যেসব কারণে ব্রণ হয়, জেনে নিন করণীয়

ডক্টর টিভি রিপোর্ট
2022-04-12 16:30:14
যেসব কারণে ব্রণ হয়, জেনে নিন করণীয়

বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণটা বেশি হয়।

ব্রণ অনেকের কাছেই এক ভয়ের নাম। হুটহাট ব্রণের উপস্থিতি কমিয়ে দেয় আত্মবিশ্বাস ও উদ্দিপনা। তাছাড়া ব্রণ পরবর্তী দাগ নষ্ট করে চেহারার সৌন্দর্য। তাই জানা প্রয়োজন এর সঠিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা।

ব্রণ নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডিপার্টমেন্ট অব ডার্মাটোলজি-এর সহকারি অধ্যাপক ডা. জেসমিন আক্তার লীনা।

 
প্রশ্ন: ব্রণ আসলে কি?

আসলে ব্রণ এক ধরনের চর্মরোগ। সাধারণত তৈলাক্ত ত্বকে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এছাড়া টিনেজার ও মধ্য বয়সী মহিলাদেরও হতে পারে।

ব্রণের ক্ষেত্রে ছোট ছোট দানা,ফুসকুড়ির মত হতে পারে। ব্ল্যাকহেডস ও হোয়াইটহেডসও এগুলো হতে পারে। এছাড়া যদি ব্রণ বেড়ে যায়, তখন ছোট ছোট পুঁজ জমে , সিস্ট, নডিউল এ ধরনের বড় আকারের ব্রণও হতে পারে। এটাই হচ্ছে মূলত ব্রণ।

প্রশ্ন: ব্রণ কেনো হয় এবং কিভাবে হয়?

আসলে ব্রণ মাল্টি-ফ্যাক্টরিয়াল। তৈল গ্রন্থি বা সিবেসিয়াস গ্ল্যান্ডারসিক্লুয়েশনের কারণে ব্রণ হয়। এই সিক্লুয়েশনটা হতে পারে বিভিন্ন কারণে। হর্মনাল ইনফ্লুয়েন্স একটি বড় ফ্যাক্টর।

 এছাড়া জেনেটিক কিছু ফ্যাক্টর রয়েছে। এই ফ্যাক্টরগুলো দেখা যায় যখন সেবাসিয়াস গ্ল্যান্ডারসিক্লুয়েশন বাড়িয়ে দেয়, তখন ত্বকে যে তেল নিঃসরণ হয় সেটার সাথে ত্বকের যে মৃত কোষ বা ডেথ সেল থাকে এগুলা একসাথে হয়ে যে ওপেনিংটা (লোমকুপ) সেটাকে ব্লক করে দেয়। তখন সেখানে ভিতরে ত্বকের ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ ঘটে। এই সবগুলা ফ্যাক্টর একসাথে একটি ব্রণ তৈরি করে থাকে।


বয়ঃসন্ধিকালে ব্রণটা বেশি হয়। এছাড় প্রেগনেন্সির সময়, কন্ট্রাসেপটিভ পিল যারা খায় তাদেরও হতে পারে। আর মধ্য বয়স্ক যাদের  পলিসিসটিক ওভারি থাকে তাদের ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এগুলো সব হর্মনাল ইনফ্লুয়েন্স এর কারণে হয়।

এছাড়া লাইফ-স্টাইল খুব গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর । বিশেষ করে দেখা যায় যে, ইস্ট্রেসফুল  কোন ইভেন্ট থাকলে। যেমন-  সামনে পরীক্ষা। তারপর ঘুমে সমস্যা থাকলে। এগুলোও কিন্তু ব্রণকে বাড়িয়ে দেয়।  

প্রশ্ন: ব্রণের কোন ধরণ রয়েছে কিনা?

ব্রণের ধরণ আসলে মাইল্ড, মডারেট ও সিভিআর এইভাবে আমরা ভাগ করে থাকি। এ ছাড়া আরেক ভাবে ভাগ করা যায়, যেটা হচ্ছে- ইনফ্লামেটরি আর নন-ইনফ্লামেটরি।

 নন-ইনফ্লামেটরি অর্থাৎ যেখানে কোনো ইনফ্লামেশন নাই। যখন মাইল্ড এক্নি থাকে অর্থাৎ ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, এগুলো নন-ইনফ্লামেটরি। আর যখন সেখানে দেখা যায়, ইনফ্লামেশন হয়ে যায় তখন সেগুলো কিন্তু আরো বড় হয়ে যায়।

প্রশ্ন: খাদ্যাভ্যাস ব্রণে কোনো প্রভাব ফেলে কিনা?

আসলে খাদ্যাভ্যাস ব্রণের ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো প্রভাব ফেলে না। কিছু কিছু খাবার যেগুলো গ্লাইসেমিক ইনডেক্স বেশি, যেমন- কার্বোহাইড্রেট, সুগার বেশি, এ ধরনের কিছু খাবার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সটা বাড়িয়ে দেয় এবং ওগুলো পরোক্ষভাবে ব্রণকে কিছুটা বাড়াতে পারে।

আর স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য তো স্বাস্থ্যকর খাবার সবারই দরকার।

প্রশ্ন:  অনেকেরই প্রশ্ন ঈদ বা বিশেষ দিনগুলোর আগের দিন ব্রণ বেড়ে যায়, এর কারণ কি?

এর কারণ হল স্ট্রেস। আপনি দিনটি নিয়ে এতো বেশি চিন্তিত যে কী করবেন, না করবেন ইত্যাদি কারণে স্ট্রেস বেড়ে যায়। আরেকটা হতে পারে যে, আপনি ওই ইভেন্টকে সামনে রেখে ত্বকের উপর অন্য কোন ম্যানিপুলেশন করেছেন যা আপনার ত্বকের সাধারণ ব্যালেন্স নষ্ট করে দিচ্ছে।

প্রশ্ন: ত্বক ভালো রাখতে কী কী করতে হবে?

ক্লিনজিং একটি বড় ফ্যাক্টর। মুখমন্ডল প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে । যদি শুষ্ক ত্বক হয়, মশ্চোরাইজার ব্যবহার করতে হবে। এমনকি যদি তৈলাক্ত ত্বকও হয় অয়েল ফ্রি ময়েশ্চারাইজার আছে, তা ব্যবহার করতে হবে।

সান প্রটেকশন একটি বড় ফ্যাক্টর। ভাল একটি সান ব্লক ব্যবহার করতে হবে।

প্রশ্ন: ব্রণ হওয়ার পর কী ধরনের চিকিৎসা নেওয়া উচিৎ?

এক্নি ট্রিটমেন্টের ক্ষেত্রে কয়েক ধরণের চিকিৎসা আছে। আমরা প্রথমে ত্বকে লাগানোর কিছু ওষুধ দেই, তারপর খাবার ওষুধ দেই। এক্নির ধরণের উপর আসলে নির্ভর করে কী ধরনের মেডিকেশন প্রয়োজন।

খাবার ওষুধের ক্ষেত্রেও প্রাথমিকভাবে আমরা অ্যান্টিবায়োটিক দেই, কাজ না করলে সেকেন্ড লাইন আইসোট্রেটউইন আছে। এছাড়া হরমোনাল ট্রিটমেন্টও করা যেতে পারে এক্নির ক্ষেত্রে। এগুলোই হচ্ছে মেডিকেশন।



প্রশ্ন: পার্মানেন্ট স্কার পড়লে আমরা কি করবো?



আসলে স্কারেরও ধরণ আছে। ব্রণের/স্কারের পোস্ট ইনফ্লামেটিভ হাইপার প্রিভেনটেশন যেটা আমরা বলি ব্ল্যাক স্পট পরে। আর কিছু আছে যা ডিপ্রেসড বা স্কার হয়ে যায়। এটাও আসলে ত্বকের ধরণের উপর নির্ভর করে।

দেখা যায় কারও কারও ত্বকে পিগমেন্টেশনের ট্রেন্ডেনসি অনেক বেশি। তার হয়তো অল্পতেই হয়ে যাচ্ছে পিগমেন্টেশন। আবার কারো কারো দেখা যাচ্ছে যে ব্রণ হচ্ছে কিন্তু পিগমেন্টেশন তেমন হচ্ছেনা। পিগমেন্টেশন যদি হয়ে যায় সে ক্ষেত্রে পিগমেন্টেশনটা কন্ট্রোল করা বা নিয়ন্ত্রণ করা সহজ। তার জন্য আমরা সানব্লক তো অবশ্যই ব্যবহার করতে বলি।

পাশাপাশি কিছু হাইপোপিগমেন্টিক এজেন্ডা রয়েছে সেগুলো আমরা ব্যবহার  করতে বলি। তাহাড়া কেমিক্যাল পিলিং রয়েছে যা আধুনিক লেটেস্ট ট্রিটমেন্ট।

আর যদি স্কার হয়ে যায় তখন সেটাকে চিকিৎসা করা আসলে কঠিন। স্কার বলতে ডিপ্রেসড এক্নির বিভিন্ন ধরনের স্কার দেখা যায় ছোট স্কার, বড় স্কার, আইসপিক স্কার। এই ধরনের স্কার যদি হয়ে যায় তখন আসলে একটা সিঙ্গেল মডেলেটিস দিয়ে ট্রিট করা খুব কঠিন। তখন মাল্টিপল অ্যাপ্রোচে বিভিন্ন স্কার সিলেক্ট করে সেই স্কারগুলোর করার জন্য বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট করা যেতে পারে।


আরও দেখুন: