প্রসবজনিত ফিস্টুলা প্রতিরোধে করণীয়
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. নাজমা হক।
ফিস্টুলা রোগের মধ্যে প্রসবজনিত ফিস্টুলা অন্যতম। এছাড়া অপারেশনে ত্রুটির কারণেও গাইনোকোলোজিক্যাল ফিস্টুলা হতে পারে। প্রসবজনিত ফিস্টুলা সেই সব মায়েদের হয়, যাদের বাচ্চা প্রসব হতে দীর্ঘ সময়ে লেগে যায়।
প্রসবে বাধা পেয়ে বাচ্চার মাথা দীর্ঘ সময় আটকে থেকে প্রসব থলির টিস্যুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে এক ধরনের ক্ষত তৈতি করে। এই ক্ষত একসময় ছিদ্র হয়ে প্রস্রাব ঝরতে থাকে।
মায়েদের দীর্ঘায়িত সন্তান প্রসবের আট থেকে নয় দিন পর মূলত এ ধরনের প্রস্রাব ঝরতে থাকে। এই ফিস্টুলা রোগ ব্যক্তিগত হলেও এর কারণে পারিবারিক এবং সামাজিক নানাবিধ সমস্যা তৈরি হয়। অনেক সময় এই রোগে আক্রান্ত নারীর জীবন অনেক বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
এই রোগ হওয়া থেকে মুক্তির জন্য এন্টিনেটাল চেকআপের সময়েই চিহ্নিত করতে হবে। গর্ভাবস্থায় বাচ্চার অবস্থান সুবিধাজনক না হলে আলাদা ব্যবস্থা নিতে পারলে এই সমস্যা থেকে অনেকটাই সমাধান সম্ভব।
সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে যোনীপথে বাচ্চার মাথা বের হওয়ার জন্য যাদের যথেষ্ট জায়গা না পায়। এজন্য হাসপাতালে বাচ্চা প্রসব করানো হলে পাটোগ্রাফির মাধ্যমে মনিটর করে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়। এসময় প্রয়োজনে সিজারিয়ান সেকশনের জন্য নেওয়া হয়।
ডেলিভারির সময় ফিস্টুলা হওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যখন বাচ্চার মাথা এবং পেলভিক বোর্নের মাঝখানে মুত্রথলিতে চাপ লাগে। মুত্রথলিতে যাতে চাপ না লাগে এজন্য প্রয়োজনে সিজার করালে এই সমস্যা হয় না।
যাদের বাচ্চা সহজে চলে আসতে পারে, তাদের কখনোই এই রোগ হবে না। এই রোগে সাধারণত প্রস্রাব ঝরে থাকে। অন্য কোনো অঙ্গ এর দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। কিন্তু প্রস্রাব ঝরার কারণে এর বিড়ম্বনায় মানসিক যন্ত্রণায় ভোগেন নারীরা। ওই নারী পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হয়।
বাংলাদেশে অনেকগুলো হাসপাতালে এরই মথ্যে এই রোগের চিকিৎসা দিচ্ছে। এই রোগের চিকিৎসায় ঢাকা মেডিকেল কলেজে ২০০৩ জাতীয় ফিস্টুলা সেন্টার নামে একটি আলাদা বিভাগ চালু হয়েছে।
লেখক: অধ্যাপক ডা. নাজমা হক
বিভাগীয় প্রধান, প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিভাগ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।