গ্লুকোমা রোগে চোখের দৃষ্টিশক্তি ফেরৎ আনা যায় না
ফাইল ছবি
গ্লুকোমা চোখের একটি মারাত্মক রোগ। বড়দের পাশাপাশি শিশুদেরও এই রোগ হতে পারে। অনেক সময় জন্মের পরপরই শিশুদের এই রোগটি ধরা পারে। তবে সঠিক সময়ে রোগটি নির্ণয় করে চিকিৎসা করালে ভয়ের কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন ও অপারেশন করলে পুরোপুরি সুস্থ হয় রোগীরা। গ্লকোমা রোগ সম্পর্কে ডক্টর টিভির সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন ইস্পাহানী ইসলামিয়া আই ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালের গ্লুকোমা বিভাগের প্রধান ও ফ্যাকো সার্জন ডা. মো. জাফরুল হাসান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম
ডক্টর টিভি: গ্লুকোমা রোগের লক্ষণগুলো কী কী?
ডা. জাফরুল হাসান: গ্লকোমা দুই ধরনের। প্রাইমারি গ্লকোমা এবং সেকেন্ডারি গ্লকোমা। প্রাইমারি গ্লকোমাতে চোখে এক ধরনের চাপের ফলে অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। এই চোখের চাপ হচ্ছে, আমাদের চোখের ভিতরে পানির প্রবাহ আছে। চোখের ভিতরে দুইটা চেম্বার আছে, পেছনের চেম্বার থেকে পানি এসে সামনের চেম্বারে ড্রেন হচ্ছে। এর ফলে চোখের ভেতর একটা চাপ সৃষ্টি করে। এই ক্ষেত্রে কিছু কিছু সময় উপসর্গ বা লক্ষণ রোগীরা বুঝতে পারে না। আবার কিছু কিছু সময়ে রোগীরা বুঝতে পারে হাঁটা-চলার সময় যেকোন এক চোখে তারা কম দেখেন। তখন তারা চোখের পাওয়ার চেক করতে আসেন। আমরা চোখের পাওয়ার চেক করে দেখি, তার অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
আবার চোখের তীব্র ব্যথা নিয়ে রোগীরা আসেন। হঠাৎ করে তাদের চোখের ভিশন কমে যায়। আর বাচ্চাদের ক্ষেত্রে লক্ষণ হচ্ছে, চোখের মনি বড় হয়ে যাওয়া, হঠাৎ করে চোখে ঝাপসা দেখা, চোখে পানি চলে আসা। এ রকম অনেক ধরনের লক্ষণ নিয়েই রোগীরা আমাদের কাছে আসেন।
ডক্টর টিভি: শিশুদেরও গ্লকোমা হয় কিনা?
ডা. জাফরুল হাসান: অবশ্যই বাচ্চাদের ক্ষেত্রেও গ্লকোমা হয়ে থাকে। মায়ের গর্ভ থেকেও গ্লকোমা হতে পারে, সেটাকে আমরা কনজেনিটাল গ্লকোমা বলে থাকি। আরেকটা হল জন্মের পর তিন বছরের পর থেকে গ্লকোমা হতে পারে। আর সেটাকে ডেভলপমেন্ট গ্লকোমা বলা হয়। আরেকটা হচ্ছে আঘাতজনিত গ্লকোমা। যেমন শিশুরা খেলতে গিয়ে চোখে আঘাত লাগা, যেকোনো দুর্ঘটনায় চোখে আঘাত লাগা। আর এসব আঘাতের ফলে গ্লকোমা রোগ হতে পারে। এটাকে সেকেন্ডারি গ্লকোমা বলা হয়।
ডক্টর টিভি: গ্লকোমা চিকিৎসা না নিলে কী ধরণের ক্ষতি হতে পারে?
ডা. জাফরুল হাসান: অন্ধত্বের দ্বিতীয় প্রধান কারণ হচ্ছে গ্লকোমা। গ্লকোমার ব্যাপারে সচেতন হওয়া প্রয়োজন এজন্য যে, গ্লকোমার ফলে দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী পরিবর্তন হয়ে যায়। গ্লকোমা রোগে চোখের প্রেসারের ফলে চোখের অপটিক্যাল নার্ভ নষ্ট হয়ে যায়। আর এটা হলো স্থায়ীভাবে নষ্ট হওয়া। যেটা চিকিৎসার পরও ক্ষতিপূরণ করা যায় না।
গ্লকোমা রোগের ফলে চোখের দৃষ্টিশক্তি কমে যাবে, সেটা আর ফেরৎ আনা যায় না। তাই গ্লকোমা রোগ সঠিক সময় নির্ণয় করে চিকিৎসা করা খুবই জরুরি।