কিডনি রোগ নিয়ে যা জানা জরুরি
ছবি : সংগৃহীত
কোনো উপসর্গ নেই। অথচ কিডনি রোগ আছে- এমন হতে পারে। কখনো কখনো এমন হয়, একজন ব্যক্তি ইন্সুরেন্স বা বিদেশ যেতে মেডিকেল চেকআপে গিয়ে জানতে পারছেন, তার কিডনি রোগ আছে।
কারও কারও বংশগত কিডনি রোগের সূত্র ধরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে সত্যিই রোগটি পাওয়া যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অন্য রোগের জন্য হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় রোগটি ধরা পড়ে। এর সবই হলো, উপসর্গহীন কিডনি রোগ।
আবার বিভিন্ন উপসর্গ নিয়েও কিডনি রোগ প্রকাশ পায়। যেমন, ঘনঘন প্রস্রাব হওয়া, প্রস্রাবের সময় জ্বালা-পোড়া, যন্ত্রণা হওয়া, প্রস্রাব কম হওয়া, গাঢ় বর্ণের প্রস্রাব হওয়া, মেরুদণ্ডের দুই পার্শ্বে কিডনির অবস্থানের জায়গায় ব্যথা হওয়া, কাঁপুনি দিয়ে জ্বর আসা, শরীর ফুলে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট হওয়া, ক্ষুধামন্দা, বমি, শরীরে চুলকানি, গায়ে ব্যথা ইত্যাদি উপসর্গ নিয়েও কিডনি রোগ প্রকাশ পায়। আবার শুধুমাত্র প্রস্রাবের সাথে অ্যালবুমিন যাওয়া, প্রস্রাবে লোহিত রক্ত কণা যাওয়া বা উচ্চ রক্তচাপ হিসেবেও কিডনি রোগের প্রকাশ ঘটতে পারে। একটি বিষয় মনে রাখা দরকার, কিডনির কর্মক্ষমতা ৫০ শতাংশ নষ্ট হলেই রক্তের ক্রিয়াটিনিন বাড়া শুরু হয়। আর ৭০ শতাংশের বেশি কর্মক্ষমতা নষ্ট হলে উপসর্গগুলো প্রকাশ পায়।
কিডনি বিভিন্নভাবে রোগাক্রান্ত হতে পারে। কিডনির কিছু কিছু রোগ আছে, যেগুলো বংশগত। আবার কিছু রোগ আছে, যেগুলোতে প্রাথমিকভাবে কিডনি নিজেই রোগাক্রান্ত হয়। আবার কিছু রোগ আছে, যেগুলোতে প্রাথমিকভাবে সুস্থ কিডনি ওই সব রোগের প্রভাবে রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ে।
কিডনি রোগের ধরন
১. উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কিডনি রোগ ডায়াবেটিসজনিত
২. উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যাতেও কিডনি রোগ দেখা দেয়
৩. নেফ্রাইটিস
৪. কিডনি বা মূত্রনালির সংক্রমণ
৫. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত কিডনি রোগ
৬. আকস্মিক কিডনি বিকল (AKI) ও ক্রনিক কিডনি ডিজিজ (CKD)
একটি কথা মনে রাখা ভালো, সুস্থ থাকা অবস্থায় আমরা দুটি কিডনির অস্তিত্ব টের পাই না। কিন্তু কিডনি একবার অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা সুস্থ থাকার জন্য কিডনির ভূমিকা পদে পদে টের পাই।
সাধারণভাবে কিডনি রোগ শনাক্তের উপায়
অল্প কয়েকটি পরীক্ষা করে বেশিরভাগ কিডনি রোগ শনাক্ত করা যায়। যেমন,
১. প্রস্রাবে অ্যালবুমিন ও রক্তের ক্রিয়াটিনিন পরীক্ষা করা
২. কিডনির আল্ট্রাসনোগ্রাফি
এসব পরীক্ষা কাদের করা উচিত
১. যাদের বয়স ৫০ বছরের বেশি
২. যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে
৩. যাদের পরিবারে কিডনি রোগী আছে
৪. যাদের কোনো উপসর্গ আছে
৪. ধূমপায়ীদের
৫. স্থূলকায় দেহের অধিকারীদের
কিডনি রোগের চিকিৎসা ও প্রতিকার
সময় মতো চিকিৎসা না করালে ক্রনিক কিডনি ডিজিজ হয়ে যেতে পারে। কয়েক ধরনের নেফ্রাইটিস আছে, যেগুলোতে সঠিক সময় সঠিক চিকিৎসা দেওয়া গেলে সম্পূর্ণ নিরাময় সম্ভব। এজন্য কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ নেফ্রোলজিস্টের শরণাপন্ন হতে হবে এবং উপযুক্ত চিকিৎসা নিতে হবে।
সাধারণভাবে আমরা ধারণা করে থাকি, কিডনির যে কোনো অসুখ হলে পানি বেশি করে পান করতে হবে। কিন্তু নেফ্রাইটিস রোগে প্রস্রাব কমে যায় এবং শরীরে পানি জমে যায়, পা ফুলে যায় এবং এক পর্যায়ে সমস্ত শরীর ফুলে যায়। এমনকি পেট ও ফুসফুসেও পানি জমে। এর ফলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এমতাবস্থায় পানি বেশি পান করলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
এসব ক্ষেত্রে করণীয়
১. পরিমিত পানীয় পান করতে হবে
২. চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাদ্য গ্রহণ, বিশেষ করে লবণ কম খেতে হবে
৩. চিকিৎসকরা এ সময়ে সাধারণত ক্রুসেমাইড জাতীয় ওষুধ ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন, যা শরীরের বাড়তি পানি প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দিতে সাহায্য করে।