শিশুর জন্ডিস ও প্রতিরোধে করণীয়

ডা. নাঈমা সুলতানা
2021-08-03 17:09:45
শিশুর জন্ডিস ও প্রতিরোধে করণীয়

জন্ডিস শিশুর জন্মের পর ১৪ দিনের বেশি থাকলে এর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে

জন্ডিসকে অনেকে গুরুত্ব দেন না। টোটকা বা মামুলি কবিরাজি চিকিৎসা করান। কিন্তু চিকিৎসক হিসেবে কারও জন্ডিস হলে আমরা একটু চিন্তিতই হই। জন্ডিস যে ধরনের বা যে কারণেই হোক, এটি সব সময়ই একটি গুরুতর উপসর্গ।

জন্ডিস নিজে কোনো রোগ নয় বরং অন্য কোনো রোগের লক্ষণ। ভাইরাস সংক্রমণ থেকে শুরু করে সিরোসিস বা ক্যানসারের মতো রোগের প্রাথমিক লক্ষণ হিসেবে দেখা দিতে পারে এই জন্ডিস।

মানুষের রক্তে অনেক উপাদানের মধ্যে বিলিরুবিন একটি। এটির উৎপত্তি রক্তের লোহিত কণিকা থেকে। রক্তের লোহিত কণিকা স্বাভাবিক বা অস্বাভাবিকভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে লিভারে বিলিরুবিন তৈরি হয় এবং পরবর্তী সময়ে রক্তে প্রবাহিত হয়ে মল ও প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়।

বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হলে এটি জমা হতে থাকে শরীরের বিভিন্ন কোষকলায়। আর তখন কোষকলার স্বাভাবিক রং পরিবর্তন হয়ে হলুদাভ হয়ে যায়। ত্বক ও চোখের ঝিল্লি হলুদ রং ধারণ করলে তা দৃশ্যমান হয় এবং জন্ডিস হয়েছে বলে শনাক্ত করা হয়।

জন্মের পর নবজাতকের অনেক কারণে জন্ডিস হতে পারে। প্রথমে যে কারণ বলব, সেটি হচ্ছে ফিজিওলজিক্যাল। একটি শিশু মাতৃগর্ভে ৩৭ সপ্তাহ থাকার পর ভূমিষ্ঠ হয়। জন্মের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় দিনে এই জন্ডিস দেখা দেয়। জন্ডিস শিশুর জন্মের প্রথম দিন হয় অথবা মায়ের ব্লাড গ্রুপ ‘ও’ পজেটিভ বা যেকোনো নেগেটিভ গ্রুপের হয়, সেক্ষেত্রে ইভাল্যুয়েশন দরকার।

মায়ের রক্তের গ্রুপ নেগেটিভ এবং শিশুর পজিটিভ হয়, সেক্ষেত্রে প্রথম সন্তানের ক্ষেত্রে এই জন্ডিসের চেয়ে সাব-সিকোয়েন্ট প্রেগনেন্সিতে যে জন্ডিস ডেভলপ করবে, সেটির জটিলতা বেশি হবে। আসলে আমরা জন্ডিসের মাত্রা দেখি এবং আমাদের কাছে বিভিন্ন চার্ট থাকে, সেই চার্ট, শিশুর ওজন ও মাতৃগর্ভকালীন সময়ে সবকিছুর সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন চিকিৎসা দিয়ে থাকি।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এলইডি ফটোথেরাপিতে নবজাতকের জন্ডিস কমে যায়। আর এখন এটি খুবই কমন চিকিৎসা। একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এলইডি ফটোথেরাপিতে রাখলে জন্ডিস ঠিকও হয়ে যাবে। কিন্তু জন্ডিস শিশুর জন্মের পর ১৪ দিনের বেশি থাকলে এর কারণ খতিয়ে দেখতে হবে। তখন দেখতে হবে বিলিরুবিন ডিরেক্ট বেশি নাকি ইন্ডিরেক্ট বেশি। যদি ইন্ডিরেক্ট হাইপার বিলিরুবিন হয় তাহলে ফটোথেরাপির মাধ্যমে চিকিৎসা করলে ভালো হয়ে যাবে। আর যদি ডিরেক্ট বিলিরুবিন হয়, তবে আরও ইভাল্যুয়েশনের প্রয়োজন হয়।

শিশুর জন্মের ১৪ দিনের দিনের বেশি এই জন্ডিস থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিতে হবে। শিশুর জন্মের দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন জন্ডিস হয়, ওজন আড়াই কেজি হয় এবং শিশু মাতৃগর্ভে ৩৭ সপ্তাহ পর্যন্ত থাকে, এ জন্ডিস নিয়ে আমরা চিন্তিত হব না। এটি ৮-১০ দিনের মধ্যেই চলে যায়। এ ধরনের জন্ডিসকে আমরা বলি ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস, এক্ষেত্রে দুশ্চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।


আরও দেখুন: