শিশুকে কেন সুজি খাওয়ানো ঠিক নয়
তাদের কোষের মধ্যে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া স্থান করে নিতে পারে, যার ফল তাকে সারা জীবন ভোগ করতে হবে
আটা, ময়দা, পিৎজা, পাস্তা ইত্যাদিতে অ্যালার্জির উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে আটা। আটার আরও পরিশোধিত রূপ হলো ময়দা। এতেও রয়েছে অ্যালার্জির উপাদান। চালের আটা, বেসন আটা, সুজি বা চালের গুড়া- সবই কিন্তু আটা।
অনেক মা শিশুকে সুজি খাওয়ান। কিন্তু এক বছরের নিচের বয়সী শিশুদের একবারের জন্যও সুজি কিংবা গরুর দুধ খাওয়ানো উচিত নয়। এটি খাওয়ালে তাদের কোষের মধ্যে অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া স্থান করে নিতে পারে, যার ফল তাকে সারা জীবন ভোগ করতে হবে।
গরুর দুধ দুই বছরের আগে না দেওয়া ভালো। সচেতন মা এখন গরুর দুধের বিষয়টি খেয়াল রাখছেন। কিন্তু সুজির বিষয়টি জানেনই না। এ বিষয়েও সচেতন হতে হবে। সুজি এক দিনের জন্যও খাওয়ানো ঠিক নয়। শুধুমাত্র ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে। ছয় মাসের পর থেকে অন্যান্য খাবার দিতে হবে। কিন্তু অবশ্যই সুজি খাওয়ানো যাবে না। আর দুই বছর বয়স পর্যন্ত গরুর বা ছাগলের দুধ খাওয়ানো যাবে না।
ময়দা হলো আটার পরিশোধিত রূপ। আটা যখন পরিশোধন করে সুজি, বেসন, ময়দা ইত্যাদি হিসেবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে, তখন তাতে গ্লুটেন ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি অ্যালার্জির অন্যতম নিয়ামক। বিশ্বের সব দেশেই খাদ্য প্রস্তুতকারক কোম্পানিগুলো সংরক্ষণের জন্য গ্লুটেন ব্যবহার করে। আর কৃত্রিম জুসে ব্যবহার করা হয় ফ্রুক্টোজ। সব ধরনের ইনস্ট্যান্ট ও প্রক্রিয়াজত খাদ্যে ব্যবহার করা হয় প্রিজারভেটিভ।
ইনস্ট্যান্ট খাদ্যের মধ্যে অন্যতম হলো, নুডুলস, স্যুপ। কৃত্রিম জুসে থাকে প্রাকৃতিক ও কৃক্রিম ফ্রুক্টোজ। কৃত্রিম ফ্রুক্টোজ হাইপার সেনসিটিভিটিকে রিঅ্যাকশন করে। জুস সবাই খেলেও শিশুদের জন্য আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয়। শীতে শিশুদের চারটি চর্মরোগের (এটোপিক একজিমা, সোরিয়াসিস, ভিটিলিগো ও হাইড্রাডেনিটিস সুপারেটিভা) মধ্যে এটোপিক একজিমা বেশি হয়। ব্রণের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হয়ে থাকে হাইড্রাডেনিটিস সুপারেটিভা। এতে চর্বিবহুল গন্থি এবং চুলে গুটিকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এলার্জির কারণে চুল পড়ে এবং গোটা বিশ্বে এটি খুব কমন সমস্যা।
অ্যালার্জির সাথে ত্বকের সুস্থতা, শিশুদের স্বাস্থ্য ও চুল পরার ক্ষেত্রে গ্লুটেন কতটা জরুরি তা বোঝা যায়। চামড়ার সবকিছুর সাথে এর যোগসাজোশ রয়েছে। চুলকানি এড়াতে হলে গ্লুটেন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
আটা, ময়দা, সুজি, বেসন বা কর্ন ফ্লাওয়ার ইত্যাদি খেতে পারবে না। দেখা যায়, আমাদের দেশের ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষই এটোপিক চর্মরোগে আক্রান্ত। এজন্য তারা আটা জাতীয় খাবার খেতে পারবে না। এটাপিক চর্মরোগ কারও না থাকলেও অ্যাকজিমা ঠিকই আছে। অ্যাকজিমার ক্ষেত্রে সব সময়ই যে মাছের আশের মতো উঠবে এমনটা নয়। শুধুমাত্র শুষ্ক ত্বকও থাকতে পারে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে আমরা তো এসব খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল, তাহলে সূচি কীভাবে নির্ধারণ করব? উত্তরে আমি বলতে পারি, এশিয়া ছাড়াও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ভুসিযুক্ত আটা অন্যতম খাদ্য। ভুসিযুক্ত আটাতে ৪০ গুণ বেশি আয়রন, ভিটামিন ডি-৩ ও প্রোটিন রয়েছে। বিপরীতে গ্লুটেনের মাত্রা শূন্য। আমাদের দেশে তুলনামূলক স্বস্তা ভুসিযুক্ত আটা এবং না জেনে এসব ভালো ও উন্নত খাবার খাচ্ছে গরিবরা। পশ্চিমা দেশগুলোতে আমাদের তুলনায় চার গুণ বেশি দাম এই আটার।
ভিটামিন ডি-৩-এর উৎস হিসেবে আমরা সূর্যের আলো ছাড়াও স্যামন, টোনা, ব্রকলি, কর্লি ফ্লাওয়ারের মতো খাবারকে বিবেচনায় নেই। অথচ এসব খাবারের চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণ ভিটামিন ডি-৩ রয়েছে ভুসিযুক্ত আটাতে। হরলিক্সেও গ্লুটেন শূন্য এবং ভিটামিন ডি-৩ ও আয়রন রয়েছে। সুজি না খাইয়ে এগুলো খাওয়ালে শিশুর শরীরে অ্যাকজিমা বা অ্যালার্জির অন্যান্য উপসর্গ যা শরীরে দানা বাঁধতে পারতো তা থেকে মুক্ত থাকবে।
যারা অ্যালার্জির সমস্যায় ভুগছেন তাদের ইতালিয়ান (পাস্তা, পিজ্জা, নুডুলস, স্পেগেটি) ও চাইনিজ মেন্যু বাদ দিতে হবে। বিপরীতে অ্যালার্জির জন্য উপকারী ভুট্টা, ভুট্টার ভুসি, গম বা গমের ভুসি, হরলিক্স, সয়াবিন, অ্যাভোক্যাডো (পৃথিবীর একমাত্র ফল যাতে সব ধরনের ওমেগা ভিটামিন রয়েছে) খেতে হবে। খাসির মাংসেও ওমেগা রয়েছে, তবে তা প্রমাণিত নয়। এখনো এটি নিয়ে গবেষণা চলছে।
লেখক: ডা. নাদিয়া রোম্মান
অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট, হসপিটোলজিস্ট
ইউনিসেফের মোটিভেশনাল স্পিকার ও ডা. এন অ্যাসথেটিক কজডার্মা ক্লিনিকের সিইও