কম্পিউটার, স্মার্টফোন ব্যবহারে বাড়ছে শুষ্ক চোখের ঝুঁকি

সাক্ষাৎকার গ্রহণ ডা. কে জান্নাত
2021-03-07 04:18:31
কম্পিউটার, স্মার্টফোন ব্যবহারে বাড়ছে শুষ্ক চোখের ঝুঁকি

চোখের ভিতরে থাকা পানি চোখ সুস্থ রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। বিভিন্ন কারণে চোখের পানি শুকিয়ে যায়। চোখ শুকিয়ে গেলে অনেকগুলো সমস্যা তৈরি হয়। চোখের বিভিন্ন সমস্যা এবং সমাধান বিষয়ে ডক্টর টিভির নিয়মিত আয়োজন ‘দৃষ্টি আলাপন’ অনুষ্ঠানে ‘শুষ্ক চোখ, কারণ ও প্রতিকার’ বিষয়ে আলোচনা করেছেন দৃষ্টি আই হসপিটালের কনসালট্যান্ট ও কর্নিয়া রিফ্লেক্টিভ ফ্যাকো অ্যান্ড ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা. মো মাসুদুর রহমান।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. কে জান্নাত।

ডক্টর টিভি: শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আই বলতে আমরা কী বুঝি?

ডা. মাসুদুর রহমান: চোখের নিয়মিত কাজগুলো সঠিকভাবে সম্পুর্ণ করতে চোখে নির্দিষ্ট পরিমাণ পানি থাকে। দুই কারণে সেই পানি কমে যেতে পারে। প্রথমত, যে পরিমাণ পানি সেখানে তৈরি হওয়ার কথা সেই পরিমাণ পানি চোখে তৈরি না হওয়া, অথবা যে পারিমাণ পানি তৈরি হচ্ছে তার চেয়ে বেশি পানি বের হয়ে যাওয়া। এই দুই কারণেই মূলত চোখ শুকিয়ে যায়।

ডক্টর টিভি: শুষ্ক চোখের লক্ষণগুলো কী?

ডা. মাসুদুর রহমান: প্রথম লক্ষণ হচ্ছে চোখ জ্বালাপোড়া করে। এর বাইরে অন্যা কারণগুলো হচ্ছে চোখ প্রায় সমই লাল হয়ে যাওয়া, চোখে পানি কম তৈরি হওয়া। ফলে বালু জাতীয় কিছু পড়লে যেমন লাগে ঠিক তেমন লাগে। প্রাথমিক ভাবে বিশেষ আলোতে চোখ দেখে শনাক্ত করা যায়। এর বাইরে অত্যাধুনিক কিছু যন্ত্র আছে যেমন, ড্রাই আই অ্যানালাইজার দিয়ে সহজে বোঝা যায় চোখে কতটুকু পানি আছে।

ডক্টর টিভি: শুষ্ক চোখ কী কারণে হয়ে থাকে?

ডা. মাসুদুর রহমান: বর্তমানে চোখ শুকিয়ে যাওয়ার প্রধানতম কারণগুলো হচ্ছে চারটি। এর মধ্যে সবচেয়ে সাধারণ কারণ হচ্ছে, বর্তমানে টেকনোলজির যুগে কম্পিউটার, ল্যাপটপ, স্মার্টফোনের ব্যবহার। এছাড়া চোখের যে গ্রন্থি থেকে পানি তৈরি সেখানে সমস্যার কারণে হতে পারে। এর বাইরে

শারীরিক কিছু কারণ আছে যেমন, ডায়াবেটিস, বাত রোগ, থাইরয়েড জনিত সমস্যার কারণে হতে পারে। এছাড়া পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়ষ্ক নারীদের এই সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। চতুর্থ কারণ হচ্ছে কিছু ওষুধের প্রতিক্রিয়ার ফলে হয়ে থাকে। এছাড়া প্রাকৃতিক কিছু কারণেও হতে পারে। যেমন বাতাসে আদ্রতা কম থাক, সেক্ষেত্রে শীতকালে শুষ্কতার লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়। এছাড়া পরিবেশের কালো ধোঁয়া এবং বায়ুদূষণ অন্যতম একটি কারণ। এর বাইরে কেমিক্যাল কন্টাক্ট বা কেমিক্যাল কারখানায় বা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করলেও এমন সমস্যা হতে পারে।

ডক্টর টিভি: এই রোগের প্রতিকারগুলো কী?

ডা. মাসুদুর রহমান: প্রথমত আমরা সমস্যা নিরূপণ করি। এর পরে দুই ধরনের চিকৎসা দেওয়া হয়ে থাকে। কিছু ওষুধ এর মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধান করা যায়। দুই ধরণের ওষুধ ব্যবহার করা হয়। মুখে খাবার ওষুধ এবং চোখের ড্রপ। এর সমস্যা খুব বেশি হলে প্রয়োজন হলে সার্জারি করা লাগতে পারে। এছাড়া রক্তরস থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরি ড্রপ থেকেও এর চিকিৎসা দেওয়া হয়ে থাকে।

ডক্টর টিভি: শুষ্ক চোখের চিকিৎসায় প্রতিবন্ধকতাগুলো কী ?

ডা. মাসুদুর রহমান: এই চিকিৎসায় প্রধান প্রতিবন্ধকাত হচ্ছে বয়সের কারণে কিছু জটিলতা হতে পারে। এছাড়া কিছু ওষুধের এ্যালার্জিগত প্রতিক্রিয়া থেকেও সমস্যা হতে পারে। অনেক ছোটো ছোটো বাচ্ছা রোগী আমাদের কাছে আসে। তাদের প্রধানতম কারণ হচ্ছে অধিক সময় স্মার্টফোন ব্যাবহার করা। এজন্য নিয়ম অনুযায়ী কিছু চিকিৎসা এবং আমাদের দৈনন্দিন কাজের ক্ষেত্রে ভারসাম্য নিয়ে আসেত পারেলে এই সমস্যা সমাধান হতে পারে।

ডক্টর টিভি: শুষ্ক চোখ বা ড্রাই আইয়ের প্রতিকার গুলো কী?

ডা মাসুদুর রহমান: ড্রাই আই থেকে রক্ষা পেতে হলে প্রথমে কম্পিউটা বা স্মার্টফোনের ব্যবহারে সতর্ক থাকতে হব। দীর্ঘক্ষণ এইসব ডিভাইস ব্যবহার করতে হলে ২০/২০ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এর অর্থ হচ্ছে ২০ মিনিট মনিটর বা স্মার্ট ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকার পর কমপক্ষে ২০ সেকেন্ড চোখ কে বিশ্রাম দেওয়া। এসময় কমপক্ষে ২০ ফিট দুরত্বে তাকিয়ে থাকা। মাঝে মাঝে চোখের পাতা নামানো। যতটা সম্ভব বায়ুদূষণ থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করা। এমন কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে ড্রাই আই বা শুষ্ক চোখের সমস্যা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।


আরও দেখুন: