জরায়ুর বিশেষ যত্ন কেন নিতে হবে?
জরায়ু শুধুমাত্র সন্তান জন্মদানের কাজে লাগে- এ ধারণা সঠিক নয়
আফরোজা আক্তারের চার মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় পেটে ব্যথা ও রক্তক্ষরণ হয়। চিকিৎসকের কাছে গেলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখতে পান, জরায়ু একটু ছেঁড়া বা ফুটা রয়েছে। এজন্য মাঝে মধ্যে রক্তক্ষরণ ও ব্যথা হচ্ছে।
আফরোজার মতো অনেকেই মনে করেন, জরায়ু শুধুমাত্র সন্তান জন্মদানের কাজে লাগে। এ ধারণা সঠিক নয়। জীবনের কয়েকটি পর্যায়ে জরায়ুর বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে মাসিকের সময়, সহবাসের সময়, গর্ভকালীন সময় এবং মেনোপজের (মাসিক ঋতুচক্র চিরতরে বন্ধ হয়ে যাওয়া) আগে ও পরে।
জরায়ুতে ভ্রুণের অবস্থান বা জরায়ুতে কোনো ধরনের সমস্যা আছে কিনা, তা জানতে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসের মধ্যে আল্ট্রাসনোগ্রাম করতে হয়। এতে সঠিক তথ্য পাওয়া যায়।
মাসিকের সময় স্যানিটারি ন্যাপকিন ব্যবহার করা প্রয়োজন। এ সময় ময়লা বা বেশি ভেজা ন্যাপকিন ব্যবহার করা ঠিক নয়। মাঝে মাঝে গরম পানি ব্যবহার জরায়ুকে অনেক বেশি সুরক্ষা দেবে। এ সময় জরায়ুর মুখ খোলা থাকে। তাই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা প্রয়োজন। নইলে জরায়ুতে সংক্রমণ ছাড়াও অন্য কোনো সমস্যা হতে পারে।
জোর জবরদস্তি করে সহবাস করা ঠিক নয়। এতে জরায়ু আঘাত পেয়ে সংক্রমণ হতে পারে। সহবাসের আগে ভালোভাবে প্রস্রাব করে যোনিপথ পানি দিয়ে ধুয়ে নেওয়া উচিত। সহবাসের পরেও অবশ্যই তা ভালোভাবে পরিষ্কার করা প্রয়োজন। মাসিকের সময় সহবাস করা ঠিক নয়। এতে জরায়ুর নানা রকম সমস্যা হতে পারে।
গর্ভকালীন সময়ে এবং প্রসব পরবর্তী সময়েও জরায়ুর দিকে বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন। ভ্রুণ জরায়ুতে অবস্থান করে এবং সেখানে বেড়ে ওঠে। তাই ভ্রুণ জরায়ুতে অবস্থান করছে কিনা বিষয়টি জানার জন্য গর্ভকালীন চেকআপ খুবই জরুরি। কেন না অনেক সময় দেখা যায় ভ্রুণ ডিম্বাশয়ে বা পেটের কোনো নালিতে বড় হতে থাকে। এতে অনেক জটিলতা সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য চিকিৎসকরা শুরুর দিকে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে ভ্রুণের অবস্থান দেখে নেন। অনেক সময় গর্ভকালীন সময়ে জরায়ু বা প্রস্রাবে ইনফেকশন হতে পারে। এ সময়েও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকা এবং যৌন আচরণে সংযত হওয়া প্রয়োজন। নইলে ভ্রুণ বা জরায়ুর ক্ষতি হতে পারে।
মেনোপজের আগে ও পরে জরায়ুর কিছু পরিবর্তন দেখা যায়। মেনোপজ হওয়ার আগে অনেকের বেশি ব্লিডিং হয়। অনেক সময় যোনিপ শুষ্ক হয়ে যায় এবং এ বিষয়টিকে অনেকে জরায়ুর সমস্যা মনে করে ভয় পান। মেনোপজের পর অনেকের জরায়ু বড় হয়ে যায়। পরিস্থিতি এমন হয় যে মনে হয় জরায়ু বাইরে বেরিয়ে আসছে ইত্যাদি। তাই এ সময়ে এ ধরনের সমস্যা হলে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত। সূত্র: বাসস
লেখক: ডা. ফারহানা দেওয়ান
সাবেক অধ্যাপক ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল