নতুন মাদকে ভয়াবহ আসক্তি, রক্ষায় করণীয়
নতুন নতুন নেশাদ্রব্য এসেছে, যেগুলোর আসক্তি ক্ষমতা অনেক বেশি
ইদানিং অনেক নতুন নতুন মাদকের নাম আসছে পত্রপত্রিকায়। এগুলোর ভয়াবহতা সম্পর্কে আমাদের অনেকের জানা নেই। ফলে তরুণ প্রজন্মকে সঠিক গাইডলাইন দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।
আসলে মাদকদ্রব্যের যে ১০টি ধরণ রয়েছে, তার মধ্যে অ্যালকোহল থেকে শুরু করে সিগারেট এমন কি নতুন নতুন যেসব মাদকদ্রব্য এখন পাওয়া যাচ্ছে, সেসব বিষয়েও বলা আছে। সত্যি কথা বলতে বিভিন্ন মাদকদ্রব্য নিয়ে গবেষণা করে আর্টিফিশিয়াল আরও নতুন নতুন মাদকদ্রব্য তৈরি করা হচ্ছে। আর এগুলোর আসক্তির ক্ষমতা আরও তীব্র। প্রতিনিয়ত এ রকম গবেষণা হচ্ছে এবং মাদকগ্রহণকে এখন অনেকটা ফ্যাশনের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
একটি থেকে নতুন আরেকটি নেশায় যাওয়া এবং এর মধ্যে রয়েছে ব্যবসা। মাদক যারা তৈরি করে, বিক্রি করে এবং অবৈধভাবে পাচার করে তারা কিশোর-কিশোরীদের মনের অবস্থা সম্পর্কে খবর রাখে। তারা প্রতিনিয়ত নতুন নতুন মাদকদ্রব্যকে তরুণ সমাজের সামনে উপস্থাপন করে। যেমন, আগে গাঁজা-হিরোইন ছিল। এখন কিন্তু সবচেয়ে প্রভাবশালী মাদকদ্রব্য হচ্ছে ইয়াবা বা এমফিটামিন। ইয়াবা খুব বেশি দিন আগেও আসেনি। কিন্তু এই এমফিটামিন বা মেথামফিটামিনই এখন তরুণ সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
এ ছাড়া নতুন নতুন আরও নেশাদ্রব্য এসেছে, যেগুলোর আসক্তি ক্ষমতা অনেক বেশি। এর মধ্যে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছে এলএসডি বা লাইসার্জিক এসিড ডাইথ্যালামাইড। এগুলো অবশ্য আগেও ছিল ফেনসাইক্লিডিন বা পিসিপি নামে, যেগুলোকে বলা হয় হ্যালুসিনোজেন। এগুলো এতটাই মারাত্মক যে পাশ্চাত্যে এটার ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর পরিণতি এতটাই ভয়াবহ যে আপনারাও দেখেছেন, কয়েক মাস আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাফিজুর নামে এক শিক্ষার্থী এলএসডি সেবন করে দা দিয়ে নিজের গলা কেটে হত্যা করেছে।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, এমনটি হওয়ার কারণ আসলে কী? আমরা যদি সাইকোলজিস্ট বা সাইক্রিয়াটিস্ট হিসেবে ব্যাখ্যা দিতে চাই তাহলে আমরা জানি যে এলএসডি নতুন কিছু নয়। এলএসডি খেলে মানুষের হিতাহিত জ্ঞান বলে কিছু থাকে না, তার মধ্যে ডিল্যুশন হয় অর্থাৎ সন্দেহবাতিকতা সৃষ্টি হয়। তার হ্যালুসিনেশন হয়, অবাস্তব বা কাল্পনিক চিত্র চোখের সামনে দেখতে পায়, কানের মধ্যে গায়েবি আওয়াজ শুনতে পায়। এ সময় এমনও হতে পারে যে সে গায়েবিভাবে শুনতে পাচ্ছে এই মুহূর্তে তুমি নিজেকে খুন কর, বা তুমি অমুককে খুন কর। এলএসডি খেলে একজন ব্যক্তি নিজেকেও খুন করতে পারে অর্থাৎ আত্মহত্যা করতে পারে কিংবা অন্য কারও ক্ষতি করতে পারে। আক্রমণাত্মক হয়ে পড়তে পারে।
আমাদের দেশে এখন এলএসডির মতো নতুন নতুন নেশাদ্রব্য এসে গেছে। বেশ ভালোভাবেই এসে গেছে এবং ইতিমধ্যে একটা বড়সড় নাড়া দিয়ে দিয়েছে। সুতরাং, আমাদের এসব নতুন নতুন মাদকদ্রব্যের ব্যাপারে বেশ সজাগ থাকতে হবে। কারণ, আগামীতে যে নতুন মাদকদ্রব্য আসবে সেটি আরও তীব্রমাত্রার আসক্তি ক্ষমতা বা অনেক বেশি ক্ষতি করার ক্ষমতা নিয়ে আসবে। সুতরাং, নতুন মাদকদ্রব্য সম্পর্কে আমাদের বেশি সচেতন থাকতে হবে। সন্তানদের দিকে নজর রাখতে হবে।