মানব দেহে যেভাবে ইনসুলিন তৈরি হয়

ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন
2021-08-28 18:34:28
মানব দেহে যেভাবে ইনসুলিন তৈরি হয়

মানব দেহে যেভাবে ইনসুলিন তৈরি হয়

ইনসুলিন আমাদের শরীরের প্যানক্রিয়াসে তৈরি হয়। প্যানক্রিয়াস পেটের ভিতর একটা অঙ্গ। বাংলায় এটাকে বলা হয় ‘অগ্নাশয়’। অগ্নাশয়ের মধ্যে অনেক ধরনের কোষ থাকে। এরমধ্যে বিটা কোষ থেকে ইনসুলিন তৈরি হয়।

ইনসুলিন একটা হরমোন। এর কাজ হচ্ছে খাবারের গ্লুকোজকে ভেঙে শক্তি তৈরি করা। খাবারের চর্বিকে শরীরের চর্বিতে রূপান্তরিত করা। এবং শরীরের চর্বিকে ভাঙতে না দেওয়া। খাবারের অ্যামাইনো অ্যাসিডকে শরীরের মাংসে পরিণত করা এবং শরীরের মাংসকে ভাঙতে না দেয়া।

ইনসুলিন হরমোনের কাজ হচ্ছে, খাবারের কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন এবং ফ্যাট তৈরি করা। মানে হচ্ছে গ্লুকোজ, চর্বি এবং আমিষ জাতীয় খাবারকে ব্যবহার করে শরীর সুস্থতা বজায় রাখা।

কোন খাবার আসলে সরাসরি ইনসুলিন তৈরি করে না। ইনসুলিন তৈরি হয় জেনেটিক মেকানিজমে নিজে নিজে। তৈরি হয়ে প্যানক্রিয়াসের বিটা সেলের মধ্যে প্যাকেট আকারে রেডি থাকে।

আমরা যে সকল খাবার খাই সেগুলো থেকে শর্করা জাতীয় খাবার তৈরি হয়। খাবার খাওয়ার পর এখানকার শর্করা জাতীয় খাবার শরীরের অন্ত্র থেকে ইন্টেসটাইন যায় এবং সেখান থেকে রক্তে যায়। গিয়ে সোজা রক্তের মাধ্যমে প্যানক্রিয়াসের বিটা সেলে গিয়ে জমা হয়। ওখানে যে ইনসুলিন হরমোন তৈরি হওয়া ছিল সেটা সঙ্গে সঙ্গে রক্তে চলে আসে। এসে গ্লুকোজটা মাংসে নিয়ে যায়, মাংসের ভিতরে ঢুকে ভেঙে ভেঙে শক্তি তৈরি করে।

আমাদের শরীরে ইনসুলিন রিলিজ করে, কতটুকু তৈরি হবে, কতক্ষণ তৈরি হবে, কি মাত্রায় তৈরি হবে- এটা নির্ভর করে আমি কি পরিমাণ, কি ধরনের এবং কতক্ষণ পরপর কার্বোহাইড্রেট খাচ্ছি। তার উপর নির্ভর করে শরীরের ইনসুলিন কতটুকু তৈরি হবে। সাধারণত ২৪ ঘন্টায় ইনসুলিন তৈরি হয় ১ ইউনিট পার আওয়ার। এটা ব্লাডে রিলিজ হতে থাকে।

আমরা যখন খাবার খাই, খাওয়ার রেস্পন্সের পরিমাণে ইনসুলিন রিলিজ হয়। সেটা আস্তে আস্তে ব্লাড গ্লুকোজকে দুই ঘণ্টার মধ্যে ইউটিলাইজ করে ফেলে।

তাহলে আমাদের জানতে হবে ইনসুলিনের এই মেকানিজম এর কারণে আমাদের খাবার নিয়ম ঠিক রাখতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত ইনসুলিন তৈরি করার ক্যাপাসিটি অপটিমাম থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত ডায়াবেটিস হয় না?

যখন আমাদের ওজন বেড়ে যায় তখন ইনসুলিন ভালো কাজ করতে পারে না, তাই বেশি বেশি ইনসুলিন তৈরি হয়ে কাজটা করতে গিয়ে শরীর একসময় ইনসুলিন তৈরি করার ক্যাপাবিলিটি হারিয়ে ফেলে। তখন ইনসুলিন কমতে থাকে এবং ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ইনসুলিন কমে গেলে, ডায়াবেটিস হয়।

ফলে সব ব্লাড গ্লুকোজ কাজে লাগাতে পারে না, ব্লাড গ্লুকোজ রক্তে বাড়তে থাকে। এটাকে বলে ডায়াবেটিস।

টাইপ টু ডায়াবেটিস, টাইপ অন ডায়াবেটিস এবং অন্য ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে সরাসরি প্যানক্রিয়াসের বিটা সেল ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- করোনা সরাসরি বিটা সেলকে অ্যাটাক করে ইনসুলিন তৈরি করার ক্যাপাসিটি কমিয়ে ফেলে। সেখানে এ কারণে ডায়াবেটিস হয়।


আরও দেখুন: