স্তনে চাকা মানেই ক্যান্সার নয়

ডা. কৃষ্ণা রূপা মজুমদার
2021-06-05 14:12:14
স্তনে চাকা মানেই ক্যান্সার নয়

স্তনে চাকা হলে আতঙ্ক নয়, ফাইল ছবি

স্তনে চাকা হওয়া স্তন ক্যান্সারের একটা প্রধান লক্ষণ। কিন্তু এই চাকা অন্যান্য কারণেও হতে পারে। স্তন ক্যান্সার ছাড়া আর বিভিন্ন কারণে এই চাকা হতে পারে।

স্তনে চাকা হলেই আতংকিত হওয়ার কিছুই নেই। সবারই সচেতন থাকা উচিৎ। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এই চাকাটা টিউবারকিউলোসিসের কারনেও হতে পারে। যেটাকে আমরা বলি ক্রনিক গ্র্যান্ডোম্যাটাস ম্যাটাস্টেসিস। ইনফ্ল্যামেটরি একটা লেশন হয়ে এখানে দেখা যাচ্ছে অ্যাবসেসের মতো হয়, পুঁজ হয়। অনেক অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরেও ভালো হচ্ছে না। যখন আমরা বায়োপসি করছি তখন দেখা যাচ্ছে এটা যক্ষ্মা। অনেকে মনে করেন, যক্ষ্মা শুধু ফুসফুসেই হয়। তা কিন্তু না, এটা ব্রেস্টে বা স্তনেও হতে পারে।

আরেকটা হতে পারে ইনফেক্টিভ কারণে। দেখা যাচ্ছে, বাচ্চার মুখ থেকে ইনফেকশনের মাধ্যমে নিপল থেকে মায়ের স্তনে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া ছড়িয়ে যায়। তখন সেখানে অ্যাবসিস বা ফোড়ার মতো হয়ে যায়। এটা খুব ব্যাথাদায়ক এবং এটাকে জরুরি চিকিৎসা করাতে হয়। এরপরে রোগীকে অ্যান্টিবায়োটিক দিলে দেখা যায় ভালো হয়ে যায়।

আরেকটা কারণে হতে পারে, প্যাজেটস ডিজিজ। এই রোগে প্রথমে চামড়ায় পরিবর্তন আসে। প্রথমত, স্তনের ত্বকে এক্সিমা বা এক্সুলকানি শুরু হয়। তারপর আস্তে আস্তে অ্যারিওলা বা অনেকসময় নিপলও আক্রান্ত হয়ে যায়। এনাটমিটা বা শেপটা পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়। অনেকসময় নিপলটা খুলে যায় বা পড়ে যায়। এই চুলকানি চলাকালীন সময়ে দেখা যায়, নিপল দিয়ে কষজাতীয় পদার্থ বের হচ্ছে এবং অ্যাক্সিলাতে হঠাৎ করেই একটা চাকা পাওয়া যাচ্ছে। স্তনেও একটা চাকা পাওয়া যাচ্ছে। কারণ, এটা প্যাজেটস ডিজিজ অব নিপল আন্ড অ্যারিওলা এন্ড ব্রেস্ট। সেখান থেকে এডভান্স লেভেলে গিয়ে স্তন ক্যান্সারে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।

প্রথমদিকে দেখা যায়, রোগীরা দুশ্চিন্তায় পড়েন স্তনের ত্বকের চিকিৎসক বা বিশেষজ্ঞের কাছে যাওয়া নিয়ে। এভাবে স্টেরয়েড নিচ্ছে কিন্তু কাজ হচ্ছে না এবং একটা পর্যায়ে স্তনে চাকা নিয়ে আমাদের কাছে আসছে। এটা খুব মারাত্মক একটা রোগ। তবে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এই রোগের রোগীরা শেষ পর্যায়ে আমাদের কাছে আসেন।

আরেকটা কারণ হচ্ছে গ্যালাক্টোসিল। একজন মা হয়তো অনেকদিন ধরে বাচ্চাকে ব্রেস্ট ফিড করাচ্ছেন না। দেখা গেলো দুধ জমে জমে সেখানে গ্যালাক্টোসিল হয়ে গেছে। অথবা প্রোল্যাক্টিং হরমোন বেড়ে গেলেও এটা গ্যালাক্টোসিলে পরিণত হয়।

এছাড়া ম্যালিগনেন্ট ছাড়াও ক্ষতিকর নয় এমন কারণেও স্তনে চাকা হতে পারে। যেমন, ফাইব্রাঅ্যাডিনোমা, ফাইব্রোসিস্টিক রোগ। দেখা যাচ্ছে, রোগীরা অনেকসময় ভয় পেয়ে এসে বলেন, আমার স্তনে অনেকগুলো চাকা। আমার কি ক্যান্সার হয়েছে? তখন আমরা দুইটা কারণে খুশি হয়ে থাকি। এক হচ্ছে রোগীর সচেতনতার জন্যে আর আরেকটা হচ্ছে অনেকগুলো চাকা মানে এটা ক্যান্সার না। একটা চাকা থাকলে এবং ব্যাথা না থাকলে সেটা বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার হয়ে থাকে।

সুতরাং, স্তনে চাকা হলে আপনারা লজ্জা পাবেন না। অবশ্যই আপনার নিকটস্থ চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। সম্ভব হলে একটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করিয়ে ফেলুন।

 

সহযোগী অধ্যাপক, সার্জিক্যাল অনকোলজি বিভাগ

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়


আরও দেখুন: