করোনায় ফুসফুসে ফাইব্রোসিসের জটিলতা

অধ্যাপক ডা. বি কে বোস
2021-09-21 18:36:50
করোনায় ফুসফুসে ফাইব্রোসিসের জটিলতা

করোনায় ফুসফুসে ফাইব্রোসিস জটিলতা

করোনা পরবর্তী ফুসফুসের যে জটিলতা তার মধ্যে বড় সমস্যা ফাইব্রোসিস। ফাইব্রোসিস হলো- আমাদের ত্বকে কেটে যাওয়ায় যে দাগ হয় তাকে আমরা সাধারণত বলি থাকি স্কার টিস্যু। আর এইটাই ফুসফুসের মধ্যে হলে আমরা তাকে ফুসফুসের ফাইব্রোসিস বলি।

ফুসফুসের ভেতর দিয়ে আমরা যে অক্সিজেন নিচ্ছি সে অক্সিজেনটা ফুসফুসের সর্বশেষ যে পর্যায়ে পৌঁছাচ্ছে সে জায়গাটার নাম হলো অ্যালভিওলাস। তার পাশে আছে রক্তনালী, যাকে বলে পালমোনারি ক্যাপিলারি।

এই যে অক্সিজেনটা অ্যালভিওলাস হয়ে পালমোনারি ক্যাপিলারিতে গেলে এর মাঝে একটি পর্দা থাকে যাকে আমরা বলি ইন্টারস্টিশিয়াম। এটাকে যদি আমরা একটা ঘরের সঙ্গে তুলনা করি।

তবে ঘরের বারান্দাটাকে যদি আমি মনে করি অ্যালভিওলাস তাহলে প্রথমে অক্সিজনটা আগে ওখানে আসলো, দেয়ালটা যদি অতিক্রম করে তবে দেয়ালটি ইন্টারস্টিশিয়াম। এরপর ঘরের ভেতরে প্রবেশ করলো, ঘরের ভেতরে আছে রক্তনালী। এই রক্তনালীতে মিশ্রিত হলো।

এই ঘরের দেয়ালটি বা ইন্টারস্টিশিয়াম যখন যে কোনো কারণে শক্ত বা মোটা হয়ে যায়, ইন্টারস্টিশিয়ামে যদি কেনো ইনফ্লামেশন হয়ে যায় ও ইনফ্লামেশনের যে সিকুইলি যেটা ফাইব্রোসিস হয়, সেটাকেই আমরা পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলি।

পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলতে ইন্টারস্টিশিয়ামে ফাইব্রোসিস এবং তার আশেপাশে অর্থাৎ, একপাশে অ্যালভিওলাস ও অন্যপাশে রক্তনালী, এই গোটা জায়গাটায় যদি কেনো ইনফ্লামেশনের পরবর্তী একটা স্কার টিস্যু তৈরী হয় এটাকেই আমরা পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলি।

আসলে কোভিডের পরবর্তীতে ইন্টারস্টিশিয়ামে এই জটিলতা হচ্ছে, এটাকেই আমরা পালমোনারি ফাইব্রোসিস বলি।

পালমোনারি ফাইব্রোসিস একধরণের রোগ যেখানে ফুসফুসের নরম অংশগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং সেখানে ক্ষতের সৃষ্টি হয়।

এতে ফুসফুসের কলাগুলো (টিস্যু) মোটা ও শক্ত হয়ে যায়, ফলে ফুসফুসে বাতাসের থলিগুলো ঠিকমত কাজ করতে পারে না।

কোন কোন রোগীর ক্ষেত্রে এর ফলে নিঃশ্বাস নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে এবং ক্লান্তিবোধ দেখা দেয়। শুধু তাই নয় ভবিষ্যতে অন্য নানা ধরনের ফুসফুসের সংক্রমণে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

এই রোগ সারে না। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা আরও মারাত্মক রূপ নিতে পারে অর্থাৎ দিনে দিনে এই রোগীর অবস্থার অবনতি হতে থাকে।

কোভিড-১৯এর ফলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, তা নিয়ে গবেষণার কাজ এখনও খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে আছে।


আরও দেখুন: