টুইন প্রেগনেন্সিতে গর্ভবতীদের করণীয়

ডা. তানিয়া রহমান মিতুল
2021-10-09 15:55:33
টুইন প্রেগনেন্সিতে গর্ভবতীদের করণীয়

টুইন প্রেগন্যান্সি একটি জটিল গর্ভাবস্থা। এজন্য মায়ের পাশাপাশি পরিবারের সবাইকে সতর্ক হতে হবে

যমজ সন্তান ধারণে অন্তঃসত্ত্বার নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের আগে মায়ের প্রসব ব্যথা ওঠে। মা ও পরিবারের সদস্যদের অসতর্কতায় গর্ভপাত পর্যন্ত হয়ে যেতে পারে।

ডায়াগনোসিসে টুইন প্রেগনেন্সি জানার পর গর্ভবতী, তার স্বজনসহ পরিবারের সবার প্রস্তুতি ও সতর্কতার বিষয়ে ডক্টর টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত অধ্যাপক ডা. রাতু রোমানা (একাডেমিক পরিচালক, ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজ এবং সাবেক অধ্যাপক, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ) এবং অধ্যাপক ডা. শামীম ফাতেমা নারগিস (সাবেক অধ্যাপক, গাইনি অ্যান্ড অবস বিভাগ, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল) তুলে ধরেছেন।

অধ্যাপক ডা. রাতু রোমানা বলেন, আমরা যতটা চাচ্ছি, অগ্রিম প্রসব ঠেকাতে পারছি না। এজন্য আমি গর্ভবতীদের প্রসব পরিকল্পনা করার অনুরোধ করব। এ পরিকল্পনার মধ্যে আপনি এমনভাবে প্রস্তুত থাকবেন যেন যেকোনো সময় প্রসব ব্যথা উঠে যেতে পারে। শুধু অন্তঃসত্ত্বা নয়, তার পরিবারের সবাইকে এ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। স্বামীকে একটি যানবাহনের বিষয়ে আগেই চিন্তা করে রাখতে হবে, সেটি ভ্যান, অ্যাম্বুলেন্স, সিএনজিচালিত অটোরিকশাও হতে পারে। কারণ রাত ২টার দিকে প্রসব ব্যথা উঠল, তখন কীভাবে হাসপাতালে নিবেন? শুধু এ বাবদ কিছু টাকা গুছিয়ে রাখতে হবে। একটি ব্যাগে সব ধরনের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখতে হবে।

তিনি বলেন, গর্ভবতীর প্রসব ব্যথা উঠলে সঙ্গী কে হবেন, এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঙ্গী মা, খালা, প্রতিবেশী এমনকি বন্ধুবান্ধবও হতে পারে। তবে সঙ্গী এমন একজন হবেন, যাকে আমরা দৌলা বলে থাকি। দৌলার গুণাবলী হবে তিনি খুব ভীতু নন; আবার বেশি সাহস দেখাবেন না। খুব সহনশীল মানুষ হবেন। যেহেতু যমজ সন্তান ধারণ একটু ঝুঁকিপূর্ণ, এজন্য আমরা হাসপাতালে প্রসবের পরামর্শ দেই। কারণ অনেক ধরনের জটিলতা প্রসবের সময় এবং প্রসব পরবর্তীতেও হতে পারে। দৌলা সব সময় অন্তঃসত্ত্বার সাথে থাকবেন, সাহস দিবেন। গর্ভবতীর উপকার হবে এমন কাজ করবেন। যেমন, তাকে একটু পরপর পানি খাওয়াবেন। আমরা সাধারণত একটি সন্তান পেটে থাকলেও মাকে তরলজাতীয় খাবার দিতে বলি। জমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে এটি আরও বেশি করে খাওয়াতে হবে। দুই ঘণ্টা পরপর অন্তত ২০০ মিলিগ্রাম করে দুধ অথবা পানি পান করাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, দৌলা মায়ের কোমরের পেছনের হাড়ের কাছে আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে দিলে ভালো হবে। মায়ের মনকে অন্যদিকে রাখার চেষ্টা করবেন। কারণ আমরা কোনো একটি বিষয়ে খুব বেশি চিন্তা করলে ব্রেন থেকে একটি হরমোন এসে পুরো সিস্টেম এলোমেলো করে দেয়। এজন্য গর্ভবতীকে সব সময় ফুরফুরে রাখার চেষ্টা করতে হবে। সেটি একটু ভিন্ন ধরনের গল্প বলে, গান শুনিয়েও করা যেতে পারে। দৌলা যিনি হবেন তাকে এসব কাজ করতে হবে। এমন না যে নার্সকে দৌলা হতে হবে। যিনি উপরের কাজগুলো ভালোভাবে করে অন্তঃসত্ত্বাকে ফুরফুরে রাখতে পারবেন, তিনিই দৌলা হবেন।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ডা. শামীম ফাতেমা নারগিস বলেন, ডায়াগনোসিসে টুইন প্রেগনেন্সি জানার পর মা যেসব খাবার খাচ্ছেন, তাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি মিলছে কি না খেয়াল রাখতে হবে। মোটামুটি দিনে ২ এবং রাতে ৮ ঘণ্টা ঘুমাতে হবে। ভারী কাজ করবে না, পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসক দেখাতে হবে। প্রোটিন, আয়রন, ক্যালসিয়ামের জন্য সুষম খাবার খাবে।

তিনি বলেন, নিয়মিত চিকিৎসক দেখালে গর্ভের কোনো জটিলতা হচ্ছে কি না তা প্রথমেই শনাক্ত করা যাবে। কারণ টুইন প্রেগন্যান্সি একটি জটিল গর্ভাবস্থা বা ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভাবস্থা। আল্ট্রাসনোগ্রাম করলে সন্তান দুটির অবস্থান, তাদের কীভাবে বৃদ্ধি ঘটছে, একজনের বেশি নাকি অন্যজনের কম বৃদ্ধি হচ্ছে, তা জানা সম্ভব হবে। মায়ের প্রতি আমাদের পরামর্শ, খাওয়া-দাওয়া, বিশ্রাম ঠিকঠাক নিতে হবে এবং চিকিৎসকের চেকআপে থাকতে হবে। টুইন প্রেগনেন্সির প্রসব সব সময় হাসপাতালে করানো উচিত। কারণ কোনো জটিলতা দেখা দিলে সাথে সাথে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।

অধ্যাপক ডা. শামীম ফাতেমা নারগিস বলেন, রক্তের ডোনার প্রস্তুত রাখতে হবে। কারণ টুইন প্রেগনেন্সিতে পেট ও জরায়ু অনেক বড় হয়ে যায়। প্রসব-পরবর্তী পিপিএস হতে পারে। পিপিএসকে কমব্যাট করার জন্য রক্ত লাগলে সাথে সাথে দিতে হবে। আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে সন্তান দুটির অবস্থান ঠিক থাকলে নরমাল ডেলিভারি করা যেতে পারে। অবস্থানে কোনো সমস্যা বা গর্ভজনিত জটিলতা যেমন, ব্লাড প্রেসার বেড়ে যাচ্ছে, ডায়াবেটিস আছে, তাহলে সিজার প্রয়োজন হবে। সুতরাং মাকে নিয়মিত চিকিৎসক দেখানো, চেকআপে থাকা, এবং নিজেকে সঠিকভাবে প্রস্তুত রাখতে হবে। তাহলে নিরাপদ হবে টুইট প্রেগনেন্সি।


আরও দেখুন: