লিভারের নীরব ঘাতক ন্যাশ কী, কতটা মারাত্মক?

ডা. মো. মাসুদুর রহমান খান
2021-11-24 21:12:35
লিভারের নীরব ঘাতক ন্যাশ কী, কতটা মারাত্মক?

ন্যাশ শুরুতে মানুষের শরীরে কোনো রোগের উপসর্গ তৈরি করে না।

ন্যাশ তথা NASH এর পূর্ণরূপ হলো Nonalcoholic Steatohepatitis. এর মানে যারা অ্যালকোহল খান না, তাদেরও লিভারে ইনফ্লামেশন বা লিভারে প্রদাহ হতে পারে।

ন্যাশ তাৎক্ষণিক বা দ্রুত আমাদের কোনো ক্ষতি করে না। কিন্তু ধীরে ধীরে আমাদের লিভারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে দেয়। এতে করে লিভার সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

যেহেতু এটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া এবং কখনো কখনো এতে ২৫ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে, এজন্য রোগীরা বা যারা ন্যাশে আক্রান্ত এই জিনিসটাকে গুরুত্ব দেন না। খুব বেশি সচেতন হওয়ারও প্রয়োজন বোধ করেন না। এজন্য এটা ধীরে ধীরে লিভারকে ক্ষতি করে। তাই এই ন্যাশকে নীরব ঘাতক বলা হয়।

ন্যাশ শুরুতে মানুষের শরীরে কোনো রোগের উপসর্গ তৈরি করে না। কিন্তু যখন এটা শুরু হচ্ছে, অ্যাডভান্স হচ্ছে দিনে দিনে, তখন এটা মানুষের শরীরকে অতিরিক্ত দুর্বল করে দেয়। ফলে মানুষ কাজকর্মে মনোযোগী হতে পারে না। প্রতিদিনের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটে।

তখন পরীক্ষা করে দেখা যায়, কারও কারও ক্ষেত্রে তাদের লিভার নরমাল আকারের চেয়ে একটু বড় সাইজের দেখা যায়। তখন আলট্রাসনোগ্রাম বা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা এই ফ্যাটি লিভার বুঝতে পারি এবং আমরা এটাকে ন্যাশ হিসেবে চিহ্নিত করি।

ন্যাশ থেকে কার্সিনোমা অব লিভার, ক্যান্সার বা হেপাটাইটিস- এগুলো শুরু থেকেই হচ্ছে না। এটা পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে কতগুলো ধাপ পার হয়ে তারপর হতে পারে।

প্রথমে লিভার যখন ৫ শতাংশের বেশি ফ্যাটে আক্রান্ত হচ্ছে, তখন সেটা ফ্যাটি লিভার। ওখান থেকে যখন লিভারের ইনফ্লামেশন তথা প্রদাহ হচ্ছে, তখন সেটাকে আমরা ন্যাশে কনভার্ট করি।

এরপর ন্যাশ যখন আরও অ্যাডভান্স হয়, তখন সেটাকে আমরা বলি ফাইব্রোসিস। এ অবস্থায় লিভার শক্ত হয়ে যাবে। শক্ত হয়ে যাওয়ার পর সেটা সিরোসিসে কনভার্ট হতে থাকে।

কনভার্ট হওয়ার পর লিভার যখন অনেক শক্ত হয়ে যায়, তখন শরীরে বিভিন্ন পরিবর্তন দেখা দেয়। যেমন- শরীরে পানি আসা, জন্ডিস দেখা দেওয়া। এখান থেকেই কিছু কিছু রোগীর সিরোসিস থেকে লিভার ক্যান্সার বা কার্সিনোমা হয়। কাজেই এই ঝুঁকিটা আছে বলেই আমরা ন্যাশ ব্যাপারটাকে এত গুরুত্ব দিচ্ছি।


আরও দেখুন: