রক্তস্বল্পতার কোন পর্যায়ে কোন চিকিৎসা?

অধ্যাপক ডা. শিলা সেন
2021-10-15 21:12:57
রক্তস্বল্পতার কোন পর্যায়ে কোন চিকিৎসা?

প্রথমে আয়রন ডেফিশিয়েন্সি তথা রক্তস্বল্পতার কারণ চিহ্নিত করতে হবে, তারপর চিকিৎসা করতে হবে।

প্রথমে আয়রন ডেফিশিয়েন্সি তথা রক্তস্বল্পতার কারণ চিহ্নিত করতে হবে, তারপর চিকিৎসা করতে হবে। যেমন- কোনো মেয়ের যদি মাসিকের সময় অনেক ব্লিডিং হয়, সে ক্ষেত্রে আগে ব্লিডিং বন্ধ করতে হবে তারপর যে পরিমাণ লস হয়েছে সেটা কারেকশন (ঠিক) করতে হবে। এই কারেকশন করতে হলে আমাদেরকে তার হিমোগ্লোবিনের লেভেল জানতে হবে। এটাকে বলে ডিগ্রি অব অ্যানিমিয়া।

এক্ষেত্রে তিনটি লেভেল হয়- মাইল্ড (মৃদু), মডারেট (মাঝারি) এবং সিভিয়ার (মারাত্মক)। এক্ষেত্রে হিমোগ্লোবিন লেভেল ৮ থেকে ১০ হলে সেটা মাইল্ড, ৬ থেকে ৭ হলে সেটা মডারেট আর ৬ এর কম হলে সেটা সিভিয়ার লেভেল।

তখন লেভেল অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে। যেমন- সাধারণত দেখা যায় কিছু কিছু মহিলার ৪০ বছরের পর জরায়ুতে টিউমার হয়, অনেক সময় প্রচুর ব্লিডিং হয়। এক্ষেত্রে অপারেশন লাগতে পারে। জরায়ু ফেলে দেওয়া লাগতে পারে। সেক্ষেত্রে আমরা মেডিসিন দিয়ে ব্লিডিং বন্ধ করার চেষ্টা করি। এ সময় হিমোগ্লোবিন লেভেল যদি ৮ থেকে ১০ হয়, তখন আমরা ওরাল কিছু ট্যাবলেট বা ক্যাপসুল দিতে পারি।

আমাদের জানতে হবে- যার আয়রন ডেফিশিয়েন্সি আছে তার নিউট্রিশনাল ডেফিসিয়েন্সি তথা পুষ্টিহীনতা থাকতে পারে। রক্তে হিমোগ্লোবিন তৈরি করতে হলে আয়রনের সঙ্গে ফলিক অ্যাসিড, প্রোটিন এগুলো দিতে হবে। এক্ষেত্রে মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি এসব খাবার খেতে হবে।

যদি মডারেট লেভেলের হিমোগ্লোবিন হয় যেমন- ৬ থেকে ৭ পয়েন্ট, তখন ইনজেক্টেবল আয়রন দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে ১ গ্রাম করে হিমোগ্লোবিন প্রতি সপ্তাহে বাড়তে পারে। ফলে ২/৩ সপ্তাহের মধ্যে হিমোগ্লোবিন পয়েন্ট ৭ থাকলে ১০ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে ১০ হয়ে গেলে অ্যানিমিয়া কারেকশন হয়ে যাবে।

আয়রন ডেফিসিয়েন্সি হলে শুধু আয়রন দিয়ে কারেকশন না করে, তার সঙ্গে আমরা ইনজেক্টেবল আয়রনও দেব। পাশাপাশি ভিটামিন ‘বি টুয়েলভ’, ফলিক এসিডও দিতে হবে এবং প্রোটিন সাপ্লিমেন্ট করতে হবে। তা না হলে আরবিসি তৈরি হবে না।

আর যদি সিভিয়ার লেভেলের আয়রন ডেফিশিয়েন্সি হয়, অনেক সময় দেখা যায়- ১২/১৩ বছরের একটি মেয়ে হিমোগ্লোবিন ৫ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়, সে ক্ষেত্রে ব্লাড দিতে হয়। এক্ষেত্রে খুব সচেতনতার সঙ্গে চিকিৎসা করতে হয়। কারণ, তার পালপিটিশন থাকে এবং হার্ট ফেইলিওরের দিকে থাকে। এক্ষেত্রে ব্লাড দেওয়ার সময় ব্লাডের জলীয় অংশটুকু আগেই বের করে নিতে হয়। এভাবেই আমরা আয়রন ডেফিশিয়েন্সি, অ্যানিমিয়া কারেকশনের চেষ্টা করি।

অধ্যাপক ডা. শিলা সেন

বিভাগীয় প্রধান

গাইনী অ্যান্ড অবস বিভাগ

কমিউনিটি বেজড মেডিকেল কলেজ ময়মনসিংহ


আরও দেখুন: