গোড়ালি ব্যথায় কী করবেন
পায়ের গোড়ালির ব্যথায় করণীয় সম্পর্কে লিখেছেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী
পায়ের গোড়ালির ব্যথার অন্যতম কারণ প্লান্টার ফ্যাসাইটিস। এতে পায়ের তলায় বিশেষ করে হিল বা গোড়ালিতে খোঁচা দেওয়ার মতো ব্যথা অনুভূত হয়। সকালে ঘুম থেকে উঠে পা ফেললে তীব্র ব্যথা অনুভূত হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটির পর ব্যথা কমে আসে।
পায়ের সামনের দিকে ছোট ছোট হাড় পেছনের দিকে গোড়ালির হাড়ের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে যে ব্যান্ডের মতো লিগামেন্ট দিয়ে, তাকে বলে প্লান্টার ফাসা। শরীরের ওজন যেন সরাসরি পায়ের হাড়ের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে না পারে, সে জন্য এই ব্যান্ড কাজ করে। এই ব্যান্ডে প্রদাহ হলে গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হয়। তখন এটিকে বলে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস।
যাঁরা এই সমস্যার ঝুঁকিতে:
৪০ থেকে ৬০ বছর বয়সের মানুষ, বিশেষ করে নারীরা এই সমস্যার ঝুঁকিতে থাকেন। যেসব কাজে গোড়ালিতে চাপ পড়ে যেমন দৌড়, নৃত্য; পায়ের গঠনগত সমস্যা, যেমন ফ্লাট ফুট সমস্যা ঝুঁকির কারণ। আবার যাঁদের ওজন বেশি; যেসব পেশার লোকজনকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থেকে কাজ করতে হয় ও গর্ভবতী নারীদের শেষের দিকে প্লান্টার ফ্যাসাইটিস হতে পারে। যাঁরা আরথ্রাইটিস বা এনকাইলোজিং স্পন্ডেলাইটিসে ভুগছেন; যাঁরা দীর্ঘদিন শক্ত হিলের জুতা ব্যবহার করেন, তাঁরাও ঝুঁকিতে।
করণীয় কী:
▪ পায়ের যথাযথ বিশ্রাম দিতে হবে,
▪ পা উঁচু টুলের ওপর রাখার চেষ্টা করতে হবে,
▪ পায়ের ব্যথাযুক্ত জায়গায় বরফ বা আইসপ্যাক রাখতে হবে ২০ মিনিট করে ২-৩ ঘণ্টা পরপর,
▪ পা সকালে ও রাতে হালকা কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখা যেতে পারে ২০ মিনিট করে,
ওজন কমাতে হবে,
▪ প্রশস্ত আরামদায়ক নিচু হিলের নরম জুতা ব্যবহার করতে হবে;
▪ পায়ের ওপর চাপ পড়ে না এমন ব্যায়াম, যেমন সাঁতার কাটা যেতে পারে।
যা করা যাবে না:
অনেকক্ষণ হাঁটা বা দাঁড়িয়ে থাকা এড়িয়ে চলুন,
হাইহিল বা আঁটসাঁট জুতা ব্যবহার করবেন না।
শক্ত চপ্পল বা স্লিপারও ভালো নয়,
খালি পায়ে বা শক্ত বা উঁচু-নিচু জায়গায় হাঁটা যাবে না।
চিকিৎসা পদ্ধতি: প্রাথমিক চিকিৎসা-
RICE
R- Rest
I – Ice pack
C- Compression
E- Elevation
ঔষধ: প্যারাসিটামল জাতীয় ঔষধ খাওয়া যেতে পারে ৫-৭ দিন।
দীর্ঘ মেয়াদী ব্যথার চিকিৎসা: যে সব প্লান্টার ফাসাইটিসের ব্যথা প্রাথমিক চিকিৎসা ও সতর্কতা এর মাধ্যমে যায় না, তাদের ক্ষেত্রে ট্রিগার পয়েন্ট ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে স্টেরয়েড প্রয়োগ করে সাময়িকভাবে ব্যথা কমানো যায়।
ফিজিওথেরাপি: বেশ কিছু ফিজিওথেরাপি এখানে কাজ করে যেমন আল্ট্রাসাউন্ড, ESW থেরাপি ও ম্যাসেজ। এসব ক্ষেত্রে ব্যথা নিরাময়ে কিছু সময় লাগে।
পিআরপি: দীর্ঘ মেয়াদী ও জটিল প্লান্টার ফাসাইটিস এর ক্ষেত্রে পিআরপি খুবই ভালো কাজ করে। আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত নিয়ে মেশিনে দিয়ে রক্ত কণিকা আলাদা করে এই পিআরপি তৈরি করা হয়। এই পিআরপিতে প্রচুর পরিমাণে গ্রোথ ফ্যাক্টর থাকে যা দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতপূরণে সহায়তা করে। এটি একটি স্থায়ী চিকিৎসা পদ্ধতি।