জলবসন্তের সঙ্গে হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজের পার্থক্য
জলবসন্ত এবং হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ দুটোই ভাইরাসজনিত অসুখ
জলবসন্তের লক্ষণের সঙ্গে মিল থাকা হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ ছোঁয়াচে এবং মূলত শিশুদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে বড়দেরও হতে পারে। অনেকে আবার এটিকে জলবসন্তের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বাংলায় এনিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) শিশুরোগ বিভাগের চিকিৎসক ডা. রওনক জাহান বলছেন, হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ এবং জলবসন্ত দুটোই ভাইরাসজনিত অসুখ।
দুটোর মধ্যে পার্থক্য হচ্ছে- হ্যান্ড ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে গলা ব্যথা, জ্বর এবং খাবারে অরুচি প্রথম দিকের উপসর্গ। এর কয়েকদিন পর মুখ ও জিহ্বায় পুঁজযুক্ত ঘায়ের মত ফুসকুড়ি হয়। যাতে ব্যথা হতে পারে, খেতে কষ্ট হতে পারে।
এই অসুখে হাতে এবং পায়ে ত্বকের রঙ অনুযায়ী গোলাপি, লাল অথবা কাল রঙের উঁচু গোটা দেখা দেয়। পরে তা পানিযুক্ত ফুসকুড়ির মতো হয়ে ওঠে।
বেশিরভাগ সময় হাত, পা এবং জিহ্বাতেই ফুসকুড়ি দেখা দেয় তবে উরু অথবা নিতম্বেও মাঝে মাঝে হয়ে থাকে।
শিশু এবং বড়দের একই রকম লক্ষণ থাকে। তবে পাঁচ বছরের নিচের বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে লক্ষণগুলো বেশি কষ্টদায়ক হয়ে থাকে। অসুখটি একের অধিকার হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল বা সিডিসি’র তথ্যমতে এটি ছোঁয়াচে এবং আক্রান্ত হওয়ার প্রথম সপ্তাহে বেশি ছড়ায়।
রোগীর শরীরের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ, আক্রান্ত হওয়ার পর গোটা থেকে বের হওয়া তরল পদার্থ, হাঁচি ও কাশির মাধ্যমে যে ‘ড্রপলেট’ ছড়ায়, মুখের লালা, সর্দি, মলের মাধ্যমে এর সংক্রমণ হতে পারে।
ডা. রওনক জাহান বলছেন, সাধারণ বর্ষার সময় এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অসুখটি কম হয়। ‘ফুট অ্যান্ড মাউথ’ নামে গবাদি পশুর একটি অসুখ রয়েছে যা এক নয়।
জলবসন্তে জ্বরের সঙ্গে শরীরে বেশ ব্যথা হয়। এর তিন চারদিন পর গোটা দেখা দেয়। তবে শুধু হাত বা পায়ে নয়, সারা শরীরে হতে পারে, শরীরের নির্দিষ্ট যেকোনো স্থানে হতে পারে।
মাথায় এমনকি যৌনাঙ্গেও হতে পারে। জলবসন্তের গোটাগুলোতে তরল পদার্থ থাকে। সারা শরীরে একই ধরনের, যা পেকে ওঠে এবং একপর্যায়ে ফেটে যায়।
এসময় আরও নতুন গোটা দেখা দিতে পারে। জলবসন্তের একটি বড় পার্থক্য হলো এর গোটাগুলো খুব চুলকায়।
জলবসন্ত বড়দের ক্ষেত্রে বেশি কষ্টদায়ক হয়। জলবসন্ত রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ক্ষতিসাধন করে। সাধারণত একবার জলবসন্ত হলে দ্বিতীয়বার তা হয় না। একের অধিক জলবসন্ত হওয়া খুব বিরল।
সিডিসি’র তথ্যমতে জলবসন্ত খুবই ছোঁয়াচে। কোনো রোগীর সরাসরি সংস্পর্শে এলে এটি ছড়ায়। অসুখটির লক্ষণ দেখা দেওয়ার প্রথম এক থেকে দুদিন এটি সবচেয়ে বেশি ছড়ায়।
একজন আক্রান্ত ব্যক্তির কাছের মানুষদের মধ্যে ৯০ শতাংশেরই অসুখটি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ডা. রওনক জাহান বলেন, সাধারণত শীতের শেষে এবং বসন্ত মৌসুমে এটি বাংলাদেশে বেশি দেখা দেয়।