কোন খাবারে অ্যালার্জি হয়, কী করবেন
এক বছরের নিচের শিশুদের একবারের জন্যও সুজি বা গরুর দুধ খাওয়ানো ঠিক নয়
ত্বকের অ্যালার্জি নিয়ে আলোচনা খুব জরুরি। আমাদের দেশে ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষই রোগটিতে আক্রান্ত এবং দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। বেশিরভাগ মানুষের স্পষ্ট ধারণা না থাকায় এটি আরও জটিল হয়ে উঠছে।
অনেকের ধারণা, চুলকানোই অ্যালার্জি। আসলে বিষয়টি এমন নয়। অ্যালার্জি হলো, বাইরে থেকে শরীরে ঢুকছে বা ত্বকের সংস্পর্শে আসছে অথবা যা ইতিমধ্যে আমাদের শরীরের প্রত্যেক কোষে অবস্থান নিয়ে আছে। গ্লুটাথিয়ন (Glutathion), ভিটামিন বি১, বি২, বি৬, বি১২ ও ভিটামিন সি-কে অ্যালার্জির অভ্যন্তরীণ বা ইন্টারন্যাল প্রভাবক বলা হয়। মোট কথা, এমন কিছু উপাদান, যা ত্বক বা শরীরের ভেতরে প্রদাহ জাগিয়ে তোলে এবং দুই ধরনের হাইপার সেনসিটিভিটির প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। অর্থাৎ হিস্টামাইন বেড়ে গিয়ে ত্বক বা পেটের ভেতরে যে প্রতিক্রিয়া হয় তাকে আমরা অ্যালার্জি বলি।
বাইরের প্রভাবকেও অ্যালার্জি হয়। ত্বক (মুখমণ্ডলের চামড়া) বা শরীরের অন্যান্য অংশে প্রাদুর্ভাব হলে তাকে বাইরের বা এক্সটারনাল কারণ বলা হয়। এটি বিভিন্নভাবে হতে পারে যেমন, ধুলোবালি, শ্বাস-প্রশ্বাস, খাবার এমনকি কোনো কিছু ত্বকে ব্যবহার করলেও অ্যালার্জি হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি হয় খাবারের মাধ্যমে।
খাবারের মধ্যে কী কী রয়েছে? খাবার, পানীয়, খাওয়ার ওষুধ ছাড়া এমন কিছু রয়েছে, যা বাইরে থেকে ত্বক বা শরীরে লাগানো হচ্ছে, যেমন, কসমেটিকস, ওষুধ, হেয়ার ডাই, সাবান, ডিটারজেন্ট ইত্যাদি।
নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ধুলোবালি, ধোঁয়া, মশার ওষুধ, স্প্রে এবং করোনা মোকাবেলায় জীবাণুনাশক ব্যবহারেও হতে পারে। আবার iv (in vain) অর্থাৎ খাদ্যের মাধ্যমে পেটে যাচ্ছে, তারপর ত্বক ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে ফুসফুসে যাচ্ছে। আবার আরেকটা যেটি সরাসরি রক্তে গিয়ে অ্যালার্জি তৈরি করছে। রক্তে বাইরে থেকে সাধারণত ওষুধ আকারে গিয়ে হাইপার সেনসিটিভিটি হচ্ছে।
গবেষণা বলছে, অ্যালার্জির বাইরের প্রভাবক খুব গুরুত্বপূর্ণ। কেনো না এখন আমাদের অনেকেই প্রতিদিন বিভিন্ন রকমের সাপ্লিমেন্টস ব্যবহার করছি কিংবা অতিরিক্ত মাত্রায় ভিটামিন সি খাচ্ছি। প্রতিদিন ৫০০ মিলি প্রয়োজন হলেও এক হাজার মিলি খাচ্ছি। অথচ পরিমাণ মতো ছয় মাস খেলে ত্বক উজ্জল হবে কিন্তু অ্যালার্জি হবে না।
