ডায়াবেটিস ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও করণীয়
অনেক দিন মেটফরমিন খেতে থাকলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে
ডায়াবেটিস একটি দীর্ঘমেয়াদি অসুখ বা মেটাবলিক ডিস-অর্ডার। আমরা মেটফরমিনের কথা চিন্তা করলে রোগীকে এটি নিয়মিত খেতে হবে। মেটফরমিনের ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনো কোনো রোগীর ওজন অনেক কমে যায়, জিআই আপসেট হতে পারে। মানে পেট ভরা ভরা ভাব, বমি ভাব আসতে পারে, ঘনঘন পায়খানা হতে পারে।
আবার অনেক দিন মেটফরমিন খেতে থাকলে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। কারণ এটি ভিটামিন বি-১২ ডেফিসিয়েন্সি ঘটাতে পারে। ডায়াবেটিস দীর্ঘমেয়াদি অসুখ হওয়ায় ওষুধ ছেড়ে দেয়ার উপায় নেই। ফলে রক্তশূন্যতা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে রোগীকে ১-২ বছর পরপর ভিটামিন বি-১২ দেয়া হয়।
ডায়াবেটিসের ওষুধ অ্যাম্পাগ্লিফ্লোজিনে ইউরিনারি ইনফেকশন হতে পারে। ব্লাড প্রেসার কমে যেতে পারে। অ্যাম্পাগ্লিফ্লোজিন থাকলে কমিয়ে দিতে হবে। অ্যাম্পোগ্লিফ্লোজিনের সাথে সালফোনাইলুরিয়া গ্রুপের ওষুধ দেই বা ইনসুলিন দেই যেগুলোর হাইপোগ্লাইসোমিয়া করার প্রবণতা বেশি আছে, তাহলে সেটি বেশি করতে পারে। সুতরাং, এক্ষেত্রে আমাদের ইনসুলিনের ডোজ এবং সালফোনাইলুরিয়ার ডোজ কমিয়ে দিতে হবে। জটিলতার হাত থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য এগুলো খেয়াল রাখতে হবে।
সালফোনাইলুরিয়া একটা সালফার ওষুধ। এতে হাইপারসেনসিটিভিটি বা স্কিনের এলার্জি হতে পারে। আবার ইনসুলিন বা সালফোনাইলুরিয়া যেগুলো বিটা-সেল থেকে ইনসুলিন সিক্রেশন করায়, ওজনের আধিক্য দেখা দিতে পারে। যাদের ওজন ইতিমধ্যে বেশি, তাদের ক্ষেত্রে এ জাতীয় ওষুধ এড়াতে হবে। একেবারেই ওষুধ দিতে হলে রোগীকে ডায়েট ও ব্যায়ামের মাধ্যমে ওজন কমাতে উৎসাহিত করতে হবে।
এসজিএলটি-২ এবং জিএলপি-১ এই গ্রুপের ওষুধগুলো ওজন কমিয়ে থাকে। যাদের ক্ষেত্রে ওজনের আধিক্য হচ্ছে, তাদের এ ধরনের ওষুধের কম্বিনেশন করাতে পারি। আমরা যখন রোগীকে ওষুধ দেই, তার ব্লাড সুগার, হার্ট, কিডনি, ওজন, অন্য কোনো সমস্যা আছে কিনা সেগুলোর দিকে লক্ষ্য রেখেই দিতে হয়।
আরেকটা জিনিস সব সময় খেয়াল রাখতে হবে। ডায়াবেটিসের চিকিৎসা মানে শুধু ব্লাড সুগার কমানো নয়। বরং ডায়াবেটিসের জন্য যেসব জটিলতা পরে হতে পারে সেগুলো প্রতিরোধ করা। যেমন, ব্লাড সুগার, ওজন কমানো, নিয়মিত প্রেসারের ওষুধ গ্রহণ, লিপিড-প্রোফাইল বা কোলেস্টেরল লেভেল বেশি হলে সেটি কমাতে হবে।
ডায়াবেটিস রোগীদের শিখিয়ে দিতে হবে যেন তিনি সব সময় তার নিজের চিকিৎসায় অংশগ্রহণ করতে পারেন। চিকিৎসক তো সব সময় পাশে থাকবেন না। এজন্য রোগীকেই জানতে হবে কী ধরনের খাবার খেতে পারবেন এবং কী ধরনের খাবার তাকে বর্জন করতে হবে।
কী ধরনের ব্যায়াম তাকে করতে হবে, পানি কতটুকু খাওয়া উচিত, এগুলো তাকে শিখিয়ে দিতে হবে। তার কাছে গ্লুকোমিটার আছে, এই গ্লুকোমিটারের রেজাল্ট দেখে সুগার লেভেল বেড়ে গেলে বা বেশি কমে গেলে তৎক্ষণাৎ কী করবে, কীভাবে ইনসুলিন নিবে সেগুলো তাকে শিখিয়ে দিতে হবে।