন মিনারেল সাপ্লিমেন্ট সমৃদ্ধ গুড়া পাউডার না খাওয়া।

অনেক বাচ্চা আছে যারা দ্রুত মূখস্থ করতে পারে আবার সেটা মনেও রাখতে পারে চমৎকার। এর মূল রহস্যই হলো তারা উপরোক্ত পন্থাগুলো অনুসরণ করে চলে।

সুতরাং যারা খুব ভালো মনে রাখতে পারে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজনে মুখস্থ রাখার টেকনিকগুলো শিখে নেবার তাগাদা দিতে হবে বাচ্চাকে। তাদের সাথে বন্ধুত্ব রাখতে উৎসাহ দিতে হবে। শিশুদের বেড়ে উঠায়, শিখায় তার বন্ধু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 

লেখকঃ

ডা. সাঈদ এনাম
এমবিবিএস (ডিএমসি) এম ফিল (সাইকিয়াট্রি) বিসিএস (হেলথ)
সহকারী অধ্যাপক, সাইকিয়াট্রি।
ইন্টারন্যাশনাল ফেলো, আমেরিকান সাইকিয়াট্রিক এসোসিয়েশন


আরও দেখুন: