ফ্যাটি লিভার কী, প্রতিরোধে করণীয়
চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি জমা হয় লিভারে, সেটিকে আমরা ফ্যাটি লিভার বলি
লিভার আমাদের শরীরের খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি পেটের ডান দিকে উপরের অংশে থাকে। এটি আকারে অনেক বড় এবং প্রায় ৩ থেকে ৪ পাউন্ড ওজনের। লিভারকে শরীরের পাওয়ার হাউস বলা হয়। এটি আমাদের শরীরে এনার্জি সরবরাহ করে।
আমরা আমাদের শরীরের জন্য যা খাই বা প্রয়োজন অনুযায়ী যা খাই এগুলো আমাদের শরীরের রিচ করতে পারে না। রিচ করতে হলে এগুলোকে প্রসেস করে সেল ইউজ করার মতো অবস্থায় আনতে হয়। এ কাজটিই লিভার করে থাকে। এ ছাড়া লিভার শরীরের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে থাকে। যেমন, প্রোটিন, অ্যালবুমিন ও অ্যান্টিবডি। বিলিরুবিন যেটা বাড়লে শরীরে জন্ডিস হয়, লিভার এসব জিনিসের মতো অনেক কিছু মেটাবলিজম করে থাকে।
আমাদের শরীরে রক্ত জমাট বাঁধার জন্য যে জিনিসগুলো দরকার হয়, সেগুলো লিভার তৈরি করে। আবার আমরা খাবার খেলে খাবারের সাথে যে রোগজীবাণু শরীরে প্রবেশ করে বা শরীরের ভেতরে কোনো রোগজীবাণু হয় বা টক্সিন জাতীয় জিনিসগুলোকে লিভার নিষ্ক্রিয় করে। লিভারের এ রকম অনেক কাজের ফলে আমাদের শরীর সচল ও কর্মক্ষম থাকে।
ফ্যাটি লিভার কেন হয়
আগেই বলেছি লিভার শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। লিভারের সাথে এমনিতে কিছু পরিমাণে চর্বি থাকে। এই স্বাভাবিক চর্বির পরিমাণ বলা যায় ৫ থেকে ১০ শতাংশ। কোনো কারণে যদি এই চর্বির পরিমাণ ১০ শতাংশের বেশি জমা হয় লিভারে, সেটিকে আমরা ফ্যাটি লিভার বলি। অর্থাৎ লিভারে মাত্রাতিরিক্ত চর্বি জমে ফ্যাটি লিভার হয়।
এই ফ্যাটি লিভার সাধারণত পশ্চিমা সমাজে অতিরিক্ত অ্যালকোহল পানে হয়ে থাকে। তবে বর্তমান বিশ্বে অ্যালকোহল ছাড়াও অন্য রোগের কারণেও ফ্যাটি লিভার দেখা দিচ্ছে।
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা
ফ্যাটি লিভারের ক্ষেত্রে প্রধান চিকিৎসা হলো ওজন নিয়ন্ত্রণ করা। কারও ডায়াবেটিস, ব্লাড প্রেসার, কোলেস্টেরল থাকলে সেগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। ওজন কমানোর পাশাপাশি এ রোগগুলো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য অনেক ওষুধ রয়েছে, সেগুলো নিয়মমাফিক সেবন করলে সুস্থ থাকা যায়। তবে এগুলো নিয়ন্ত্রণে থাকলে ফ্যাটি লিভারও ভালো হয়ে যাবে।
কারও যদি এসব রোগ না থাকে, সেক্ষেত্রে ফ্যাটি লিভারের জন্য এখন পর্যন্ত কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। তবে অনেক ওষুধ পাইপলাইনে আছে, এগুলো নিয়ে এখনো নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও গবেষণা হচ্ছে। আবার কিছু কিছু ওষুধ তৃতীয় দফা ট্রায়ালে আছে। কিছু কিছু ওষুধ ট্রায়াল পার হয়ে বাজারে এসেছে।
ওষুধগুলোর মধ্যে রয়েছে ওবিটিকোলিক অ্যাসিড। এই ওষুধ সীমিত আকারে কিছু কিছু দেশে অনুমোদন রয়েছে। এসব ওষুধ ব্যবহার করা হয় যখন ফ্যাটি লিভারের কোনো কারণ পাওয়া যায় না। এছাড়া আরও কিছু ওষুধ অদূর ভবিষ্যতে আমরা পাব, আমরা আশাবাদী ওষুধগুলো ভালোই হবে।
ফ্যাটি লিভার খারাপ সমস্যা এবং এর ফলে লিভারের নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। লিভারসহ শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সমস্যা হতে পারে। যেমন, কার্ডিওভাসকুলার বা হার্টের রোগীরাও ফ্যাটি লিভারের কারণে মারা যায়। যেহেতু ফ্যাটি লিভারের সাথে হার্টের রোগও সম্পর্ক যুক্ত।
ফ্যাটি লিভার অনেক কমন একটি রোগ এবং এটি প্রতিরোধযোগ্য। ফ্যাটি লিভার নিয়ে এখন আর চুপ করে বসে থাকার সুযোগ নেই। সচেতন হতে হবে। খাবার গ্রহণের ব্যাপারে একটু মিতব্যয়ী হতে হবে। পরিমিত পরিমাণে সুষম এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার খেতে হবে। কায়িক পরিশ্রম, হাঁটাচলা, শরীর চর্চা ও খেলাধুলা করলে ইনশাআল্লাহ আমরা ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকতে পারব।