শিশুদের অতিরিক্ত কান্নাকাটির কারণ ও প্রতিকার
যখন কান্নাকাটি করবে, একটু কোলে নিয়ে ঘোরাঘুরি করবে। শিশুর বাবা যেন মাকে সাপোর্ট দেয় এক্ষেত্রে।
অতিরিক্ত কান্নাকাটি করা শিশুদের স্বভাবজাত বিষয়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যদি কোনো শিশু প্রতিদিন নির্দিষ্ট একটা সময় ৩ ঘণ্টার বেশি করে পরপর ৩ দিন কিংবা সপ্তাহে ৩ দিন করে পরপর ৩ সপ্তাহ অধিক কান্নাকাটি করে, তবে তখন এই কান্নাকাটি আর স্বাভাবিক কান্নাকাটি বিবেচিত হয় না। এই রকম অতিরিক্ত মাত্রার কান্নাকাটি করাকে ইনফ্যান্টাইল কোলিক বলে।
কান্নার পরিমাণ সাধারণত সন্ধ্যায় বেড়ে যায়। রাতেও কান্নাকাটি করে। এমন বেশি কান্নাকাটি করে যে, বাবা-মা চিন্তায় পড়ে যায় শিশুর না জানি কি হয়েছে!
অনেক বাবা-মা এই কান্নাকাটি বন্ধ করার জন্য এক ডাক্তারের পর আরেক ডাক্তার পরিবর্তন করে থাকেন। আবার কিছু মা আছেন শিশুকে মেরে কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করেন। আবার কেউ কেউ জ্বীন-ভুতের সমস্যা মনে করে কবিরাজের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করেন। আসুন জেনে নিই ইনফ্যান্টাইল কোলিকের লক্ষণ ও কারণসমূহ-
লক্ষণসমূহ
১. সাধারণত ৬ সপ্তাহ থেকে ৬ মাসের শিশুদের এই সমস্যা দেখা যায়। তবে দুই সপ্তাহের এবং ছয় মাসের বেশি বয়সী শিশুদেরও হতে পারে।
২. প্রতিদিন তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে পরপর তিন দিন কিংবা সপ্তাহে তিন দিন করে তিন সপ্তাহ একটি নির্দিষ্ট সময়ে কান্নাকাটি করা। সাধারণত সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে।
৩. কান্নার সময় শিশু সাধারণত অস্থিরভাব প্রকাশ করে। কান্না করতে করতে মুখমণ্ডল লাল করে ফেলে। নাক-চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে যায়। এছাড়াও হাঁটু ভাঁজ করে পেটের দিকে রাখে, কপালে ভাঁজ এবং হাত শক্ত করে মুঠি করা থাকে।
কারণ
১. পেট ব্যথা বুঝাতে সাধারণত কোলিক শব্দ ব্যবহার হয়ে থাকে। সাধারণত ২০-২৫ শতাংশ শিশু জন্মের দেড় মাস পর ইনফ্যান্টাইল কোলিকে আক্রান্ত হয়। তবে তার মধ্যে ৯৫ শতাংশ শিশুর কোলিকজনিত অতিরিক্ত কান্নার কারণ নির্ণয় করা যায় না। কেবল ৫ শতাশ ক্ষেত্রে কারণ জানা যায়।
তাই ডাক্তারদের ধারণা, অন্ত্রের মধ্যে অস্বাভাবিক সংকোচনের ফলে পেট ব্যাথা করে এবং বাচ্চা কান্নাকাটি শুরু করে। এক্ষেত্রে অন্ত্রের পেশী সমূহের অস্বাভাবিক সংকোচনকে কারণ হিসেবে বিবেচনায় রাখা হয়। যদিও তা কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এখনো প্রমাণিত নয়।
২. বাচ্চার মায়ের যদি এলার্জি থাকে, আর মা যদি এলার্জিক খাবার খায়, যেমন- গরুর গোশত, গরুর দুধ ইত্যাদি। তখন মায়ের দুধপানের মাধ্যমে বাচ্চার মধ্যেও এলার্জিক প্রতিক্রিয়া হয়ে বাচ্চার ইনফ্যান্টাইল কোলিক হতে পারে। ফলস্বরূপ অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে পারে।
৩. বাচ্চাকে গরুর দুধ কিংবা পটের দুধ (কৃত্রিম দুধ) পান করানোর কারণেও ইনফ্যান্টাইল কোলিক হতে পারে।
৪. কোষ্ঠকাঠিন্যতা
৫. বদহজম
৬. সঠিক পজিশনে বাচ্চাকে দুধ পান করানো না হলে দুধপানের সময় বাচ্চার পেটে বায়ু প্রবেশ করে। এতে পেটে গ্যাস তৈরি করে ইনফ্যান্টাইল কোলিক হতে পারে।
৭. দুধপান করানোর পর ব্যায়াম করানো না হলেও এমন সমস্যা হতে পারে।
৮. যেসব বাচ্চার অন্ত্রে সাধারণ গাট ফ্লোরা তথা উপকারী অণুজীবের পরিমাণ কম থাকে, তাদেরও ইনফ্যান্টাইল কোলিক হতে পারে।
৯. পেটের সমস্যা যথা গ্যাস্ট্রাটিস বা গ্যাস্ট্রিকজনিত সমস্যা
১০. শিশুকে ঠিকমতো কোলে না নেওয়া থেকে স্ট্রেস
১১. শিশুর পর্যাপ্ত ঘুম না হওয়া
১২. শরীরে কোনো অ্যাক্টিভ ইনফেকশন থাকলেও শিশুরা অতিরিক্ত কান্নাকাটি করতে পারে।
প্রতিকার ও চিকিৎসা
বিভিন্ন গবেষণায় ইনফ্যান্টাইল কোলিকজনিত বাচ্চার অতিরিক্ত কান্নাকাটি করাকে শিশুদের একটা সাধারণ শারিরীক বিষয় হিসাবে বিবেচনায় রাখা হয়েছে। তাই এই ক্ষেত্রে বাবা-মাকে কাউন্সেলিং করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চিকিৎসা।
বাবা-মায়ের জানা দরকার, বাচ্চার যদি স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঠিক থাকে এবং বাচ্চার ব্রেস্ট ফিডিং যদি স্বাভাবিক থাকে এবং প্রস্রাব-পায়খানা নিয়মিত থাকে, তাহলে এই নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো দরকার নাই। দেড় মাস বয়স থেকে ছয় মাস বয়সের মধ্যে ২০-২৫ শতাংশ শিশুর এমন সমস্যা হয়। যখন কান্নাকাটি করবে, একটু কোলে নিয়ে ঘোরাঘুরি করবে। শিশুর বাবা যেন মাকে সাপোর্ট দেয় এক্ষেত্রে। যেন শিশুকে কোলে নিয়ে ঘুরে বেড়ায়।
যদি কোনো কারণ জানা থাকে, যেমন- কোষ্ঠকাঠিন্য আছে কিনা, বাইরের খাবার খায় কিনা, মায়ের এলার্জি আছে কিনা এবং সঠিক নিয়মে দুধ পান করায় কিনা? যদি এসব কোনো জায়গায় সমস্যা থাকে, তাহলে তা পরিহার করে চলবে। আর অ্যাক্টিভ কোনো সংক্রমণ থাকলে তার চিকিৎসা করাবে।
ওষুধ
ওষুধে এই ক্ষেত্রে তেমন একটা উপকার পাওয়া যায় না। তারপরেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে অ্যান্টি-কোলিক মেডিসিন ও অ্যান্টি-গ্যাস ওষুধ ব্যবহার করা হয়। প্রয়োজনে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।