শিশুর ভাইরাসজনিত রোগ, প্রতিরোধে করণীয়

ডা. ইসমাইল আজহারি
2021-11-21 16:43:21
শিশুর ভাইরাসজনিত রোগ, প্রতিরোধে করণীয়

সাধারণত যে কোনো ভাইরাসজনিত রোগ ৭-১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়

শিশুদের মধ্যে ভাইরাসজনিত জটিল সব সংক্রামক রোগ বেড়েই চলেছে। এসব রোগ প্রতিরোধে সচেতনতার পাশাপাশি সঠিক সময়ে চিকিৎসা প্রয়োজন।

উপসর্গ
ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ৩-৬ দিনের মধ্যে স্বল্প থেকে মধ্যম (১০২ ডিগ্রি)  তাপমাত্রা সহকারে জ্বর আসে। কিছু ক্ষেত্রে ভিন্ন হতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে জ্বরের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গলাব্যথা, খাবারে অরুচি, ক্লান্তি, অবসাদ, দুর্বলতা দেখা দেয়।

গলাব্যথার কারণে শিশুরা খাবার এমনকি পানিও মুখে দিতে চায় না। এতে করে পানিশূন্যতা বা ডিহাইড্রেশন দেখা দিতে পারে। গলাব্যথার পাশাপাশি মুখ গহব্বরে ছোট ছোট সাদা আকৃতির ফুসকুড়ি, ঠোঁটের আশেপাশে র‍্যাশ ও র‍্যাশে চুলকানি ও ব্যথা থাকতে পারে।

জ্বর শুরুর ২-৩ দিনের মধ্যে হাত-পায়ে র‍্যাশ দেখা দেবে। হাত, পা ও মুখ আক্রান্ত হতে পারে। বিশেষ করে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে এ রকম সমস্যা বেশ দেখা যায়।

কেন এমন হয়
যেকোনো সংক্রামক ভাইরাসে আক্রান্ত হলেই এ ধরনের সমস্যা হতে পারে। তবে যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল, তাদের বেশি হয়।

যেভাবে ছড়ায়
ভাইরাসজনিত রোগ মূলত ফিকো-ওরাল রুট এবং নাকের পানি, থুথু ও কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। একেক ভাইরাস একেক রুট ব্যবহার করে। ভাইরাসজনিত হাত ও পায়ের র‍্যাশের সংস্পর্শের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। এ ছাড়া-

১. আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে

২. আক্রান্ত ব্যক্তির পোশাক ব্যবহার করলে

৩. আক্রান্তের ব্যবহৃত গ্লাস ব্যবহার করলে (গ্লাসে স্যালাইভা থাকতে পারে এবং স্যালাইভাতে ভাইরাস থাকতে পারে)

৪. দূষিত পানির মাধ্যমে অর্থাৎ আক্রান্তের মলযুক্ত কোনো কাপড় পুকুরে ধোয়া হলে সে পানিতে ভাইরাস থাকবে। এ পানি কোনোভাবে পেটে গেলে ভাইরাসজনিত রোগ হতে পারে।

প্রতিরোধে করণীয়
খাবার আগে ভালোভাবে হাত ধোয়া, বিশুদ্ধ পানি পান করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন চলা, আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাওয়ার মাধ্যমে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়।

আবার অনেকেই শিশুদের আদর করে চুমু দেন, এতে তারা বিভিন্ন ধরনের ভাইরাসজনিত রোগের ঝুঁকিতে থাকে। তাই এভাবে আদর করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং শিশুদের নিরাপদ রাখতে হবে। মা-বাবার এক্ষেত্রে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

সেই সাথে নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ করা, ভিটামিন এ, ই ও সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। তাই এসব খাবার বেশি বেশি খেতে হবে। দুই বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ চললে শিশুদের ইমিউনিটি বাড়ে।

চিকিৎসা
সাধারণত যে কোনো ভাইরাসজনিত রোগ ৭-১০ দিনের মধ্যে ভালো হয়ে যায়। তাই শিশু যদি ঠিকমতো খাবার খেতে পারে, তাহলে তেমন একটা চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। চিকিৎসার ক্ষেত্রে জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল, সাথে চুলকানি কমানোর জন্য এন্টি হিস্টামিন দেওয়া যেতে পারে।

জ্বর না থেকে শুধু ব্যথা থাকলেও প্যারাসিটামল বা আইবুপ্রোফেনে ভালো উপকার হবে। সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য সিভিট, জিংক ইত্যাদি দেওয়া যেতে পারে। তবে খেয়াল রাখতে হবে শিশুর যেনো পর্যাপ্ত নিউট্রিশন পায় এবং কোনোভাবেই যেনো ডিহাইড্রেশন বা পানিশূন্যতা না হয়। পানিশূন্যতা দেখা দিলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে শিরাপথে স্যালাইন দিয়ে চিকিৎসা করতে হবে। যেকোনো সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।


আরও দেখুন: