হিট স্ট্রোক হলে করণীয় কি?
তীব্র তাপপ্রবাহে হতে পারে হিট স্ট্রোক
বিশ্বব্যাপী তাপমাত্রা বাড়তে থাকার প্রবণতার মধ্যে হিট স্ট্রোকের ভীতিও বাড়ছে। এ অবস্থায় প্রতিরোধের কথা তো বটেই, ভাবতে হবে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে নিজেকে সুস্থ করার কথাও। সেজন্য আপনি নিজে বা আশপাশে কেউ আক্রান্ত হলে কী করবেন তা জেনে-বুঝে নেয়া জরুরি।
হিট স্ট্রোকের যেসব লক্ষণ রয়েছে অন্য আরো কিছু রোগে এ ধরনের লক্ষণ দেখা যায়। তাই রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত কিনা তা আগে বুঝে নিতে হবে। এক্ষেত্রে ডাক্তারদের বেশ খানিকটা সময় লেগে যায়। সেজন্য আক্রান্তকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া শেষেই বেশকিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ঠিকঠাক চিহ্নিত করা গেলে রোগীকে সেবা দেয়াও সহজ হয়।
মায়ো ক্লিনিকের তথ্যমতে, চিকিৎসক প্রথমত রোগীর শরীরের তাপমাত্রা মেপে দেখতে পারেন। রেক্টাল টেম্পারেচার দিয়ে চিকিৎসক মূল শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করেন। এ পরিমাপের মাধ্যমে মুখে বা কপালে থার্মোমিটার দিয়ে যে তাপমাত্রা পাওয়া যায় তার তুলনায় আরো সঠিক তাপমাত্রা পাওয়া যায়।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত সন্দেহে কেউ চিকিৎসকের কাছে এলে তার রক্ত পরীক্ষার পরামর্শও দেন চিকিৎসকরা। এতে করে চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন রোগীর কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রে ক্ষতি রয়েছে কিনা। তাতে সে অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া সহজ হয়।
এ সময়ে চিকিৎসকরা রোগীর প্রস্রাব পরীক্ষাও করতে বলতে পারেন। সাধারণত তাপমাত্রাজনিত কোনো সমস্যা হলে প্রস্রাবের রঙ আরো গাঢ় হয়ে যায়। এ পরীক্ষা থেকে বোঝা যাবে রোগীর কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা। এছাড়া মাংসপেশির টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কিনা বোঝার জন্য মাংসপেশির কার্যক্রম পরীক্ষা করা হয়। পাশাপাশি ভেতরের কোনো অঙ্গ ক্ষতির মুখে পড়েছে কিনা বোঝার জন্য এক্স-রে বা অন্যান্য ইমেজিং পরীক্ষা করা হয়।
এসবের পরে যদি চিকিৎসকরা নিশ্চিত হন রোগী হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়েছেন তখন তারা চিকিৎসায় যান। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো ব্যক্তি যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় তাহলে দ্রুত তার শরীর থেকে অতিরিক্ত পোশাক খুলে দিতে হবে। রোগী বাইরে থাকলে তাকে দ্রুত ঘরের ভেতরে বা ছায়ার নিচে নিয়ে বসাতে হবে।
শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিক করতে ঠাণ্ডা পানিতে গোসল করাতে হবে। অথবা ঠাণ্ডা পানি দিয়ে পুরো শরীর মুছে দিতে হবে। আক্রান্ত ব্যক্তির মাথা, ঘাড়, কাঁধ, গলায়, বগলে ভেজা তোয়ালে দিয়ে বারবার মুছে দিতে হবে। বেশ খানিকটা সময় এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে। এতে ধীরে ধীরে রোগীর শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসবে। এ প্রক্রিয়ায় তাপমাত্রা ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে গেলেই ঠাণ্ডা করার প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিতে হবে।
বরফ বা ঠাণ্ডা পানি শরীরের ভাঁজে, গলার নিচে, বগল বা কুঁচকিতে লাগাতে হবে এবং চোখে-মুখে বারবার পানি ছিটিয়ে দিতে হবে।
রোগীর জ্ঞান থাকলে তাকে বার বার প্রচুর বিশুদ্ধ পানি এবং ফলের রস পান করানো দরকার। এতে তার শরীরের পানিশূন্যতা কিছুটা দূর হবে। যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসা শুরু করতে দেরি হয় তাহলে তার অঙ্গহানি থেকে প্রাণহানিও ঘটতে পারে। তাই রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া প্রয়োজন।
এমন তীব্র তাপপ্রবাহে হিট স্ট্রোক যে কারোরই হতে পারে। তাই সাবধান থাকতে হবে অনেক। নিজেকে নিরাপদ রাখার সব রকম প্রচেষ্টা রাখতে হবে। তাহলেই নিজেকে সুস্থ রাখা সম্ভব হবে।