মেয়েদের মাসিকের সময় হার্ট অ্যাটাক কম হয়
প্রতীকি ছবি
হার্ট অ্যাটাক শরীরের মারাত্মক ও জটিল রোগগুলোর মধ্যে অন্যতম হার্ট অ্যাটাক। এ রোগটির ভয়াবহতা কিংবা আকস্মিকতায় কী পদক্ষেপ নেওয়া উচিত তা অনেকেই বুঝে উঠতে পারেন না। হার্ট অ্যাটাকের কী কী জরুরি চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে তা বেশিরভাগ মানুষই জানেন না। যে কারণে প্রাণ হারাতে হয় অনেককেই। হার্ট অ্যাটাকের জরুরি চিকিৎসা নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে কথা বলেছেন রাজধানীর সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. আনিছা নওশীন।
ডক্টর টিভি: হার্ট অ্যাটাকের রোগীর খুব অল্প সময় অনেক কার্ডেক মাসেল নষ্ট হয়। সেক্ষেত্রে হার্ট অ্যাটাক বোঝা গেলে হাসপাতালে নেয়ার পূর্বে প্রাথমিক চিকিৎসা বা করণীয় কী?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারবো, হার্ট অ্যাটাকের রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি বেড়ে যাবে। যদি বুঝতে পারি তার হার্টের সমস্যা এবং বুকের ব্যথা হতে পারে, তাহলে রক্ত পাতলা করার ওষুধ ইকুস্প্রিন চারটি ট্যাবলেট রোগী খেয়ে ফেলতে পারলে অথবা লোকাল কোনো এমবিবিএস ডাক্তারের পরামর্শে বলি লোডিং ডোজ দিতে হবে।
তার সাথে clopid ওষুধ চারটা দেয়া গেলে হার্ট অ্যাটাকের ক্ষতি কমানো সম্ভব। এই লোডিং ডোজটা আমাদের চিকিৎসার শুরু। তারপর অবশ্যই তাকে কোনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে একটা ইসিজি করতে হবে।একটা খুব সাধারণ রক্ত পাতলা করণের পরীক্ষা আছে, যেটা করতে পাঁচ মিনিটের বেশি সময় লাগে না। এই দুইটি পরীক্ষা দিয়ে আমরা নিশ্চিত হতে পারবো রোগীর হার্ট অ্যাটাক হয়েছে নাকি হয়নি।
পরীক্ষা করে রোগীর হার্ট অ্যাটাক ধরা পড়লে লোডিং ডোজ দেয়া। অর্থাৎ ইকোস্প্রিন চারটা ট্যাবলেট শুরুতে দেয়া। এটা অনেক উপকারি। আর বুকে ব্যথা করলে Nidocard স্প্রে বা Anril স্প্রে জিহ্বার নিচে এক পাফ বা দু পাফ দিলে ব্যথা চলে যাবে। রোগী সময় পাবে হাসপাতালে পৌঁছানোর।
ডক্টর টিভি: এনজিওগ্রাম পরীক্ষা করতে অনেকে করাতে চায় না বা অনীহা প্রকাশ করে। এটা কি ঝুকিপূর্ণ?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে রিং, এনজিওগ্রাম বা ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। আমাদের ইন্টারভেনশন বা এনজিওগ্রামে অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। আমরা এখন মাত্র ২ থেকে ৩ ঘণ্টায় একটা রোগীকে ভর্তি করে ডে কেয়ার বেসিসে হাত দিয়ে এনজিওগ্রাম করে দিচ্ছি। একটা এনজিওগ্রাম করতে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগে। কোনো অজ্ঞান না করে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ এনজিওগ্রাম করে দিতে পারি। আর এটা রোগীর ব্যথামুক্ত ভাবে করা হয়। তাই এনজিওগ্রাম করতে কোনো ঝুঁকি নেই।
ডক্টর টিভি: হার্টে ব্লক ধরা পড়লে সহজ চিকিৎসা কী?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ ব্লক ওষুধে কাজ করবে না। আর ৯০ ব্লককে আমরা যদি ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করতে যাই এটা সম্ভব নয়।
আমি যদি ওষুধ খেয়ে ভাবি যে ভালো হয়ে যাবো, তাহলে যেকোনো পরিস্থিতিতে হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। তাই ব্লক ধরা পড়লে সেখানে রিং দিতেই হবে। আর বাম দিকের রক্তনালীতে বা ডান বাম দুই দিকের গুড়ার দিকে ব্লক থাকলে রোগীকে সুস্থ করা যাবে না। তখন তাকে ওপেন হার্ট সার্জারি করে দিতে হবে। ওপেন হার্ট সার্জারি করার পর নতুন তিনটা রক্তনালী তাকে দেওয়া হবে। এই রক্তনালীটা মানুষের দেয়া না।
আমাদের বাড়তি ২টা রক্তনালী আছে আমরা সেগুলো কেটে বাইপাস করতে পারি। আবার আরও রক্তনালী লাগলে সেটাও সৃষ্টিকর্তা দিয়ে দিয়েছেন আমাদের পায়ে। যে রোগীটার বাইপাস লাগবে সে যদি একটা বাইপাস করে। আল্লাহ জন্মের সময় তাকে তিনটা রক্তনালী দিয়েছেন। আবার আপনি নতুন করে তিনটা রক্তনালী আল্লাহর দেওয়া রক্তনালী লাগিয়ে নিলেন। তাহলে আপনি নতুন জীবন পেলেন। আবার ২০ বছর ৩০ বছর আপনি ভালো থাকবেন। কিন্তু এত বড় একটা অপারেশন সব রোগীর প্রয়োজন নাই।
ডক্টর টিভি: পিসিআই বা প্রাইমারি পিসিআই কী?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসা প্রাইমারি পিসিআই সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সবোর্ত্তম চিকিৎসা। এই চিকিৎসা শতভাগ বন্ধ হয়ে গেলে রক্তনালীতে হার্ট অ্যাটাক হয়ে গেলো । তাই যত দ্রুত সম্ভব এনজিওগ্রাম করে দুই ঘন্টার মধ্যেই রিং বসিয়ে দিতে হবে।
আরও একটা তথ্য, আমাদের দেশে নতুন একটা ওষুধ এসেছে যে ওষুধটার নাম টেলিকটিপ্লেস। এছাড়া ব্লক গলিয়ে রক্ত চলাচল চালু করার জন্য, ওষুধটার নাম স্টেপটুকাইনিস। এটি শতকরা ৬০ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকারী। কিন্তু বর্তমানে যে ওষুধটা ৯৫% রোগীর ক্ষেত্রে কার্যকারী সেটা টেলিকটিপ্লেস।
স্টেপটুকাইনিস ইনজেকশনটির দাম ৫ হাজার টাকা। আর টেলিকটিপ্লেস শতকরা ৯৫ভাগ রোগীর ক্ষেত্রে কাজ করে সে ওষুধটার দাম ৬৫ হাজার। যারা অন্তত নিজর টাকায় ইনজেকশনটা কিনতে পারবেন, তারা অবশ্যই এই দুইটা ওষুধের মধ্যে টেলিকটিপ্লেস ওষুধটাকে ব্যবহার করবেন।
ডক্টর টিভি: বুকের বাম পাশে চিনচিন ও ব্যথা করে ঘুমের মাঝে। এটা কি হার্ট অ্যাটাকের কারণে হয়?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: যতদিন মেয়েদের মাসিক থাকে, তখন মেয়েদের হার্ট অ্যাটাক কম হয়। কারণ এটা সাধারণ একটা চিকিৎসা। পুরুষের ২৫ বছর বয়সেই হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। কিন্তু একটা মেয়ে পাওয়া যাবে না যে ২৫ বছর বয়সে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। তবে চল্লিশোর্ধ মেয়েদেরই হার্ট অ্যাটাক হয়।
আপনি যদি জানতে চান আপনার হার্টের ব্যথা কিনা তাহলে জোরে জোরে হেঁটে দেখতে পারেন, আপনার ব্যথা বাড়ে কিনা। বিশ্রাম অবস্থায় চিনচিনে ব্যথা সাধারণত হার্টের রোগীদের বেলায় হয় না। তারপরেও হার্ট আ্যাটাক ঠেকাতে ৪০ বছরের প্রতিটা মানুষকে একটা কার্ডিয়াক স্কিনিং প্যাকেজ করে নিই। যার মধ্যে রয়েছে একটা ইসিজি, একটা ইকু, একটা ইটিটি। তাহলেই আগে থেকেই বোঝা যায়, হার্টে সমস্যা আছে কিনা। ৭০ ভাগ ব্লক থাকলে একটা ইসিজি, ইকু, ইটিটি করলে হার্টের সমস্যাগুলো ধরা যায়। আগেই তাকে এনজিওগ্রাম করে ব্লক সার্ভ শেষে রিং পরিয়ে দিতে পারি, তার হার্ট অ্যাটাক হবে না।
ডক্টর টিভি: বাম হাত-পা এবং মাঝেমধ্যে বাম পিঠে চিনচিন ব্যথা করে। এটা কি হার্টের কোনো সমস্যা?
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: হ্যাঁ, বাম পাশে বুকে ব্যথা, বুকের মাঝখানে ব্যথা ও চিনচিন করা এটা হার্টের সমস্যা হতে পারে। তবে পায়ের সমস্যা বা পায়ে ব্যথার সাথে হার্টের কোনো সম্পর্ক নেই। আর এ ক্ষেত্রে ওই ব্যক্তিকে অবশ্যই একটা ইসিজি করে একজন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অথবা মেডিসিনের ডাক্তারকে দেখাতে হবে। একটা ইকু কার্ডিওগ্রাফি করা তার জন্য জরুরি।
প্রয়োজনে ইটিটি করে নিতে পারেন তিনি। যদি ইকু এবং ইসিজি নরমালও থাকে তবে হার্টের সমস্যা হতে পারে। সেক্ষেত্রে ইটিটি (এক্সারসাইজ টলারেন্ট টেস্ট) করে একটা ট্রেন্ডমিলের উপরে হাঁটলে বা পরিশ্রম করলে লুকায়িত হার্টের কোনো সমস্যা থাকলে সেটিও বের হয়ে আসবে।