অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ, চিকিৎসা

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি
2023-05-20 17:28:04
অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ, চিকিৎসা

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ ও চিকিৎসা

নারীর জীবন ছন্দময়। এই ছন্দের রেশ ধরে ঋতুমতী নারীদের জরায়ু চক্রাকারে যে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায় এবং এর ফলে রক্ত ও জরায়ুনিঃসৃত পদার্থ যোনিপথে বেরিয়ে আসার নামই ঋতুস্রাব। স্বাভাবিক এই ছন্দের মূলে রয়েছে শরীরের বেশ কিছু হরমোনের প্রভাব।

২৮ থেকে ৩০ দিন অন্তর ইস্ট্রোজেন, প্রজেস্টেরনসহ আরও কিছু হরমোনের প্রভাবে ঋতুস্রাব হয়ে থাকে। তবে ২১ থেকে ৩৫ দিন অন্তর ঋতুস্রাব হওয়াকে স্বাভাবিক বলে ধরে নেওয়া হয়। কোনো কারণে যদি হরমোন স্তরের তারতম্য ঘটে এবং ঋতুচক্র প্রতি মাসে সংঘটিত না হয়ে ২ থেকে ৩ মাস বা ৪ থেকে ৫ মাস পর পর হয়, তখন তাকে অনিয়মিত ঋতুস্রাব বলে। বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়। আবার অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণে নানান জটিলতা দেখা দিতে পারে।

 

অনিয়মিত ঋতুস্রাবের কারণ

১- পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম

২- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও কাজের চাপ

৩- অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ

৪- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ

৫- ব্যক্তিগত অপরিচ্ছন্নতা

৬- ধূমপান/মদ্যপান

৭- যৌনবাহিত রোগ

৮- থাইরয়েড, প্রোল্যাকটিন বা অন্য হরমোনের তারতম্য

৯- শরীরের ওজন অতিরিক্ত কম বা বেশি হলে

১০- অপুষ্টি, রক্তশূন্যতা

১১- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি (বড়ি, ইনজেকশন, ইমপ্লান্ট ইত্যাদি)

১২- অতিরিক্ত শরীরচর্চা করা

১৩- জরায়ুর টিউমার, এন্ডোমেট্রিওসিস

১৪- নিজের অজান্তে গর্ভবতী হয়ে মিসক্যারেজ হয়ে গেলে

১৫- মানসিক রোগসহ কিছু রোগের ওষুধ সেবন

১৬- রোগ নিরাময়ে হরমোনজাতীয় ওষুধ সেবন

১৭- নতুন মাসিক হয়েছে এমন কিশোরীরা

১৮- মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার আগে/ পেরিমেনোপজাল

১৯- দুগ্ধদানকারী মা

 

অনিয়মিত মাসিকের অসুবিধা

১- বেশি সময় ধরে রক্ত যাওয়া

২- বেশি পরিমাণ বা চাকা চাকা রক্তপাত

৩- এক মাসে বেশি, আরেক মাসে কম রক্ত যাওয়া

৪- বন্ধ্যত্ব

৫- অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভ

৬- দাম্পত্যজীবনে অশান্তি

৭- মানসিক অশান্তি

 

কখন চিকিৎসকের কাছে যাবেন

১- ২১ দিনের কম সময়ে বা তিন মাসের বেশি সময় পরপর মাসিক হলে

২- রক্তপাত দুই দিনের কম বা সাত দিনের বেশি সময় হলে

৩- দুই মাসিকের মধ্যবর্তী সময় পরিবর্তিত হতে থাকলে

৪- অতিরিক্ত রক্তপাত বা চাকা চাকা রক্ত গেলে

৫- মাসিকের সময় তলপেটে অসহনীয় ব্যথা হলে

৬- বছরে তিন বার বা এর কম মাসিক হলে

 

অনিয়মিত মাসিকের চিকিৎসা

১- হরমোন থেরাপি/হরমোন দিয়ে চিকিৎসা

২- সন্তান ধারণক্ষম বয়সে রোগীর উপসর্গ ও সমস্যা অনুযায়ী চিকিৎসা

৩- রক্তশূন্যতা ও অপুষ্টির সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে নিরাময়

৪- জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির কারণে হয়ে থাকলে সে-সম্পর্কে চিকিৎসককে অবহিত করা এবং তাঁর পরামর্শ মোতাবেক পদ্ধতি পরিবর্তন করা

৫- দুগ্ধদানকারী মায়ের ক্ষেত্রে অনিয়মিত মাসিক স্বাভাবিক হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভ এড়াতে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি গ্রহণ করা
৬- কিশোরী এবং পেরিমেনোপজাল নারীদের অনিয়মিত মাসিকের ক্ষেত্রে কোনো ওষুধ প্রয়োজন নেই। এ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং করাই যথেষ্ট।

 

প্রতিরোধ

প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। মনে রাখতে হবে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের অন্যতম কারণ অস্বাভাবিক ওজন, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন ও দুশ্চিন্তা। কাজেই এ সমস্যা প্রতিরোধে কিছু বিষয়ে যত্নশীল হতে হবে। যেমন:

১- সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করা

২- অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও চাপ পরিহার করা

৩- স্বাভাবিক ওজন বজায় রাখতে সচেষ্ট হওয়া (বিএমআই: ১৮-২৫)

৪- নিয়মিত হাঁটা ও ব্যায়াম করা

৫- ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখা 

হরমোনাল ওষুধের যথেষ্ট ব্যবহার এড়িয়ে চলা। যেমন খুব বেশি প্রয়োজন না হলে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল না খাওয়া।

 

ডা. ফরিদা ইয়াসমিন সুমি

সহকারী অধ্যাপক, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ


আরও দেখুন: