এই ভুলগুলো করলেই অকেজো হয়ে যেতে পারে আপনার কিডনি
প্রতি বছর একবার হলেও কিডনি চেক আপ করান।
কিডনি, আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ কার্যকরী অঙ্গগুলোর মধ্যে অন্যতম।
কিন্তু এই অঙ্গটির কাজ কী? কেনই বা এতো গুরুত্বপূর্ণ? কিংবা বেশি বেশি ঔষধ খেলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্থ হয়, এমন কথাইবা কেন প্রচলিত?
কিডনি একদিকে যেমন আমাদের গ্রহণ করা বিভিন্ন খাদ্য ও পানীয় থেকে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও ভিটামিন শোষণ করে নেয় তেমনি এসব খাদ্যের অবশিষ্ট্য বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। এছাড়াও শরীরের জন্য হরমোন তৈরি এবং অম্ল ও ক্ষারের সামঞ্জস্য বজায় রাখতে কাজ করে।
কিডনির সঙ্গে ঔষধের সম্পর্ক অনেক ক্ষেত্রেই সাংঘর্ষিক। বিভিন্ন সহজ ও কঠিন রোগের জন্য আমরা যেসব ঔষধ খেয়ে থাকি, সেগুলোর কার্যকারিতা শেষ হবার পর যে বর্জ্য তৈরি হয়, তা শরীর থেকে বের করে দেওয়া প্রয়োজন পড়ে। এবং এই কাজটি খুব সুচারু ভাবে সম্পাদন করে এক জোড়া সুস্থ কিডনি ।
কিন্তু কিডনি অসুস্থ থাকলে সৃষ্টি হতে পারে প্রাণঘাতী অবস্থার।
কিডনির সমস্যা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে–একিউট কিডনি ইনজুরি, যা দ্রুততার সঙ্গে কিডনির সমস্যা তৈরি করে এবং ক্রনিক কিডনি ডিজিজ , যেটাতে কিডনির সমস্যা হতে অনেক সময় প্রয়োজন।
অনেকের মধ্যেই একটি ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। তারা মনে করেন দীর্ঘ মেয়াদে ওষুধ খেলেই কিডনির সমস্যা হয়। কিন্তু একটি ওষুধের একটি মাত্র ডোজ খেয়েও কিডনির সমস্যা তৈরি হতে পারে।
যাঁদের ক্রনিক কিডনি ডিজিজ আছে, তাঁদের ঔষধ নিষ্কাশনের ক্ষমতা কমে যায়। তাই স্বাভাবিক পরিমাণ ঔষধের বর্জ্য পুরোপুরি নিষ্কাশন না করতে পারায় তা শরীরে রয়ে যায় এবং তা পক্ষান্তরে কিডনির ওপর চাপ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে কিছু ওষুধ আছে, যেগুলোয় খুব দ্রুত এমনকি একটি মাত্র ডোজে একিউট কিডনি ইনজুরি হতে পারে। এসব ওষুধে অ্যালার্জিজনিত কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে হঠাৎ করে কিডনি অকেজোও হতে পারে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কী ধরণের ঔষধ কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে?
আমরা প্রায়ই ব্যথানাশক, অ্যান্টিবায়োটিক, বাতজ্বর, আলসার, উচ্চ রক্তচাপের ঔষধ খেয়ে থাকি ও বিভিন্ন রোগ নির্ধারণ করার জন্য সিটি স্ক্যান ও এমআরআই করতে গিয়ে কিছু রং বা কন্ট্রাস্ট ব্যবহার করা হয়, যেগুলো কিডনির জন্য ক্ষতিকর হয়ে যেতে পারে।
এ ছাড়া ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য কেমোথেরাপি কিডনির ক্ষতি করতে পারে। মদ ও বিভিন্ন মাদক যেগুলো কিডনি দিয়ে নিঃসরণ হয়, সেগুলো কিডনিকে ধীরে ধীরে অকেজো করে দেয়। এছাড়া লবণ ও জ্বাল জাতীয় খাবার কিডনির জন্য ক্ষতিকর।
প্রতিরোধেই প্রতিকারঃ
· কিডনির অবস্থা বোঝার জন্য সেরাম ক্রিয়েটিনিন খুব সহজ ও সস্তা একটি পরীক্ষা। ওষুধ-সংক্রান্ত কিডনির সমস্যা এড়াতে এই পরীক্ষা খুব
উপযোগী।
· কিডনির সমস্যার কারণে পানি খাওয়া বারণ না থাকলে ওষুধ খাওয়ার আগে ও পরে প্রচুর পানি
পান করা।
· চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ঔষধ সেবন শুরু বা বন্ধ করবেন না, কারও প্ররোচনায় কোনো ধরনের ওষুধ খাওয়া যাবে না।
· চিকিৎসা নেওয়ার সময় দীর্ঘস্থায়ী রোগ ও চলমান ঔষধের পূর্ণ বিবরণ দিন।
· যে ঔষধ যত দিন খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, ঠিক তত দিনই খাওয়া উচিৎ।
· সিটি স্ক্যান, এমআরআই, কোলনোস্কপিসহ যে ধরনের পরীক্ষা করতে কন্ট্রাস্ট ডাই বা রং ব্যবহার করা হয়, এ ধরনের ঔষধ ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
· প্রতি বছর একবার হলেও কিডনি চেক আপ করান।