করোনাকালে গর্ভধারণে করণীয়

ডা. দীনা লায়লা হোসেন
2021-07-25 17:23:33
করোনাকালে গর্ভধারণে করণীয়

৪-৫ বছরের ব্যবধান মায়ের স্বাস্থ্য ও পরবর্তী বাচ্চার জন্য খুবই ভালো

একটা মা মিসিং পিরিয়ডের মাধ্যমে তার অন্তঃসত্ত্বার বিষয় জানতে পারেন। এরপরই আমরা তাকে একজন চিকিৎসক এবং চিকিৎসক না পেলে স্বাস্থ্যকর্মীর শরণাপন্ন হতে বলি। কীভাবে তিনি চলাফেরা করবেন, খাদ্য তালিকা কী হবে ইত্যাদি বিষয় ছাড়াও কিছু চিকিৎসার পরামর্শ দেন চিকিৎসক।

করোনাকালে মা ও অনাগত সন্তানের স্বাস্থ্যঝুঁকিতে এড়াতে সীমিত পরিসরে চেকআপ করাতে বলি। শুরুর দিকে বা মিসিং পিরিয়ডের সময় যদি নাও আসতে পারেন, অন্তত ১৬ সপ্তাহের মধ্যে তাকে চেকআপে আসতে হবে। এ সময় আমরা মায়ের কিছু শারীরিক অবস্থা দেখার পাশাপাশি প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ ও আয়রন, ভিটামিনের চিকিৎসা দেই। এটি দেয়া হয় যার যেটা প্রয়োজন, তার ভিত্তিতে। এরপর ৫ মাসের সময় বাচ্চার শারীরিক গঠন ঠিক আছে কি না আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখা হয়। ৬ মাসের সময় মায়ের টিকা নেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। ২৪-২৮ সপ্তাহের মধ্যে মা আরেকবার চেকআপ করতে আসবেন। সেই সময় প্রয়োজনে আমরা একটা ব্লাড সুগার পরীক্ষা করে ক্লিনিক্যালি দেখি। কোনো সমস্যা আছে কিনা, তার কাছ শুনে পরামর্শ দেয়া হয়। এ সময়ই মাকে বলে দেয়া হয়, কি কি উপসর্গ দেখলে তিনি বুঝবেন ঝুঁকিপূর্ণ প্রেগনেন্সিতে রয়েছেন। যদি এমন উপসর্গ না হয়, তাহলে তিনি ৩২ সপ্তাহের সময় একটা চেকআপ করাবেন, এটিই শেষ চেকআপ। এটি সাধারণ প্রসব তারিখের আগে অথবা প্রসব ব্যথা উঠলে।

একটি নারীর শরীরের ভেতরে আরেকটি জীব ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠে। এজন্য দুজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আমরা এন্টিনেটাল চেকআপ করায় এবং বিভিন্ন নির্দেশনা দেই। খুব সহজে পরিপাক হয়, এ ধরনের খাবার গ্রহণ, জিঙ্ক, ভিটামিনস, মিনারেলস, ফ্যাট, শর্করা ও শাকসবজি খেতে বলি। আমরা অল্প অল্প করে কিছুক্ষণ পর পর খেতে বলি। কিছুক্ষণ পরপর পানি পান করতে হবে। প্রতিদিন রাতদিন মিলে ৮-১০ ঘণ্টা বিশ্রামের পরামর্শ দেয়া হয়। রাত ১১টার মধ্যেই ঘুমাতে যেতে হবে। ঘুম না এলেও শুয়ে থাকতে হবে।

গর্ভাবস্থায় ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। এক সময় গরম লাগে, শরীরে হরমোনাল পরিবর্তন হয়। দিন গড়ানোর সাথে পরিবর্তন স্পষ্ট হয়। ফলে পরিস্থিতির সাথে ম্যাচ করে আরামদায়ক পোশাক পরতে হবে।

গর্ভবতীদের প্রথম তিন মাসে ফলিক এসিডের প্রয়োজন হয়। ফলিক এসিড এমন একটি ভিটামিন, যা বাচ্চার জন্য খুব প্রয়োজন। মায়ের রক্তস্বল্পতা থাকলেও ফলিক এসিড দেয়া জরুরি। তিন মাস পর থেকে আয়রন, ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্টাল দেয়া হয় প্রয়োজন অনুযায়ী। এ সময় আমরা মায়েদের প্রচুর শাকসবজি খেতে বলি। শরীর সক্রিয় রাখতে হবে। সারাক্ষণ বিছানায় শুয়ে বসে থাকা যাবে না। যাদের আয়রন নেয়া সম্ভব হয় না, তাদের আমরা আয়রন জাতীয় খাবার যেমন, গরু-মুরগির কলিজা, কচু জাতীয় খাবার, পেয়ারা, কাঁচা কলা খেতে বলি। ৫ মাসের সময় এলে আল্ট্রাসনোগ্রাম করে বাচ্চার শারীরিক গঠন দেখা হয়। এক্ষেত্রে বাচ্চার গঠনে কোনো সমস্যা থাকলে পেটে থাকা অবস্থায় সহজে চিকিৎসা করা সম্ভব। এ সময় বড় ধরনের সমস্যা ধরা পড়লে যেমন, ঠোঁটকাটা, তালুকাটা ভূমিষ্ঠের পর এগুলোর চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।

এরপর আমরা মায়েদের ৩২ সপ্তাহে আসতে বলি। তবে ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ। ডায়াবেটিস, ব্লাড সুগারে সমস্যা, রক্তের হিমোগ্লোবিন, প্রস্রাবে ইনফেকশন, ইউরিনারি স্ট্রেসের মতো পারিবারিক হিস্ট্রি থাকলে তা জেনে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর ৩২ সপ্তাহের সময় বাচ্চার ফুল একটা চেকআপ করানো হয়। আর এ সময় মাকে ডেলিভারি সংক্রান্ত যাবতীয় পরামর্শ দেয়া হয়। একই সাথে বাচ্চার টিকা ও মা-বাবার পরিবার পরিকল্পনার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। আমরা পরবর্তী বাচ্চার জন্য ৪-৫ বছরের জন্য বলে দেই। এ ব্যবধান মায়ের স্বাস্থ্য ও পরবর্তী বাচ্চার জন্য খুবই ভালো।


আরও দেখুন: