রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য এবং প্রতিরোধে করণীয়
ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
যখন একজন ব্যক্তির এক সপ্তাহে তিনটির কম মলত্যাগ হয়, তখন সেই অবস্থাকে কোষ্ঠকাঠিন্য বলা হয়।
মাঝে মাঝে কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা বলে মনে করা হয়, কিন্তু কিছু ব্যক্তি দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যর সমস্যায় ভুগতে পারেন, অর্থাৎ, কদাচিৎ মলত্যাগ বা বহু সপ্তাহ বা তারও বেশি সময় ধরে মলত্যাগে অসুবিধা হয়।
রোজায় কোষ্ঠকাঠিন্য বৃদ্ধির কারণ:
১. খাদ্যতালিকায় অধিক ভাজাপোড়াযুক্ত ও শাকসবজিহীন বা ফাইবারবিহীন খাবারের পরিমাণ বাড়ে।
২. অপর্যাপ্ত পানি পান,
৩. গ্রীষ্মকালীন গরমে অধিক ঘামে সৃষ্ট হওয়া পানিশূন্যতা এবং দীর্ঘ ১৪-১৫ ঘণ্টা পানি পান করতে না পারার কারণও এর জন্য দায়ী।
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকির কারণগুলি :
কিছু কারণ কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার ঝুঁকি বাড়াতে পারে। এই কারণগুলির মধ্যে রয়েছে:
▪️ বার্ধক্য
▪️ মহিলাদের মধ্যে বেশি
▪️ সাধারণ পানিশূন্যতা
▪️ কম ফাইবার খাদ্য
▪️ সামান্য বা কোন শারীরিক কার্যকলাপ
▪️ উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ,
▪️ ওপিওড ব্যথার ওষুধের মতো কিছু ওষুধ
▪️ দীর্ঘদিন কোনও অসুস্থতার কারণে বিছানায় শুয়ে থাকার ফলে,
▪️ মারাত্মক দুশ্চিন্তা বা অবসাদ
▪️ অন্ত্রনালীতে ক্যান্সার হলে
▪️ ডায়াবেটিস
▪️ মস্তিষ্কে টিউমার হলে এবং
▪️ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণের ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা শরীরে থাকতে পারে
▪️ হরমোন জাতীয় সমস্যা যেমন হাইপোথাইরয়েডিজম
দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্য হলে পাইলস বা অর্শ রোগ কিংবা এনাল ফিসার বা গেজ রোগ এর মতো পায়ুপথের রোগ হতে পারে। তাই এটি প্রতিরোধ এবং সুচিকিৎসা প্রয়োজন।
▶️কিভাবে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করবেন?
নিম্নলিখিত উপায়ে কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করা যেতে পারে :
▪️ প্রচুর তরল পান করুন
▪️ কম ফাইবারযুক্ত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবার, দুগ্ধজাত খাবার এবং মাংসজাত পণ্য এড়িয়ে চলুন
▪️ ফাইবার সমৃদ্ধ খাবারের সহজ পাঁচটি উপায়-
১. ভাত বা রুটি খাওয়ার ক্ষেত্রে লাল চাল ও লাল আটা ব্যবহার করতে পারেন। এগুলোতে ফাইবারের পরিমাণ বেশি থাকে।
২. খাবারে ডাল রাখতে পারেন। ডালে যথেষ্ট পরিমাণে ফাইবার থাকে।
৩. খাবারে কয়েক ধরনের বা সম্ভব না হলে কমপক্ষে এক ধরনের সবজি রাখতে হবে।
৪. যেসব ফল বা সবজি খোসাসহ খাওয়া যায় সেগুলো খোসা না ফেলে খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ খোসায় উচ্চ পরিমাণে ফাইবার থাকে। টমেটো, আপেল ও আলুর মতো খাবারগুলো খোসাসহ খেতে পারেন। তবে খাওয়ার আগে অবশ্যই ভালোমতো পরিষ্কার করে ধুয়ে নিতে হবে।
৫. ইফতারের পর থেকে সাহ্রি পর্যন্ত প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে।
▪️ যেসব খাবার শরীরে পানি কমিয়ে ফেলে, সেসব খাবার বা পানীয়, যেমন চা, কফি, অধিক মসলাযুক্ত ও তেল-চর্বিজাতীয় খাবার, ভাজাপোড়া ও মাংস কম খেতে হবে।
▪️ ইফতারে অধিক চিনিযুক্ত পানীয় বা শরবত না খাওয়াই ভালো। যেসব ফলে পানির পরিমাণ বেশি, যেমন- তরমুজ, শসা, বাঙ্গি ইত্যাদি বেশি বেশি খেতে পারেন।
▪️ খেজুর খাওয়া যেতে পারে, এটি কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।
▪️ আগে থেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে ইফতারে ইশবগুলের ভুসি, তোকমা দানা মিশ্রিত শরবত খাওয়া যেতে পারে। এটি স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
▪️ নিয়মিত কায়িক পরিশ্রম ও শরীরচর্চা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক হতে পারে।
▪️ মানসিক চাপ পরিচালনা করুন
▪️ মলত্যাগের জন্য একটি নিয়মিত সময়সূচী তৈরি করুন। খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ফাইবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
▪️ মল পাস করার তাগিদ উপেক্ষা করবেন না।
এছাড়াও কিছু lactulose সিরাপ রয়েছে, ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক তা গ্রহণ করা যেতে পারে।
লেখক :
ডা. আবুল ফয়সাল মোহাম্মদ নুরুদ্দীন চৌধুরী, মেডিসিন স্পেশালিস্ট, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।