শিশুদের জ্বরে করণীয়
শিশুদের জ্বরে করণীয় (ইনসেটে লেখক)
এখন রোদ বৃষ্টি ভ্যাপসা গরমের আবহাওয়ায় সবাই কমবেশি জ্বরে ভুগছে, সাথে ডেংগু জ্বরের প্রকোপ তো আছেই। আজ তাই শিশুদের জ্বর নিয়ে কিছু লিখলাম।
জ্বরে শিশুদের ভোগান্তি বেশি হয়। অভিভাবকেরা শিশুর বেশি জ্বরে প্যানিক হয়ে যান। ভাইরাল ফিভারে শিশুদের জ্বর একবারেই বেশি চলে আসে, ১০২° f এর উপরে, একেবারে ১০৪/১০৫°f পর্যন্ত হতে পারে।
* শিশুর পানিশূন্যতা থাকলে অথবা পারিপার্শ্বিক আবহাওয়া গরম থাকলে শরীরের তাপমাত্রা ১°f বেশি হতে পারে, এজন্য আতংকিত না হয়ে কিছু নিয়ম মেনে জ্বর কমাতে হবে।
* মনে রাখতে হবে ,ভাইরাস জ্বরে এন্টিবায়োটিকের কোন ভূমিকা নেই..আবার রোগ নির্ণয় করে এন্টিবায়োটিক শুরু করলে একবেলা বা একদিনে জ্বর কমে যাবে না।
* জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল খেলেই সাথে সাথে জ্বর ১০৪ থেকে নরমাল তাপমাত্রায় চলে আসবে সেটা ভাবা যেমন ভুল, তেমনি সাপোজেটরী দিলেই জ্বর আর আসবে না, সেটাও ভুল।
* ভাইরাল ফিভার সাধারণ ৩-৭ দিন পর্যন্ত থাকতে পারে, প্রথম ৩-৪ দিন জ্বর অনেক বেশি থাকে আর প্যারাসিটামল খেলেও জ্বর পুরোপুরি নরমাল হয় না বা ১-২ ঘন্টা পর আবার জ্বর বাড়তে শুরু করে।
* জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল ৪-৬ ঘন্টা পর পর দেয়া যায়, তবে ৬ ঘন্টা পর পর দেয়াটা নিরাপদ, বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে।
* অতিরিক্ত জ্বর ( ≥ ১০৩ ) ৪ ঘন্টা পার হলেও যদি না কমে তবে প্যারাসিটামল আবার দিতে হবে।
* বাচ্চাদের ওষুধের ডোজ যেহেতু ওজন বুঝে দেয়া হয়, অতএব প্যারাসিটামল সঠিক ডোজে না দিলে কিন্তু জ্বর নামবে না- এটা মাথায় রাখতে হবে।
* অনেকে জ্বর না থাকলেও প্যারাসিটামল তিন বেলা চালিয়ে যেতে থাকেন তিন চার দিন, যাতে জ্বর উঠতেই না পারে.. এটাও ভুল।
* প্যারাসিটামল দিলেই সাথে সাথে জ্বর নেমে যাবে না..৩০ মিনিট সময় লাগবে অন্তত।
* প্যারাসিটামল সাপোজেটরী সাধারনত জ্বর> ১০২°f এর বেশি হলে দেয়া হয় যদিও সাপোজেটরী তাদেরই দেয়ার কথা যে অতিরিক্ত বমি করছে, পেটে ওষুধ রাখতে পারছে না, বা খাওয়ার মতো অবস্থায় নেই বা অচেতন। #সাপোজেটরী দিলেই অনেক সময় পায়খানা একটু পাতলা বা নরম হতে পারে এক দুবার, আর যাদের পাতলা পায়খানা হচ্ছে জ্বরের সাথে, তাদের সাপোজেটরী দেয়া যাবে না।
* প্যারাসিটামল দিলেই যেহেতু সাথে সাথে জ্বর কমে না তাই >১০৩°f এর উপরে জ্বর হলে বড় বাচ্চাদের ট্যাপ ওয়াটার বা কুসুম গরম পানি (luke warm) দিয়ে শরীর মোছানো যেতে পারে।
এক্ষেত্রে বাচ্চার শরীর উম্মুক্ত করতে হবে, ফ্যান ছেড়ে দিতে হবে, এরপর ভেজা নরম কাপড় বা টাওয়াল দিয়ে বাচ্চার কপাল, গলা, বগল,কুচকি মোছাতে হবে, সারা শরীরে ধীরে ধীরে চেপে চেপে মোছাতে হবে। গায়ে পাতলা পানির লেয়ার থাকবে, ভিজে জবজবে করে মোছানো যাবে না, গা শুকিয়ে গেলে আবার মোছাতে হবে।
* খুব দ্রুত শরীর মোছালে, বা বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে মোছালে হিতে বিপরীত হবে।
* জ্বর কমাতে ৩০ মিনিটের বেশি শরীর মোছানো যাবে না, বাচ্চাদের ১৫-২০ মিনিটের বেশি মোছানো যাবে না।
* বাচ্চার শরীরে কাঁপুনি আসলে মোছানো বন্ধ করতে হবে। খুব ছোট বাচ্চাকে পানি দিয়ে স্পনজিং করা যাবে না। অনেকে বাচ্চার মাথায় পানি ঢালেন এতে বাচ্চার ঠান্ডা লেগে হাইপোথারমিয়া বা পরবর্তীতে নিউমোনিয়া হতে পারে।
অনেকে ভেজা কাপড় দিয়ে কপালে শুধু জলপট্টি দেন এটাও ঠিক না।
জ্বর হলে বাচ্চার হাইড্রেশন ঠিক রাখতে হবে। প্রচুর তরল জাতীয় খাবার খাওয়াতে হবে, যেন বাচ্চা দুর্বল না হয়ে পড়ে ও বাচ্চার প্রস্রাব পরিমাণ মতো হয়।
* শিশুর জ্বরে প্যানিক হবেন না। প্রয়োজনে শিশু ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। সঠিক নিয়মে ও ডোজে প্যারাসিটামল খাওয়াবেন। সঠিক পরীক্ষা নিরীক্ষা ও শিশু ডাক্তারের পরামর্শ ব্যতীত অযথা এন্টিবায়োটিক খাওয়াবেন না- এটাই অনুরোধ।
লেখক:
লে: কর্নেল ডা. লিনা ফ্লোরেন্স
এমবিবিএস (শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ), এমডি (শিশু পুষ্টি ও পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞ)
শিশু বিশেষজ্ঞ