জরায়ুর একদম ভেতরের লেয়ারটির নাম হল এন্ডোমেট্রিয়াম (যেখানে প্রেগন্যান্সি হয়)। কোনো কারণে যদি এই এন্ডোমেট্রিয়াম জরায়ুর বাইরে জন্মায়, তখন সেখানে এন্ডোমেট্রিওসিস হতে পারে। এটি রহস্যাবৃত একটি অসুস্থতা।

আমরা গবেষণা করে এখনো সম্পূর্ণভাবে এন্ডোমেট্রিওসিস উদঘাটন করতে পারিনি। তবে মেয়েদের জরায়ুর দুই পাশে দুটি ওভারি থাকে, আর জরায়ুর ভেতরে পাতলা আবরণ থাকে সেটি প্রতি মাসে ঋতুস্রাবের সঙ্গে রক্ত বেরিয়ে যায়।

কিন্তু এন্ডোমেট্রিওসিসের বেলায় দেখা যায় এই পাতলা আবরণগুলো পেটের ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। পরে ওখানে থেকে এটি মাসিকের ঋতুস্রাবের মতো ওখানেই সংঘটিত হয়। এটিই হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিস। মূলত এটি জরায়ুর ভেতরে থাকার কথা এবং মাসিক হলে বেরিয়ে যাওয়ার কথা, এটিই সাধারণ।

কিন্তু যেসব মেয়ে এন্ডোমেট্রিওসিসে ভুগে থাকেন, তাদের দেখা গেছে যে এই পাতলা আবরণটি পেটের ভিতরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে যায়। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- এটা অন্য কোনো অসুখের বেলায় কল্পনাও করা যায় না ক্যান্সার ছাড়া। এটি দেখা গেছে শুধু পেটে বা জরায়ুতে নয়, অনেক দূরের জায়গায় যেমন- লাংয়ে, নাকে অথবা হাতের কোথাও ছড়িয়ে পড়ে।

এই আবরণ যদি অন্য জায়গায় থাকে তাহলে কী ধরনের সমস্যা হতে পারে? এটিই হচ্ছে এন্ডোমেট্রিওসিসের কষ্ট দেওয়ার কারণ। দেখা যায়, পেটের ভেতরে মাসিকের যে টিস্যুগুলো জমা হয়, সেখানে ওটা মাসিকের মতো হতে থাকে। কিন্তু বের হওয়ার কোনো পথ পায় না, যেভাবে জরায়ুর আবরণটি বেরিয়ে যাচ্ছে মাসিকের সময়। আর ওরাতো পথ পাচ্ছে না ফলে ওখানে জমে জমে একদম চকলেটের মতো হয়ে যাচ্ছে।

এর ফলে মেয়েদের মাসিকের সময় জরায়ুর ভেতর থেকেও মাসিক হচ্ছে, ওদিকে পেটের ভেতর যে টিস্যুগুলো আছে সেখানেও মাসিক হচ্ছে। কিন্তু সেগুলো প্রচণ্ড ব্যথা দিচ্ছে। ফলে যে মেয়েরা এন্ডোমেট্রিওসিসে আক্রান্ত হন, তারা চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলে থাকেন যে, মাসিকের সময় তীব্র ব্যথা হয়। এটি তার প্রথম এবং প্রধান উপসর্গ। আবার অনেক সময় পেটের ভেতরে বা মল ত্যাগ করার সময় অথবা প্রসাবের সময় ব্যথা হয়।

তো এই মাসিকের সময়ে নারীরা ভয়ে ভীতগ্রস্ত হয়ে থাকেন। ফলে কর্মজীবন থেকে যেমন তাদের সরে পড়তে হচ্ছে, জীবনে চলার পথে থমকে যেতে হচ্ছে শুধু ব্যথা ব্যথা করে।