স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রোজা

ডা. মাতুয়ারা শারমীন, গাইনী কনসাল্যোন্ট :
2023-04-01 10:19:40
স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রোজা

স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য রোজা-- লিখেছেন ডা. মাতুয়ারা শারমীন, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মেঘনা, কুমিল্লা।

যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ান, রমজান মাস এলে তাদের বেশ চিন্তিত দেখায়। রোজা রেখে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানো যাবে কি না, শিশু পর্যাপ্ত বুকের দুধ পাবে কি না, মা শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করবেন কি না—এমন প্রশ্নে তাঁরা ঘুরপাক খান। এ ক্ষেত্রে পরামর্শ হলো—

* রোজা রেখে মা ও তার সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকলে না রাখাই শ্রেয়।


* শিশুর বয়স ছয় মাসের কম হলে বা শিশুটি পুরোপুরি বুকের দুধের ওপর নির্ভরশীল হলে রোজা রাখা উচিত নয়। তবে শিশুর বয়স ছয় মাসের বেশি হলে, বুকের দুধের পাশাপাশি অন্যান্য খাবার খেতে থাকলে, সে ক্ষেত্রে স্তন্যদানকারী মায়েদের রোজা রাখতে তেমন সমস্যা নেই।

জেনে রাখা দরকার :


* রোজা রেখে শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ালে কোনো ক্ষতি হয় না। কারণ মা রোজা রাখলেও তাঁর শরীর আগের মতোই দুধ উৎপন্ন করবে। রোজার কারণে মায়ের শরীরে ক্যালরির ঘাটতি হলেও তা বুকের দুধের পরিমাণের ওপর কোনো প্রভাব ফেলে না।

তবে খেয়াল রাখতে হবে, শিশুটি সঠিক পরিমাণে পুষ্টি না পেলে কিন্তু কান্নাকাটি করবে, তার প্রস্রাব কমে যাবে।

করণীয় :

যেসব মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াচ্ছেন, তাঁরা যদি নিজের যত্ন সঠিকভাবে নেন, তবে রোজা রাখতে তেমন অসুবিধা নেই। বরং নিয়ম না মানলে নিজে অসুস্থ হওয়াসহ শিশুর স্বাস্থ্যের ওপরও প্রভাব পড়বে।

রোজা রেখে শিশুকে দুধ পান করানো মায়েদের কিছু বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন—

** স্তন্যদানকারী মায়েরা ইফতারের পর অল্প অল্প পানি পান করতে থাকুন। সেহরিতেও বেশি পানি পান করুন। এখন গরমের সময় বলে পানি পানে বেশি মনোযোগী হোন। কেননা বুকের দুধ উৎপাদনেও পানির চাহিদা অপরিসীম।

** খাওয়ার পর চা বা কফি পান না করাই ভালো। এগুলো শরীরকে আরো বেশি পানিশূন্য করে ফেলে। একান্তই পান করতে চাইলে হালকা লিকারের রং চা পান করুন।

** স্তন্যদানকারী মায়েদের ইফতার হবে অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। তেলে ভাজা, পোড়া বা মসলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন। পরিবর্তে টাটকা ফলের রস, শরবত, পরিমিত ভাত, মাছ বা মাংস, ডিম, ডাল, সবজি ও সালাদ খান।

** স্তন্যদানকারী মায়েরা অবশ্যই দৈনিক দুই গ্লাস দুধ পান করবেন। পর্যাপ্ত ঘুমাবেন।

** চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম, মাল্টিভিটামিন, মাল্টিমিনারেলসসমৃদ্ধ সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করুন।

 

সতর্কতা :

** রোজা রাখার পর কোনো কারণে মায়ের শরীরে পানিশূন্যতা দেখা দিলে মায়ের শরীর খারাপ হতে পারে। পানিশূন্যতার লক্ষণগুলো হলো—অনেক পিপাসা লাগা, গাঢ় বর্ণের প্রস্রাব হওয়া, মাথা হালকা লাগা বা মাথা ঘোরা, ক্লান্তি লাগা বা শরীরে শক্তি না-থাকা, মুখ, চোখ ও ঠোঁট শুকিয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা করা ইত্যাদি। এসব লক্ষণ দেখা দিলে মায়ের উচিত হবে সঙ্গে সঙ্গে পানি খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলা। এ সময় স্যালাইন খেয়ে বিশ্রাম করতে হবে।

** অনেকেই ইফতারের পর রাতের খাবার খেতে চান না। অনেকে আবার আলসেমি করে সাহরিও বাদ দেন। স্তন্যদানকারী মায়েদের এসব করা মোটেও চলবে না। সেহরিতে অবশ্যই সুষম খাবার খেতে হবে, যেন শরীর পর্যাপ্ত ক্যালরি পায়।

লেখক : 

ডা. মাতুয়ারা শারমীন
জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মেঘনা, কুমিল্লা। 


আরও দেখুন: