চোখের জীবাণুরোধী পানি শুকানোর কারণ ও প্রতিকার কী?
ছবি: সংগৃহীত
চোখের ওপর চোখের পানির একটা পাতলা আস্তরণ আছে। এই পানি চোখ সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। জল, তেল, পিচ্ছিল মিউকাস আর জীবাণুরোধী অ্যান্টিবডি দিয়ে তৈরি এই চোখের পানি।
চোখ শুকিয়ে হয়ে পড়লে খচখচে, অস্বস্তিকর অনুভূতি হয়। কখনো চোখ জ্বালাপোড়াও করতে পারে। চোখের কর্নিয়ার সামনে পাতলা তরলের একটি স্তর থাকে। প্রতিবার চোখের পলক পড়ার সময় এ তরলটি চোখের পুরো অংশে ছড়িয়ে পড়ে। চোখের সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় নানান উপাদানসমৃদ্ধ এ তরল অংশ কোনো কারণে কমে গেলে চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। তখনই এসব সমস্যা দেখা দেয়।
এ সমস্যায় সাধারণত কৃত্রিম চোখের পানি চোখের ড্রপ হিসেবে ব্যবহার করতে হয়।
চোখের পানি শুকিয়ে যায় কেন?
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আই হসপিটালের কনসালট্যান্ট ও কর্নিয়া রিফ্লেক্টিভ ফ্যাকো অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. মাসুদুর রহমান ডক্টর টিভিকে বলেন, বর্তমানে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার প্রধানতম কারণ প্রধানত চারটি। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে, বর্তমানে টেকনোলজির যুগে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের ব্যবহার। এছাড়া চোখের যে গ্রন্থি থেকে পানি তৈরি সেখানে সমস্যার কারণে হতে পারে।
এর বাইরে শারীরিক কিছু কারণ আছে যেমন, ডায়াবেটিস, বাত রোগ, থাইরয়েড জনিত সমস্যার কারণে হতে পারে। এছাড়া পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়ষ্ক নারীদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চতুর্থ কারণ হচ্ছে কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে।
এছাড়া প্রাকৃতিক কিছু কারণেও হতে পারে। যেমন বাতাসে আদ্রতা কম থাক, সেক্ষেত্রে শীতকালে শুষ্কতার লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়। এছাড়া পরিবেশের কালো ধোঁয়া এবং বায়ুদূষণ অন্যতম একটি কারণ। এর বাইরে কেমিক্যাল কন্টাক্ট বা কেমিক্যাল কারখানায় বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করলেও এমন সমস্যা হতে পারে।
এ রোগের প্রতিকার সম্পর্কে জানতে চাইলে, ডা. মাসুদুর রহমান বলেন, প্রাথমিক ভাবে ড্রাই আই থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমে কম্পিউটা বা স্মার্টফোনের ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হব। দীর্ঘক্ষণ এইসব ডিভাইস ব্যবহার করতে হলে ২০/২০ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে ২০ মিনিট মনিটর বা স্মার্ট ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড চোখ কে বিশ্রাম দেওয়া। এসময় কমপক্ষে ২০ ফিট দুরত্বে তাকিয়ে থাকা। মাঝে মাঝে চোখের পাতা নামানো। যতটা সম্ভব বায়ুদূষণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা। এমন কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
আর এতে যদি সমাধান না হয়, তাহলে প্রথমত আমরা মূল সমস্যা নিরূপণ করি। এর পরে দুই ধরনের চিকৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু ওষুধ এর মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। দুই ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। মুখে খাবার ওষুধ এবং চোখের ড্রপ। এর সমস্যা খুব বেশি হলে প্রয়োজন হলে সার্জারি করা লাগতে পারে। এছাড়া রক্তরস থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি ড্রপ থেকেও এর চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।
তিনি আরও বলেন, চোখের শুষ্কতাকে অবহেলা করবেন না। শুষ্ক চোখে জীবাণুর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এ ছাড়া মূল রোগের চিকিৎসা প্রয়োজন।