রোজায় ভাজা-পোড়া: করুণ পরিণতি হবে লিভার রোগীদের
অধ্যাপক ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল
বিভিন্ন গবেষণা অনুযায়ী, ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য কম খাবার গ্রহণ করা উপকারী। সুতরাং এটা জোর গলায় বলা যায়, রোজা রাখলে এ ধরনের রোগীরা নিশ্চিত উপকার পাবেন। এ জন্য তাদেরকে অবশ্যই সত্যিকার রোজা রাখতে হবে। তারা খাবার গ্রহণে সংযমী হবেন। তেলের ভাজি-পোড়া, ফার্স্টফুড জাতীয় খাবার, চর্বি জাতীয় খাবার এড়ায়ে চলবেন। তাহলেই কেবল উপকার পাবেন।
লিভার সিরোসিসের রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ইনফেকশন হয়ে তাদের বিপদ আরও বাড়তে পারে।
আর যাদের লিভার সিরোসিস খারাপের দিকে আছে, অ্যাডভান্সড সিরোসিস বা ফেইলিউর- তাদের জন্য রোজা না রাখাই ভাল। কারণ, লিভারের অন্যতম একটা কাজ হচ্ছে, আমরা যে খাবারগুলো গ্রহণ করি সেগুলো প্রসেস করে শরীরে শক্তি হিসেবে সংরক্ষণ করে রাখে। কিন্তু যাদের লিভার ঠিক মতো কাজ করছে না তাদের এই কাজগুলো ঠিকভাবে হবে না।
এক কথায়, লিভার যখন সিরিয়াসলি আক্রান্ত থাকবে- লিভার সিরোসিস, লিভার ফেইলিউর, হেপাটাইটিস, লিভার ক্যান্সার- অর্থাৎ লিভারের কার্যক্ষমতা যখন স্বাভাবিক থাকবে না তখন রোজা রাখা যাবে না।
রোজার ইফতারে আমরা যে পানি পান করব সেটি অবশ্যই ফোটানো বা মিনারেল ওয়াটার হতে হবে। কারণ, অস্বাস্থ্যকর পানি পানের মাধ্যমে শরীরে হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস ছড়াতে পারে।
ব্যস্ততার কারণে অনেক মানুষই রাস্তাঘাটে ইফতার করেন। এ সময় তারা বাইরে বানানো শরবত পান করে থাকেন। শরবতগুলো নিরাপদ পানি দিয়ে বানানো হয়েছে- এমনটা নিশ্চিত হয়েই পান করতে হবে।
কারণ, দূষিত পানির মাধ্যমে হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস সংক্রমিত হতে পারে। বাংলাদেশের শিশুদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং বড়দের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ‘ই’ ভাইরাস হচ্ছে জন্ডিসের ‘কমন’ কারণ।
যাদের ইতোমধ্যে হার্ট ও কিডনির রোগসহ বিভিন্ন জটিলতা আছে, তাদের ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস ‘ই’ জনিত জন্ডিস মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সবমিলিয়ে রমজান মাসে ইফতার, সেহরি ও বাইরে খাওয়ার ব্যাপারে অবশ্যই সচেতন হতে হবে। যারা লিভারের রোগী তাদের বেশি সচেতন হতে হবে।
লিভারের রোগীদের শর্করা জাতীয় খাবার বেশি খাওয়া যাবে না। অতিরিক্ত শর্করার কারণে লিভারে বাড়তি চর্বি জমে যায়। ভাজাপোড়া না খেয়ে শাক-সবজি ও ফলমূল খাওয়া উচিত। ছোলা-বুট এগুলো অল্প পরিমাণে খাওয়া যেতে পারে। যে খাবারই খাই না কেন সেটি স্বাস্থ্যকর কি না, তা দেখতে হবে।
লেখক:
চেয়ারম্যান, হেপাটোলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়।