জরায়ুমুখ ক্যান্সার: সচেতনতায় প্রতিরোধ ও সুচিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব
জরায়ুমুখ ক্যান্সার: সচেতনতায় প্রতিরোধ ও সুচিকিৎসায় নিরাময় সম্ভব (ইনসেটে লেখক)
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের নাম আমরা সবাই শুনেছি।
সাধারণত প্রিমেনপোজাল নারীদের মধ্যে বেশি হয়। তবে মাসিক বন্ধ হবার পরও হতে পারে। নারীদের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ এই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন ও মৃত্যুবরণ করেন। অথচ শতভাগ প্রতিরোধযোগ্য এ ক্যান্সারে কোনো নারীরই মৃত্যু কাম্য নয়।
আসুন জেনে নেই এর কারণগুলো কি কি?
* যৌনসঙ্গী পুরুষ যদি Human Papilloma Virus এর বাহক হন।
* অল্প বয়সে সন্তান প্রসব, বেশি সন্তান প্রসব।
* একাধিক যৌনসঙ্গী।
* অল্প বয়সে যৌন সম্পর্ক।
* অন্যান্য যৌনবাহিত রোগ যদি শরীরে থেকে থাকে।
জরায়ু মুখ ক্যান্সারের লক্ষণসমূহ কি কি ?
প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ক্ষেত্রে লক্ষণ নাও থাকতে পারে এছাড়া....
* মাসিকের রাস্তা দিয়ে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ।
* যৌন মিলনের পর রক্তক্ষরণ।
* মাসিকের রাস্তা দিয়ে দুর্গন্ধযুক্ত পানি বা পুজ বের হওয়া।
* জরায়ুমুখে প্রদাহ।
* ক্ষুধামন্দা, বমিভাব, ওজন কমে যাওয়া, গায়ে জ্বর থাকা।
অগ্রবর্তী অবস্থায় লক্ষণসমূহঃ
* তল পেটে ব্যাথা ও কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়া
* কোমরের পিছনে ব্যাথা যা পায়ের দিকে যেতে পারে।
* মাসিকের রাস্তায় জ্বলাপোড়া, অস্বাভাবিক রক্তপড়া, পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যাওয়া।
* মাসিকের রাস্তায় ফিস্টুলা, অর্থাৎ মাসিকের রাস্তায় প্রসাব বা মল আসা।
* কিডনী ফেইলিউর হয়ে যাওয়া।
* কুচকি ফুলে যাওয়া।
প্রতিরোধের উপায়সমূহ কি কি ?
* যৌনমিলনের সময় কনডম ব্যবহার করা।
* ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা।
* ভ্যাকসিনেশন: ৯ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নারীদেরকে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের টিকা দেওয়া।
(এই ভ্যাক্সিনের সাধারনভাবে তিনটি ডোজ রয়েছে। প্রথমটা নেওয়ার ১ মাস পর দ্বিতীয়টা এবং ৬ মাস পর তৃতীয় ডোজ দেওয়া হয়। তবে ১৪ বছরের কমবয়সীদের জন্য ২ টা ডোজ নিলেই চলে। ভ্যাক্সিন দেওয়ার পরও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে থাকতে হবে।)
* ২১ বছর বয়স থেকে অথবা যৌন সম্পর্ক স্থাপনের ৩ বছরের মধ্য থেকেই প্রতিটি নারীকে নিয়মিত স্ক্রিনিং এর আওতায় নিয়ে আসা উচিত।
(সাধারনত গাইনী বিশেষজ্ঞ সার্জন স্ক্রিনিং করে থাকেন। ৩০ বছর বয়স পর্যন্ত প্রতি বছর এবং এরপর প্রতি ২/৩ বছর পর পর স্ক্রিনিং করা উচিত। যদি কারো বয়স ৭০ পেরিয়ে যায় বা বিগত ১০ বছরের মধ্যে স্ক্রিনিং টেস্ট ভালো থাকে তাহলে আর না করলেও চলবে।)
* কারো মধ্যে যদি ক্যান্সার পূর্ববর্তী লক্ষণ প্রকাশ পায় তখনই তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে ও দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
সনাক্তকরনের পদ্ধতি কি ?
স্ক্রিনিংয়ের জন্য VIA Test ও PAP smear Test করা হয়ে থাকে। VIA/PAP টেস্টে কোনো সন্দেহজনক কিছু পাওয়া গেলে গাইনোকলোজিক্যাল পরীক্ষা ও টিস্যু বায়োপসির মাধ্যমে নিশ্চিত হতে হবে। তারপর একজন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে স্টেজ নির্ধারন করবেন।
চিকিৎসা পদ্ধতিগুলো হলোঃ
* সার্জারি।
* ব্রাকিথেরাপি।
* রেডিওথেরাপি।
* কেমোথেরাপি।
অতএব আসুন নিজে সচেতন হই পরিবার ও সমাজকে সচেতন করি। আমার, আপনার ‘সকলের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দূর হোক ক্যান্সার চিকিৎসার সকল অন্তরায়’।
জনসচেতনতায়ঃ
ডা. মো. তৌছিফুর রহমান
এম.বি.বি.এস (শসোমেক), সি.সি.ডি (বারডেম), এম.ডি(অনকোলজি) বি.এস.এম.এম.ইউ ।
সহকারী অধ্যাপক (ক্যান্সার রোগ বিশেষজ্ঞ)
টিএমএসএস মেডিকেল কলেজ ও ক্যান্সার সেন্টার, বগুড়া।
চেম্বার: ইবনে সিনা ডায়াগনস্টিক ও কনসাল্টেসন সেন্টার, বগুড়া।