নবজাতকের জন্ডিস ও রোদের প্রয়োজনীয়তা
নবজাতকের জন্ডিস (ইনসেটে লেখক)
বেশিরভাগ নবজাতকের জন্মের দু দিন পর চোখ ও শরীর হলুদ হতে থাকে, এটাকে জন্ডিস বলে। সাধারণত ৩ দশমিক ৭ দিনের মধ্যে জন্ডিস বাড়ে এরপর ১৪ দিন বয়সের মধ্যে এই জন্ডিস কমে যায়।
এসব জন্ডিসে বাচ্চার প্রস্রাব হলুদ হয় না, পায়খানা সাদা হয় না.. বেশির ভাগ ক্ষেত্রে এই জন্ডিসের কোন মারাত্মক কারণ থাকে না। এই জন্ডিসকে ফিজিওলজিকাল জন্ডিস বলে।
এই জন্ডিস এমনিতেই ভালো হয়ে যায়, কখনো বেশি বেড়ে গেলে ফটোথেরাপি চিকিৎসা দিতে হবে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে, এক্ষেত্রে নবজাতককে রোদে দেয়ার প্রয়োজন নেই।
তবে ফিজিওলজিকাল জন্ডিস শরীরে ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতার জন্য বেড়ে যায়, এজন্য নবজাতককে বারবার( ১.৫/ ২ ঘন্টা পরপর) পর্যাপ্ত বুকের দুধ খাওয়ানো জরুরি।
ফিজিওলজিকাল জন্ডিসে এখন আর নবজাতককে রোদে দেয়ার প্রয়োজন নেই বরং রোদে রাখার কিছু সমস্যা আছে, যেমন -
* অপরিণত বয়স ও স্বল্প (২ দশমিক ৫ কেজির নীচে) ওজনের বাচ্চাকে সকালে রোদে রাখতে গিয়ে ঠান্ডা বাতাসে শিশুর শরীরের তাপমাত্রা কমে ( হাইপোথারমিয়া) যাবে, বুকে কফ জমে নিউমোনিয়া হতে পারে।
* আবার দুপুরের কড়া রোদে রাখলে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে (হাইপোথারমিয়া) জ্বর আসতে পারে, শরীরে পানিশূন্যতা হবে, বাচ্চা নেতিয়ে যাবে, নবজাতককে ত্বক রোদে পুড়ে যাবে, সূর্যের আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি শিশুর ডিএন একে ক্ষতিগ্ৰস্থ করে পরবর্তীতে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ায়।
তবে এটাও সত্যি শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি তৈরির জন্য শরীরে রোদ লাগানো প্রয়োজন, সেক্ষেত্রে বাচ্চা বয়স এক মাস পার হলে, বিকালের মিষ্টি রোদ লাগানো যেতে পারে অল্প সময়ের জন্য।
তবে গোসলের আগে তেল মাখিয়ে অনেক সময় ধরে বাচ্চাকে কড়া রোদে ফেলে রাখা যাবে না,এতে বাচ্চা ঘেমে যাবে, ত্বক পুড়ে যাবে ও কালো হয়ে যাবে। বাচ্চার চোখে ও জননাংগে সরাসরি রোদ লাগানো যাবে না।
মোদ্দা কথা ফিজিওলজিকাল বা স্বাভাবিক জন্ডিসের জন্য নবজাতককে এখন আর রোদে রাখার প্রয়োজন নেই।
জন্ডিস ১৪ দিনেও ভালো না হলে বা অতিরিক্ত শরীর হলুদ হলে নবজাতকের রক্ত পরীক্ষা করতে হবে ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দিতে হবে।
লেখক :
লে. কর্নেল (ডা.) লিনা ফ্লোরেন্স
শিশু পরিপাকতন্ত্র ও পুষ্টি বিশেষজ্ঞ।