কৈশোরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব ও করণীয়

ডা. রবি বিশ্বাস
2021-07-25 14:33:05
কৈশোরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব ও করণীয়

যথাযথ চিকিৎসা পেলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়

চিকিৎসা বিজ্ঞানের ক্রমবর্ধমান সাফল্য আর তথ্য প্রযুক্তির কল্যাণে অনেক সমসাময়িক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কে আমাদের জানার সুযোগ হয়ে থাকে। এর মাঝে আবার অনেক কিছু জানার ব্যপারে কৌতুহলও সৃষ্টি হয়। থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা তেমনি একটি স্বাস্থ্য সমস্যা। যদিও জন্মগত ও বড়দের থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা নিয়ে কম বেশী আলোচনা পরিলক্ষিত হয়, তবে কৈশোরে থাইরয়েড হরমোনের অভাব বিশেষ গুরুত্ববহ হলেও অনেক ক্ষেত্রেই তা দৃষ্টির আড়ালে থেকে যায়।

থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা যে কোন বয়সে শুরু হতে পারে, হতে পারে হরমোনের স্বল্পতা বা আধিক্য। তবে সার্বিক বিচারে হরমোনের কমতিই বেশীরভাগ সময় সমস্যার কারণ হয়ে থাকে।

সল্প পরিসরে এ নিয়ে সব কিছু লেখা সম্ভব নয়, তাই আজ এই সমস্যার কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য দিতে চেষ্টা করব, যা জনসাধারণকে রোগ চিনতে সাহায্য করবে এবং দ্রুত নিরাময়ে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

কৈশোরে থাইরয়েড হরমোনের সমস্যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে জন্মগত সমস্যাই দেরিতে প্রকাশ পেতে পারে।  যাকে বলা হয় Late onset congenital hypothyroidism, আবার কিছু সমস্যা সত্যিই শিশুকালে নতুনভাবে দেখা দিয়ে থাকে। তবে সব কিছুর মধ্যে autoimmune thyroiditis-ই juvenile hypothyroidism এর প্রধান কারণ, যার পিছনে রয়েছে জেনেটিক ও পরিবেশের সমন্বিত প্রভাব।

এছাড়া কিছু খাবার, আয়োডিনের ঘাটতি, অন্য অসুখ, ওষুধ, রেডিয়েশন, কোন কারণে থাইরয়েড গ্রন্থি কেটে ফেলা ইত্যাদি কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ রোগের লক্ষণ গুলোর মধ্যে প্রধান হলো, শিশুর হঠাৎ করেই সঠিক মাত্রায় লম্বা না হওয়া। পাশাপাশি অনেকের ওজন বেড়ে যেতে থাকে, পায়খানা কষা হয়, চোখ-মুখ ফোলা মনে হয়, ত্বক শুষ্ক লাগে। কেউ কেউ দূর্বল বোধ করে, অল্পেতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে, বেশী ঘুমায়, কাজে মনোযোগ ও উদ্যমের অভাব দেখা যায়। তবে গবেষনায় দেখা গেছে, আশ্চর্যজনক হলেও শিশুদের স্কুলের রেজাল্টে তেমন কোন প্রভাব পড়ে না। অনেকের যৌবন প্রাপ্তি বিলম্বিত হয়, আবার আগেও হতে পারে। কারও কারও গলার সামনে ফুলে যেতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রে মাথা ব্যথা ও চোখে দেখতে অসুবিধা হতে পারে।

এ ধরনের সমস্যা দেখা দিলে রোগ নির্ণয় ও যথাযথ চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, সম্ভব হলে শিশু হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া উচিত। ডাক্তার শারীরিক ও ল্যাবরেটরি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে রোগের অবস্থা ও কারণ নিৰ্ণয় সাপেক্ষে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করে থাকেন।

যত আগে চিকিৎসা শুরু করা যায়, ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া ততটাই সহজ হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বাইরে থেকে হরমোন ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা সম্ভবপর হয়ে থাকে। শরীরে দীর্ঘমেয়াদী হরমোনের অভাবের লক্ষণ থাকলে ধীরে ধীরে ওষুধের মাত্রা বাড়াতে হয়, এছাড়া কিছু জটিলতা দেখা দিতে পারে।

যথাযথ চিকিৎসা পেলে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই শিশু স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়, তবে আনুষঙ্গিক জটিলতা বা সাথে অন্য অসুখ থাকলে নিরাময় দুরূহ হতে পারে।


আরও দেখুন: