দেশে ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। করোনার সময়ে শিশুদের কিডনি রোগের ঝুঁকি আরও বেশি।  তবে নিয়ম মানা ও সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি অনুসরণ করলে এ রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করা সম্ভব। শিশুদের কিডনি রোগের নানা দিক নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন ঢাকা শিশু হাসপাতালের শিশু নেফ্রলজি বিভাগের অধ্যাপক ডাক্তার শিরিন আফরোজ। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম।

ডক্টর টিভি: শিশুদের কিডনি চিকিৎসার পদ্ধতিগুলো কী?

ডা. শিরিন আফরোজ: কিডনি চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে জন্মগতভাবে বা বংশগত কারণে যেসব কিডনি রোগ হয়, তার মধ্যে কিছু কিছু রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে অপারেশন করা হয়। এছাড়া ইনফেকশন থাকলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। হঠাৎ করে কিডনি বিকল হয়ে গেলে,৭০ শতাংশ ডায়ালাইসিস করতে হয়। এছাড়া সিকেডি রোগীর ক্ষেত্রে কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

ডক্টর টিভি: কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হয়?

ডা. শিরিন আফরোজ: যেসব শিশু কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে প্রথমে রোগীদের কাছ থেকে তাদের প্রাথমিক তথ্য বিবরণী নিতে হবে। তারপর রোগের উপসর্গ বুঝে ডায়াগনোসিস করতে হবে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার ক্ষেত্রে প্রথমে প্রস্রাব পরীক্ষা অর্থাৎ ইউরিন এনালাইসিস করা হয়। রোগের উপসর্গ অনুযায়ী ইউরিন কালচার, ইউরিন প্রোটিন টেস্ট করা হয়। এছাড়া রক্ত পরীক্ষা, অ্যালবুমিন, কোলেস্টেরল, ইলেক্ট্রোলাইট, ক্রিয়েটিনিন ইউরিয়া ক্যালসিয়াম, ফসফেট ইত্যাদি পরীক্ষা করা হয়।

ডক্টর টিভি: কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের জন্য হাসপাতালে কী ধরনের চিকিৎসা দেয়া হয়?

ডা. শিরিন আফরোজ: ঢাকা শিশু হাসপাতালের কিডনি বিভাগে শিশুদের ডায়ালাইসিস সাপোর্ট অর্থাৎ কিডনি আই সি ইউ সহায়তা দেওয়া হয়। এখানে যেসব শিশুরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়ে মুমূর্ষু অবস্থায় আসে তাদের সেবা দেওয়া হয়। নবজাতক থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের সেবা দেওয়া হয়। যেমন জন্মগত শিশুর ক্রিয়েটিনিন বেড়ে গিয়ে কিডনি বিকল হয়ে যায়, তাদের চিকিৎসা, সিকেডি রোগীর চিকিৎসা, এদের পেটের ডায়ালাইসিস, রক্তের ডায়ালাইসিস, নেফ্রোটিক সিনড্রোম এর রোগীদের বিভিন্ন জটিল অবস্থার চিকিৎসা দেওয়া হয়। এছাড়াও প্রেসার বেড়ে যাওয়ার ফলে খিঁচুনি হওয়া, হার্ট অ্যাটাক রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়।

ডক্টর টিভি: করোনার এই সময়ে শিশুরা কী ধরনের সর্তকতা অবলম্বন করতে পারে?

ডা. শিরিন আফরোজ: করোনা পরিস্থিতিতে শিশু এবং বয়স্কদের রোগের উপসর্গগুলো প্রায় একই রকম হয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে সর্দি বেশি হয় আর বয়স্কদের ক্ষেত্রে জ্বর বেশি হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে শিশুরা যেহেতু সবার কাছেই আসা-যাওয়া করে তাই শিশুদেরকে আইসোলেশনে রাখতে হবে।

ডক্টর টিভি: কিডনি রোগীদের করোনাভাইরাস হলে অতিরিক্ত কী ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে?

ডা. শিরিন আফরোজ: শিশু কিডনি রোগীর করোনাভাইরাস হলে, তার চিকিৎসকের শরণাপন্ন হয়ে চিকিৎসা নিতে হবে। সেক্ষেত্রে চিকিৎসক বাসায় থেকেই চিকিৎসা নিতে বললে তাই করতে হবে। আর চিকিৎসক রোগীর শরীরের অবস্থা বুঝে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে বললে সেটা করতে হবে।

ডক্টর টিভি: কিডনি রোগে যেসব শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে এক্ষেত্রে স্থায়ী কোনো চিকিৎসা আছে কিনা?

ডা. শিরিন আফরোজ: কিডনি রোগে যেসব শিশু আক্রান্ত হচ্ছে, তাদের স্থায়ী চিকিৎসার ক্ষেত্রে কিডনি ডায়ালাইসিস, কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়।

ডক্টর টিভি: আমাদের দেশে যে সকল শিশুরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে, বয়সভেদে তাদের সুস্থতার হার কেমন?

ডা. শিরিন আফরোজ: সঠিক সময়ে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা নেওয়ায় কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুদের বেশিরভাগই সুস্থ হচ্ছে।