আমরা সবাই ফর্সা, উজ্জল ত্বক প্রত্যাশা করি। একজন অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট হিসেবে বলছি— এক্ষেত্রে গ্লুটাথিয়ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যেটিকে প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বলা হয় এবং এটি ইতিমধ্যে আমাদের প্রত্যেক কোষে আছে। এখানে যেগুলো বলেছি, সবই কোষের নিউক্লিয়াসে রয়েছে। আর মাইটোকন্ড্রিয়াতে থাকে ভিটামিন সি। কোনো কারণে বাইরে থেকে বিশেষ করে খাদ্যের মাধ্যমে হলে সাধারণত রক্তে গ্লুটাথিযন এতটা বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু বিশেষ কারণে গ্লুটাথিয়ন, ভিটামি বি-১, ২, ৬ ও বি-১২ বেড়ে যায়, তাহলে প্রদাহ ও হাইপার সেনসিটিভিটি বাড়বে।
এজন্য অ্যালার্জি থেকে দূরে থাকতে হলে সম্পূরক বস্তু (supplement) নেওয়া যাবে না। দুটি কারণে অ্যালার্জি বাড়তে পারে। এক. রক্তে বাড়লে প্রতিক্রিয়া দেখা যাবে। দুই. প্রত্যেক সম্পূরক বস্তুর ভেতরে গ্লুটেন থাকে। অ্যালার্জির প্রথম ও প্রধান কারণ এই গ্লুটেন। অবশ্য গ্লুটেনের আলোচনায় পরে আসছি।
অ্যালার্জির বাইরের প্রভাবক হিসেবে আমি যতগুলো বলেছি- খাদ্য ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমে শরীরের ভেতরে যে অ্যালার্জি হচ্ছে, তা প্রধান নিয়ামক হিসেবে কাজ করে গ্লুটেন। এমনকি পানীয়, ওষুধেও এটির উপস্থিতি থাকতে পারে। লক্ষ্য করলে দেখবে, আমদানি-রপ্তানিযোগ্য খাবার এমনকি বাদামেও অ্যালার্জি সতর্কতা ও গ্লুটেনমুক্ত উল্লেখ থাকে। অনেক গবেষণায় এখন প্রমাণিত, গ্লুটেনই অ্যালার্জির প্রধান কারণ।
ত্বক চুলকালে বা বাইরের অংশে কিছু ব্যবহারের ফলে র্যাশ হয়। এটি ত্বকের অ্যালার্জি। আমরা অবশ্য ত্বক এবং পেটের অ্যালার্জিকে অবহেলা করে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জিযুক্ত খাবার খাই। অথচ বলে থাকি আমার অ্যালার্জি নেই। গরুরর মাংস, চিংড়ি মাছ, ইলিশ মাছ, বেগুন, বাদাম ইত্যাদি অতি পরিচিত অ্যালার্জিযুক্ত খাবার। পাশাপাশি দুটি পরিচিত খাবার যা অনেক বেশি গ্লুটেন ধারণ করে, সেগুলো হলো দুগ্ধজাত খাদ্য যেমন- পনির, দুধ ইত্যাদি। আবার ডিমও দুগ্ধজাত খাবারকে সহ্য করতে পারে না। এখন এই দুগ্ধজাত খাবারের অসহ্য অবস্থানে হাইপার সেনসিটিভিটি দেখা দেয়। দুধ বা দুগ্ধজাত কোনো খাবার খেলে পেটব্যথা করবে।
আমাদের জানাশোনার বাইরে আটা, ময়দা, পিৎজা, পাস্তা ইত্যাদিতেও অ্যালার্জির উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে আটা। আটার আরও পরিশোধিত রূপ হচ্ছে ময়দা। এতেও অ্যালার্জির উপাদান রয়েছে। চালের আটা, বেসন আটা, সুজি বা চালের গুড়া এগুলো সবই কিন্তু আটা। এক বছরের নিচের শিশুদের একবারের জন্যও সুজি বা গরুর দুধ খাওয়ানো ঠিক নয়। তাহলে তাদের কোষের মধ্যেও অ্যালার্জিক প্রতিক্রিয়া স্থান করে নিতে পারে, যার ফল তাকে সারা জীবন ভোগ করতে হবে। গরুর দুধ দুই বছরের আগে না দেওয়া ভালো। সচেতন মা এখন গরুর দুধের বিষয়টি খেয়াল রাখছেন। কিন্তু সুজির বিষয়টি জানেনই না। এ বিষয়েও সচেতন হতে হবে।
লেখক: ডা. নাদিয়া রোম্মান
অ্যাসথেটিক ডার্মাটোলজিস্ট, হসপিটোলজিস্ট, ইউনিসেফের মোটিভেশনাল স্পিকার এবং ডা. এন অ্যাসথেটিক কজডার্মা ক্লিনিকের সিইও