কুসুমসহ ডিম কেন খাবেন, কী কী আছে এতে?
শিশুদের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়ানো উচিত
ডিম খাওয়া না খাওয়া নিয়ে তুমুল বিতর্ক রয়েছে। কেউ বলেন- প্রতিদিন ডিম খাবেন, কেউ বলেন- একদম ডিম খাবেন না, ডিম খেলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে, আর কেউ বলেন- ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশ খাবেন, আবার কেউ বলেন- সপ্তাহে বেশি হলে দুটো ডিম খাবেন।
আমার প্রশ্ন হল, ডিম খাওয়া নিয়ে সমস্যা কী!
প্রতিদিন একটি করে ডিম খেলে কী হয়? কোলেস্টেরল ও মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে, মানুষ মারা যায়? সবক্ষেত্রে এমন ধারণা সঠিক নয়। তবে যেসব রোগীদের চিকিৎসকরা ডিম খেতে বারণ করেন তাদের কথা ভিন্ন।
স্বাভাবিক হিসেবে ডিম আর দুধকে বলা হয় আদর্শ খাবার। আপনারা কি জানেন ডিমে কি কি আছে? বলি শুনুন।
ডিমে আছে- প্রোটিন, উপকারি ফ্যাট, কার্বোহাইড্রেট, কোলেস্টেরল (১০০ গ্রামে ৩৭৫ মিগ্রা), ভিটামিনের মধ্যে নিয়াসিন, রাইবোফ্ল্যাভিন, প্যান্টোথেনিক অ্যাসিড, থায়মিন, পিরিডক্সিন, ফোলিক অ্যাসিড, ভিটামিন বি১২, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, ভিটামিন ডি, লিউটিন, জিয়াজেন্থিন, খনিজের মধ্যে রয়েছে- ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফোরাস, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, কপার, সেলেনিয়াম, ফ্যাটি অ্যাসিডের মধ্যে আছে- অলিক অ্যাসিড, লিনোলিক অ্যাসিড, লিনোলেনিক অ্যাসিড, আইকোসাপেন্টাইনোয়িক অ্যাসিড, ডকোহেক্সাইনোয়িক অ্যাসিড, পালমিটিক অ্যাসিড, স্টিয়ারিক অ্যাসিড, আরাচিডোনিক অ্যাসিড এবং ২০ টি গুরুত্বপূর্ণ অ্যামিনো অ্যাসিড, যা ছাড়া শরীরে প্রোটিন তৈরি হয় না।
এখন বলুন কোন খাবারে এতগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে? কোন উপাদানটি শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয় বা ক্ষতিকর? কোলেস্টেরল? কোলেস্টেরল শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারি যৌগ।
ডিম থেকে কোলেস্টেরল না নিলেও শরীর গ্লুকোজ বা অন্যান্য উৎস থেকে ঠিকই প্রয়োজন মতো পর্যাপ্ত কোলেস্টেরল সংশ্লেষণ করে নেবে। কোলেস্টেরলের মূল উৎস কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, যা থেকে শরীর ৮৫ - ৯০ শতাংশ কোলেস্টেরল সিন্থেসাইজ করে এবং ১০-১৫ শতাংশ কোলেস্টেরল আসে কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার থেকে। তাই আমাদের শর্করা কম খেয়ে কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাওয়া উচিত।
কোলেস্টেরল শরীরের জন্য এক বিশেষ উপকারি রাসায়নিক উপকরণ। আমাদের মস্তিষ্কের ২৫ শতাংশ কোলেস্টেরল। আমাদের শরীরের প্রায় ৩৭ ট্রিলিয়ন সেলের সেলওয়াল বা কোষ প্রাচীর তৈরির জন্য দরকার কোলেস্টেরল। সুতরাং বুঝতেই পারছেন কী পরিমাণ কোলেস্টেরল প্রয়োজন হয় শরীর গঠনে।
এ ছাড়া ভিটামিন ডি, টেস্টোস্টেরন, প্রজেস্টেরন, ইসট্রোজেনসহ আরো অনেকগুলো অত্যাবশ্যকীয় হরমোন প্রস্তুত হয় কোলেস্টেরল থেকে। হজমের জন্য বাইল তৈরিতে কোলেস্টেরলের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। এছাড়াও কোলেস্টেরলের আরো বহু কার্যকারিতা রয়েছে শরীরে।
কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ খাবার খেলে গ্লুকোজ বা অন্যান্য উৎস থেকে কোলেস্টেরল সংশ্লেষণ কম হবে। সেজন্য ডিম, দুধ, পনির, মাখন, কলিজা, মগজ, মাছ, মাংসের মতো কোলেস্টেরলসমৃদ্ধ সব খাবারই খাবেন। তবে পরিমিত। শুধু শর্করা বা চিনি এবং চিনি ভর্তি খাবার বর্জন করবেন, না হয় একদম কম খাবেন।
মনে রাখবেন, আপনার শরীরে বেশিরভাগ রোগ সৃষ্টির মূল কারণ অত্যাধিক কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া। তার মধ্যে চিনি ও চিনিজাতীয় খাবার হলো সবচেয়ে খারাপ। সেজন্য চিনিকে বলা হয় সুইট পয়জন বা হোয়াইট পয়জন।
শাকসবজি, ফলমূল এবং আঁশসমৃদ্ধ খাবার বেশি খাবেন আর ব্যায়াম করবেন। তবে ডায়াবেটিসের রোগীরা গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড বেশি এমন ফল বেশি খাবেন না। আরো মনে রাখবেন- সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্যাভ্যাসের কোনো বিকল্প নেই। খাদ্যাভ্যাস ও লাইফস্টাইল পরিবর্তন করলে আপনি অসুস্থ হবেন না, চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে না এবং ওষুধেরও প্রয়োজন হবে না। ভাবুন তো এতে আপনার কত কষ্ট ও টাকা বেঁচে যাবে!
আর একটি কথা।
দুধ ছাড়াও শিশুদের প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়াতে ভুলবেন না।