উপসর্গহীন ডায়াবেটিসে বাড়ে যেসব স্বাস্থ্যঝুঁকি
জটিলতার মধ্যে রয়েছে— চোখের ক্ষতি হতে পারে, হার্টের ক্ষতি হতে পারে, নার্ভের ক্ষতি হতে পারে এমনকি ব্রেইনের ধারণক্ষমতা কমে আসতে পারে
ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলেও অনেক সময় কোনো উপসর্গ প্রকাশ পায় না। ফলে আক্রান্তরা কোনো চিকিৎসা যেমন নেন না, তেমনি ওষুধ সেবন ও জীবনাচরণে পরিবর্তন আনেন না। এতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গিয়ে নানাবিধ স্বাস্থ্যঝুঁকি ডেকে আনতে পারে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের উপসর্গ থাকে না। তারা হয়ত অন্য কোনো রোগের জন্য পরীক্ষা করাতে গিয়ে এটি ধরা পড়ে। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে আমাদের প্রধান কাজ হলো, ব্লাড সুগার কমিয়ে আনতে হবে। কারণ রক্তে সুগারের আধিক্য থাকলে এবং সেটি বহুদিন চললে শরীরের সব অঙ্গেই সুগার বাড়বে।
আমাদের শরীরে সর্বত্রই রক্ত চলাচল করছে এবং যেসব টিস্যু ভলনারেবল এগুলো বেশি বেশি গ্লুকোজ সরবরাহের সাথে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এটিকে আমরা এক্লিমাটাইজেশন বলে থাকি। এর ফলে আপনি যখন সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করবেন, ভলনারেবল টিস্যুগুলোতে গ্লুকোজের সরবরাহ কমে গিয়ে সেগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকে।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একটি ভবন তৈরির জন্য যে পরিমাণ পিলারের দরকার, তার চেয়ে অনেক বেশি তৈরি করা হলে সেখানে বসবাসের কোনো জায়গা থাকবে না। ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে আমরা চিকিৎসা না করালে ঠিক একই রকম একটি অবস্থা তৈরি হবে। রোগীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, ডায়াবেটিসের যেসব জটিলতা রয়েছে, সেগুলো আরও বাড়তে থাকে।
জটিলতার মধ্যে রয়েছে— চোখের ক্ষতি হতে পারে, হার্টের ক্ষতি হতে পারে, নার্ভের ক্ষতি হতে পারে, কিডনির ক্ষতি হতে পারে এমনকি ব্রেইনের যে ধারণক্ষমতা সেটিও কমে আসতে পারে। সুতরাং আমাদের রক্তে সুগার লেভেল বেড়ে গেলে অবশ্যই চিকিৎসকের কাছে যাব এবং ওষুধ দিলে সেটি নিয়মিত খাব। এ রকম ধারণা পোষণ করা যাবে না যে, ওষুধ ছাড়াই আমরা ভালো হয়ে যাব, ওষুধ খেলে আমরা ওষুধের উপরে অভ্যস্ত হয়ে যাব, নির্ভরশীল হয়ে পড়ব। এগুলো খুব ভ্রান্ত ধারণা।
উপসর্গ নাই দেখেও ওষুধ বাদ দেয়া ঠিক হবে না। আমাদের উদ্দেশ্য হলো সুগার কমানো এবং কিছু কিছু ওষুধ আছে যেগুলো সুগার কমানোর পাশাপাশি অন্যান্য ঝুঁকিও কমিয়ে দেয়। সাথে ইনসুলিন প্রয়োজন হলে নিতে হবে। অনেকে মনে করেন, ইনসুলিন বোধহয় ডায়াবেটিসের শেষ চিকিৎসা। একবার ইনসুলিন নিলে এটা সারাজীবন চলতেই থাকবে।
কিন্তু অনেক রোগীকে আমরা অবস্থা ভালো হলে ইনসুলিন বাদ দিয়ে ট্যাবলেট খেতে দেই। অনেক জরুরি পরিস্থিতিতে আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিন দিয়ে থাকি। যেমন, সার্জারির সময় আমরা ইনসুলিন দেই, কেউ করোনা আক্রান্ত হলে তাকেও ইনসুলিন দিতেই হয়। এসব সমস্যা ঠিক হয়ে গেলে আবার ইনসুলিন বাদ দিয়ে পুরনো ট্যাবলেটে ফিরে যাওয়া হয়।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস একটা প্রগ্রেসিভ রোগ। এটি দিনকে দিন বেড়েই চলে এবং নিয়ন্ত্রণে না রাখলে হয়ত ট্যাবলেটের সাথে ইনসুলিনও প্রয়োজন হতে পারে। ওষুধে রোগটি নিয়ন্ত্রণে না এলে লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। বড় কথা হলো, সুস্থ থাকতে হলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।