শিশুর রক্তস্বল্পতা কেন হয়, কী করবেন
কৃমিতে আক্রান্ত হলেও শিশুর শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়
করোনা মহামারিতে আমরা সবাই কমবেশি উদ্বিগ্ন। নানা দুশ্চিন্তা ভর করে। এই সময়ে শিশুদের ছোটখাটো সমস্যা হলে ঘরে বসেই চিকিৎসা করাতে হবে। শিশুর শারীরিক সমস্যার মধ্যে অ্যানিমিয়া বা রক্তস্বল্পতা অন্যতম। একটি শিশুর স্বাভাবিক বুদ্ধি বিকাশের জন্য তার শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্ত থাকতে হবে। এটি থাকলে স্বাভাবিক বুদ্ধি বিকাশের সাথে বৃদ্ধিজনিত কোনো সমস্যা হবে না।
কীভাবে বুঝবেন
আমাদের শরীরে লোহিত, শ্বেত ও অণুচক্রিকা নামে তিন ধরনের রক্ত কণিকা থাকে। লোহিত কণিকা রক্তের হিমোগ্লোবিনের কাজ করে। হিমোগ্লোবিন লেভেল ১২-১৪ একটি শিশুর জন্য স্বাভাবিক। কোনো কারণে এটি কমে গেলে শিশুর নানা সমস্যা দেখা দিতে পারে। যেমন, মেজাজ খিটখিটে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজকর্ম করতে না পারা ইত্যাদি। অনেক সময় ওজন ও উচ্চতা ঠিক থাকলেও শিশু রক্তস্বল্পতায় ভোগে এবং তার বহিঃপ্রকাশ বিভিন্ন হতে পারে।
অনেক মা-বাবা শিশু ফ্যাকাসে কিংবা অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে এলে দেখা যায় তার রক্তস্বল্পতা হয়েছে। এর বাইরেও শিশুর রক্তস্বল্পতা বোঝার কিছু লক্ষণ রয়েছে। যেমন, সমবয়সীদের সাথে খেলতে গিয়ে অল্পতেই হাঁপিয়ে ওঠে, বুক ধড়ফড় অথবা পালপিটিশন হয়। এতে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ বিঘ্নিত হয়। আবার যেসব শিশুর রক্তস্বল্পতা রয়েছে বিশেষ করে ৯-১৫ মাস বয়সীরা হাতের কাছে যা পায়, তাই মুখে দেয় অথবা আঙুল মুখে দেয়। অভিভাবকরা এগুলোকে শিশুসুলভ আচরণ মনে করেন। আসলে এগুলোর বিষয়ে তাদের সচেতন হতে হবে। আসলেই কি শিশুসুলভ আচরণ নাকি রক্তস্বল্পতা তা নিশ্চিত হতে হবে। রক্তস্বল্পতার কারণে এমনটি হলে ধীরে ধীরে জটিলতা বাড়বে এবং এক পর্যায়ে দেখা যায়, খাবারের মাধ্যমে এটি সারিয়ে তোলা যায় না। তখন ব্লাড ট্রান্সফিউশন করা লাগে।
রক্তস্বল্পতা কেন হয়
রক্তস্বল্পতার অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। প্রথম কারণ হলো, রক্ত উৎপন্ন না হওয়া। শরীরে রক্ত উৎপন্ন হয় বোনমেরু বা অস্থিমজ্জা থেকে। এই অস্থিমজ্জা থেকে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন না হয় তাহলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। আরেকটা কারণ হলো, লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হয় ঠিকই কিন্তু এই লোহিত রক্তকণিকা উৎপন্ন হওয়ার পর সাধারণত ১২০ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকে। এটি ১২০ দিনের কম হয় বা ১২০ দিনের আগেই লোহিত কণিকা ভেঙে যায়, তাহলে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
কিছু কিছু রোগের প্রাথমিক উপসর্গ হিসেবে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। কিন্তু আমরা সাধারণত যে কারণ পেয়ে থাকি, সেটি হচ্ছে আয়রনের ঘাটতিজনিত অ্যানিমিয়া। অর্থাৎ শরীরে অপুষ্টির কারণে এ ধরনের রক্তশূন্যতা তৈরি হয়। বর্তমানে যেকোনো পরিবারেই এ ধরনের রোগের তীব্রতা প্রকাশ পাচ্ছে।
রক্তস্বল্পতায় যেসব জটিলতা দেখা দেয়
রক্তস্বল্পতার কারণে ওজন ও উচ্চতা ঠিক থাকলেও শিশু কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়। মাঝে মাঝে ডায়রিয়া হয়। শিশু হাতের কাছে যাই পায়, তা মুখে দেয়। এর ফলে ডায়রিয়া হয়। আবার দেখা যায়, রক্তস্বল্পতায় ভোগা শিশুরা অন্যদের মতো স্বাভাবিক খেলাধুলা করতে পারে না। এর অন্যতম কারণ হচ্ছে কৃমি। কৃমিতে আক্রান্ত হলেও শিশুর শরীরে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
কী করতে হবে
এসব উপসর্গ দেখা দিলে শিশুকে নিকটস্থ চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে। তারা প্রথম খাবারের মাধ্যমে ভালো করার চেষ্টা করেন। আয়রন, ফলিক এসিড সমৃদ্ধ খাবারের তালিকা করে দেন। সেগুলো নিয়মিত ও সঠিকভাবে খাওয়াতে হবে। এ ছাড়া রক্ত দিয়েও হিমোগ্লোবিনের লেভেল বাড়ানো হয়। তবে রক্তস্বল্পতায় ভোগা শিশুদের এটির পাশাপাশি জ্বর আছে কিনা সে ভালোভাবে খেয়াল রাখতে হবে। কোনোভাবেই অবহেলা করা যাবে না।
করোনাকালে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে। বাইরে গেলে মাস্ক পরতে হবে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন। শিশুদেরও মাস্ক পরার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।