ডায়াবেটিসের রকমফের, কোনটি কখন কার হতে পারে
ডায়াবেটিসের রকমফের, কোনটি কখন কার হতে পারে
ডায়াবেটিস খুব সাধারণ একটি অসুখ। পরিবারের ছোট-বড় সবাই এখন রোগটি সম্পর্কে জানে। ডায়াবেটিস রোগটি এভাবেই সবার ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে।
আমাদের শরীরে প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয় বলে একটি অঙ্গ আছে। আমাদের পাকস্থলির পেছনে আড়াআড়িভাবে এর অবস্থান। এটি থেকে অনেকগুলো হরমোন বের হয়। তার মধ্যে একটি ইনসুলিন।
ইনসুলি হরমোন যখন একেবারেই কমে যায় কিংবা ঠিকমতো কাজ করতে পারে না, তখন রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। রক্তের সুগার কোষে কোষে ঢুকে পড়ে এবং শরীরের শক্তি উৎপাদনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যাহত করে। আর এ অবস্থার নামই হচ্ছে ডায়াবেটিস।
ডায়বেটিসের যত প্রকার
ডায়াবেটিসকে আমরা কয়েকটি ভাগে ভাগ করি। আমাদের প্যানক্রিয়াসে বিটা নামে এক ধরনের কোষ আছে। এ কোষ থেকে ইনসুলিন বের হয়। বিটা কোষ নানা কারণে নষ্ট হতে পারে। এর মধ্যে অটোমিউন ডেসট্রাকশন হয়ে গেলে ইনসুলিন একদমই থাকে না। তখন এটিকে টাইপ-১ ডায়াবেটিস বলা হয়।
৩০ বছরের কম বয়সীদের টাইপ-১ ডায়াবেটিস হয়। ইনসুলিন না থাকলে শুধু যে রক্তে সুগার বেড়ে যায়, তা নয়। মানুষ বাচঁতেও পারে না। এজন্য ইনসুলিনকে জীবন রক্ষাকারী হরমোনও বলা হয়।
টাইপ-১ ডায়াবেটিস হলে বারবার ক্ষুধা লাগে, ঘনঘন প্রস্রাব হয়, বারবার পানির পিপাসা লাগে, ওজন কমে যায়, খুব ক্লান্ত হয়ে পড়ে, শিশুদের বৃদ্ধি থমকে যায়।
আরেকটি ডায়বেটিস হলো টাইপ-২। এ ডায়াবেটিসে প্যানক্রিয়াস থেকে ইনসুলিন আসছে। কিন্তু যে পরিমাণ আসার কথা তা আসতে পারে না। বেশি অথবা কম আসে। ইনসুলিনের কার্যকারিতা ঠিক নেই। ফলে প্রচুর পরিমাণ ইনসুলিন রক্তে চলে আসে, ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।
সাধারণত ৩০ ঊর্ধ্বদের এ ধরনের ডায়াবেটিস হয় এবং বংশগত কারণে হয়ে থাকে। যেমন, মা-বাবা বা উভয়ের ডায়াবেটিস থাকলে সন্তানেরও হয়। এ ধরনের রোগীরা একটু মোটা হয়, খাবার-দাবার বেশি করে, কায়িক শ্রম বেশি একটা করে না।
আরেকটি ডায়াবেটিস রয়েছে, যেটিকে আমরা গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বলি। দেখা যাচ্ছে, রক্তে সুগার নেই, এমনকি কোনো অসুস্থতাও নেই। কিন্তু গর্ভবতী হলে কিংবা সন্তান ধারণের ২৮ সপ্তাহের দিকে গিয়ে এ ডায়াবেটিস প্রকাশ পায়। এ ধরনের ডায়াবেটিসকে আমরা জেস্টেশনাল ডায়াবেটিস বলি। যারা মোটা, কায়িক শ্রম কম করে, যাদের বংশগত হিস্টোরি রয়েছে, তাদের মধ্যে বেশি হয়। বারবার গর্ভপাত করলেও গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্তের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আরও এক ধরনের ডায়াবেটিস রয়েছে, যাকে আমরা ডায়াবেটিস না বলে প্রি-ডায়াবেটিস বলি। তাদের রক্তের সুগার পরীক্ষা করলে, খালি অথবা নাস্তার দুই ঘন্টা পর বা ৭৫ গ্রাম শরবত পান করিয়ে পরীক্ষাতেও ডায়াবেটিসের মাত্রা মেলে না। কিন্তু খালি পেটে আবার সুগার বেড়ে যায়। তবে এতটা না যতটা হলে আমরা ডায়াবেটিস বলি। এসব রোগী বুঝতে পারে না তাদের প্রি-ডায়াবেটিস রয়েছে। পরীক্ষা করলেই কেবল ধরা পড়ে।