শিশুদের ক্যান্সার: সুস্থ হবার পরেও চিকিৎসকের তদারিকে থাকতে হবে

মেহনাজ রহমান
2021-04-25 14:32:17
শিশুদের ক্যান্সার: সুস্থ হবার পরেও চিকিৎসকের তদারিকে থাকতে হবে

ফাইল ছবি

শিশুদের ক্যান্সার নানা সময় রূপ বদল করে। নিয়মিত চিকিৎসা আর ডাক্তারের পরামর্শের মধ্যে না থাকলে ঝুঁকি থেকে যায় জীবননাশের। আমাদের দেশেই ক্যান্সারের চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হচ্ছে শিশুরা। ক্যান্সারের চিকিৎসার নানা দিক নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা হয় জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের শিশু রক্তরোগ ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ সহকারী অধ্যাপক ডা. রাশেদ জাহাঙ্গীর কবীরের সঙ্গে।  সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহনাজ রহমান

ডক্টর টিভিঃ শিশুদের ব্লাড ক্যান্সার, ব্রেন ক্যান্সার, লিম্পুমা, রেটিনো ব্লাস্টুমা, নিউরো ব্লাস্টুমা, পুলিস্টুমার ক্যান্সার হয়। এসবের চিকিৎসা পদ্ধতি কি রকম?

অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরঃ একেকটা ক্যান্সারের চিকিৎসা একেক রকম। আমি রেটিনো ব্লাস্টুমার কথা বলি। প্রথমে ব্যক্তি চোখের ডাক্তারের কাছে যাবে। চোখের ডাক্তার ডায়াগনোসিস করবে। যদি অপারেশনের মতন হয়, তাই করবে। আর তা না হলে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দিবে। আমরা কোমোথেরাপি দিব এবং পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে অপারেশনের জন্য আবার আমরা চোখের ডাক্তারের কাছে পাঠাব। তখন রেডিওথেরাপি প্রয়োজন হলে দিব। এরকম প্রতিটি ক্যান্সারের তিনটা গ্রুপ আছে। একটা কোমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি ও সার্জারি। একেকটা রোগী একেক ভাবে আসে। কোনো সময় সার্জারি আগে লাগে অথবা   আগে লাগে কখনো রেডিওথেরাপি আগে লাগে। কারো হয়তো কোনটাই লাগেনা। কিন্তু  কোমোথেরাপি সবারই লাগে।

ডক্টর টিভিঃ চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার রোগী ভালো হবার পরেও তার ওষুধের মধ্যে থাকতে হবে?

অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরঃ কোমোথেরাপির একটা পদ্ধতি থাকে। এটা শেষ করে পরবর্তীতে উন্নতি হলে রোগীকে আমরা পাঁচ বছর তদারকিতে রাখি। এই পাঁচ বছর নিয়মিত আমাদের কাছে আসবে এবং পরীক্ষা করাতে হবে। তারপর যদি সে একদম ভালো থাকে, পাঁচ বছর কোনো সমস্যা না হয়, তখন তাকে আমরা ঘোষণা দিবো রোগী এখন ক্যান্সার মুক্ত।

ডক্টর টিভিঃ ক্যান্সার মুক্ত হবার পরেও শিশুদের ক্ষেত্রে পরবর্তীতে আবারো আক্রান্ত হবার ঝুঁকি রয়েছে?

অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরঃ সেটা তো থেকেই যায়। কারণ, ক্যান্সারের মধ্যে কিছু ড্রাগস আছে, কিছু রেডিয়েশন আছে। এখানে ক্যান্সারের জন্য আমরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করি, সেসব ওষুধের কারণে অনেক সময় আবারো ক্যান্সার হতে পারে। দেখা যায়, রোগী হয়তো একটা ক্যান্সার থেকে ভালো হল, কিন্তু দশ পনের বছর পরে সে আরেকটা ক্যান্সার নিয়ে আসতে পারে। আবার রেডিয়েশনের জন্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে ক্যান্সার হতে পারে। তবে এটা সবার হবে এরকম না, দুই একজনের হতে পারে।

ডক্টর টিভিঃ ক্যান্সার কোন পর্যায়ে গেলে শিশুদের নিয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে?

অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরঃ ক্যান্সারের লক্ষ্মণ দেখা মাত্রই ও কোন চিকিৎসক যদি বলে ক্যান্সারের মতন মনে হচ্ছে, তখনই শিশুকে নিয়ে চিকিৎসকের ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। তাহলে আমরা বাচ্চাদের ক্যান্সারকে অনেকটা তাড়াতাড়ি ভালো করতে পারব।

ডক্টর টিভিঃ আমাদের দেশে ক্যান্সারের আধুনিক চিকিৎসা করা হচ্ছে। তাহলে এ রোগের চিকিৎসার জন্য বিদেশে যান কেনো অনেকে?

অধ্যাপক ডাঃ জাহাঙ্গীর কবিরঃ আমাদের দেশের হাসপাতালে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য সব ধরণের সুযোগ সুবিধা আছে। আমাদের হাসপাতালেই প্রচুর রোগী আছে। তারা চিকিৎসাও পাচ্ছে, ভালোও হচ্ছে। হয়তো খুব অল্প পরিমাণে রোগী যাচ্ছে, যারা বিদেশে যাচ্ছে। দু’এক বছর পরে ক্যান্সারের চিকিৎসার জন্য আর কেউ বিদেশে যাবেনা। আমাদের দেশেই সব সম্ভব। ইতোমধ্যে আমাদের দেশে সবধরনের ক্যান্সারের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অনুলিখন: আজাদ আশরাফ


আরও দেখুন: