হরমনজনিত রোগে বুক ধড়ফড় ও অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে
ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন
হরমোন মানব শরীরে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। হরমোনের নানাবিধ সমস্যার কারণে শরীরে সৃষ্টি হতে পারে অনেক রোগ। পুরুষ ও নারী হওয়া হরমোনের মাধ্যমেই সণাক্ত হয়। সঠিক সময়ে হরমোনের চিকিৎসা করানো গেলে সুস্থ হওয়া সম্ভব। চলুন জেনে নেই হরমোনজনিত কয়েকটি রোগ সম্পর্কে।
উচ্চ রক্তচাপ:
অল্প বয়স্কদের ব্লাড প্রেসার বা উচ্চ রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া হরমোনের রোগ। বেশ কয়েকটি হরমোনের সমস্যার কারণে ব্লাড প্রেসার হতে পারে। যাদের আগে থেকেই ব্লাড প্রেসার আছে, বয়স্ক রোগী কিংবা তিনটির অধিক ওষুধ লাগে। তাহলে খুঁজতে হবে ব্লাড প্রেসার টা কি সিনসিয়ার? নাকি একটা হরমোনের কোন ব্লাড প্রেসার।
মেয়েদের মুখে দাড়ি ওঠা:
মেয়েদের মুখে দাড়ি হওয়া হরমনজনিত সমস্যা। ছেলেদের মুখে সময়মতো দাড়ি না ওঠাও আরেকটি হরমোনগত সমস্যা।
প্রথমে আমাদের দেখতে হবে এটা বংশগত কিনা। কারণ অনেকের বংশে দাড়ি, মোচ কম হয়। যারা দাড়ি রাখেন তাদের মুখের দিকে তাকালে কিন্তু বোঝা যায়। সবার দাড়ির ঘনত্ব কিন্তু একই রকম নয়। আর একেবারে যদি দাড়ি না উঠে, তাহলে তাকে হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে পরামর্শ নিতে হবে সময়মত।
একই সাথে তার অন্ডকোষ ঠিক আছে কিনা, দেখতে হবে। পেনিস ঠিক আছে কিনা, সাইজ ঠিক আছে কিনা দেখতে হবে। দাড়ি ওঠার যে হরমোন তা অন্ডকোষ থেকে তৈরি হয়। এ জাতীয় কোনো সমস্য হলে উন্নত চিকিৎসা রয়েছে।
অতিরিক্ত ঘাম:
গরমে কমবেশি সবারই ঘামায়।তবে অতিরিক্ত ঘামানো হরমোন জনিত সমস্যা।
থাইরয়েড হরমোন যদি বেশি তৈরি হয়, তাহলে বেশি ঘাম হতে পারে। মেয়েদের মাসিক বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেও প্রচুর পরিমাণ ঘাম হতে পারে।
বুক ধড়ফড় ও শ্বাসকষ্ট:
আমাদের অনেকেরই হঠাৎ বুক ধড়ফড় করে। বুক চেপে আসে। শ্বাসকষ্ট হয়।এগুলো হরমোনের রোগ থেকে হতে পারে। তবে এটা থাকা মানেই যে হরমোনের রোগ তাও কিন্তু নয়।
হঠাৎ করে অস্থির হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, দু:শ্চিন্তা, কোন পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারা এগুলো হরমোনজনিত রোগের প্রাথমিক লক্ষণ।
তবে হঠাৎ এগুলো কোনো কারণ ছাড়াই হলে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে থেকে দেখে নিতে হবে কারণটা কি।
পুরুষের কারণে বন্ধ্যাত্ব:
পুরুষের হরমোন জনিত সমস্যা থাকলে বন্ধ্যাত্ব হতে পারে।বা বা হওয়ার জন্য টেস্টেরন এবং শুক্রাণু দু’টোই প্রয়োজন। এগুলোতে সমস্য হরমোনের কারণে হতে পারে। যার ফলে স্ত্রীর বাচ্চা নাও হতে পারে। তবে শুধু এই কারণেই তা নয় অন্য কারণেও বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। এজন্য ভালো করে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে নিতে হবে।
পুরুষের শুক্রাণু সমস্যা:
যখন বন্ধ্যাত্ব বা বাচ্চা হতে চায় না তখন, আমরা প্রথমে পুরুষের বীর্য পরীক্ষা করতে বলি। দেখা হয়, সেখানে শুক্রাণু রয়েছে কিনা। সব সময় যে হরমোনের জন্য শুক্রাণু সমস্যা হবে তাও কিন্তু নয়। অনেকগুলি হরমোন সমস্যা করলে, শুক্রাণুতে সমস্যা হতে পারে।
যখন কারো এরকম সমস্যা দেখা দিবে, তিনি গাইনোকোলজিস্ট ও হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে দেখাবেন।
দু’টি অঙ্গ নিয়ে জন্মানো:
একটি শিশু যখন মায়ের পেটে বেড়ে উঠতে শুরু করে তখন তার পুরুষতন্ত্র গঠন হলে পরে সে পুরুষ হয়। নারীতন্ত্র গঠন হলে সে নারী হয়।
হরমোনজনিত সমস্যা হলে একটি মানুষ দুটি অঙ্গ নিয়ে জন্মাতে পারে। এক্ষেত্রে একটি মানুষের মধ্যে আংশিক পুরুষাঙ্গ ও মহিলা অঙ্গ থাকতে পারে। এগুলোকে আমরা বলি, সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার। এর জন্য জন্মের পর শিশুটি ছেলে না মেয়ে তা বুঝা যায় না।
কোন নবজাতকের যৌনাঙ্গের সঠিক গঠন না থাকলে দ্রত তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ অথবা হরমোন বিশেষজ্ঞের কাছে নিতে হবে।
শিশুদের ঠিকমতো বেড়ে না ওঠা:
ছোট বাচ্চারা যদি ঠিকমতো বড় না হয়, বমি করতে থাকে, খুদা না থাগে, দেখতে হবে হরমোনের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা। বয়ঃসন্ধিকাল থেকেই হরমোনগুলো তৈরি হতে থাকে, বয়স্ক পুরুষ অথবা নারীর আকৃতি ধারণ করার সময় পপর্ন্ত।
সময়ের আগেও বয়সন্ধিকাল শুরু হওয়া এক ধরনের অসুখ। অনেক দেরিতে হওয়াও এক ধরনের অসুখ। বুদ্ধিমত্তাও হরমোনের সাথে সম্পর্কিত।
গর্ভস্থ শিশুর বিকাশ:
যেসব নারীরা থাইরয়েডের চিকিৎসা গ্রহণ করেন, বিশেষ করে হাইপোথাইরয়েডের চিকিৎসা গ্রহণ করেন বা প্রতিদিন থাইরয়েডের ওষুধ খান খালি পেটে, তাদের প্রেগনেন্ট হওয়ার আগে অবশ্যই হরমোনের লেবেল চেক করে নিতে হবে। মায়ের পেটে গর্ভস্থ শিশুর মেধা বিকাশ মায়ের থাইরয়েড হরমোনের উপর নির্ভর করে। এটাতে সমস্যা হলে গর্ভস্থ শিশুর নানাবিধ সমস্যা হতে পারে।
ডা. সুলতানা মারুফা শেফিন
হরমোন, ডায়াবেটিস ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