মৌমাছির কামড়েও বিকল হতে পারে শিশুর কিডনি
প্রতীকী ছবি
বয়স্কদের মতো শিশুদেরও হতে পারে কিডনি রোগ। দেশে ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগে ভুগছে। বয়স্কদের মতোই শিশুদের কিডনি রোগেরও উপসর্গ প্রায় একই রকম। করোনার সময়ে শিশু কিডনি রোগের ঝুঁকি রয়েছে আরো বেশি। শিশুদের কিডনি রোগের লক্ষণসহ নানা দিক নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিশু কিডনি বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ফখরুল ইসলাম
ডক্টর টিভি: আমাদের দেশে শিশু কিডনি রোগীদের বয়সসীমা কতো?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: শিশু বিশেষজ্ঞদের মতে, আঠারো বছর বয়স পর্যন্ত রোগীদের শিশু রোগী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
ডক্টর টিভি: শিশুদের কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রধান কারণগুলো কি?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: সাধারণত জন্মগত বা বংশগত কারণে শিশুদের কিডনি রোগ হয়ে থাকে। বংশগত কারণে কিডনি রোগগুলো শিশু গর্ভে থাকা অবস্থাতেই ধরা পড়ে। তারপর শিশু জন্মের পর বেশকিছু লক্ষণ দেখা দেয়। যেমন: প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া, শ্বাসকষ্ট, শিশুর বেড়ে না ওঠা, হাত পা বাঁকা হয়ে যাওয়া, বমি, ইলেকট্রোলাইটিক ইমব্যালেন্স হওয়া, প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া, ফোঁটা ফোঁটা প্রস্রাব করা ইত্যাদি।
ডক্টর টিভি: শিশুদের কিডনি বিকল হয় কেন?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: শিশুদের কিডনি বিকল দুই রকমের। একটি আকস্মিক বা দ্রুত গতিতে কিডনি বিকল। যেটাকে আমরা বলি একিউট কিডনি ইনজুরি। আরেকটি হলো ধীরগতিতে কিডনি বিকল। আকস্মিক বা দ্রুত কিডনি বিকল হওয়ার কারণ হলো ডায়রিয়া বা বমির ফলে শিশু যখন ডিহাইড্রেশনে ভোগে, তখন কিডনিতে রক্তপ্রবাহ কম হয়। ডিহাইড্রেশনের কারণে শিশুকে ওরস্যালাইন খাওয়ানো না হলে তার কিডনি দ্রুতগতিতে বিকল হয়। এর ফলে প্রস্রাব কমে যায়।
ডায়রিয়া বা বমির কারণে শরীরের যে ফ্লুইড লস হয়, তার ফলে শরীরে কিডনি বিকল হয়ে যায় আকস্মিকভাবে। যেকোনো ইনফেকশনের কারণে কিডনি বিকল হয়। প্রদাহের ফলে কিডনি বিকল হতে পারে। এটাও আকস্মিক কিডনি বিকল। এছাড়াও বর্ষাকালে মৌমাছি অথবা সাপের কামড়ের ফলে এই বিষ শরীরে গিয়ে কিডনি বিকল হতে পারে। কিছু কিছু ওষুধের কারণে কিডনি বিকল হয়ে থাকে। প্রস্রাবের রাস্তায় জন্মগত ত্রুটি থাকলে কিডনি বিকল হতে পারে।
ডক্টর টিভি: কি কারণে কিডনিতে পাথর হয়?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: জন্মগত কারণে এ ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বিশেষ করে আত্মীয়তার মধ্যে বিয়ে হলে এ ধরনের রোগ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মূত্রনালীতে ব্লক থাকলে, স্টেসিস থাকলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
ডক্টর টিভি: শিশুরা কিডনি রোগে আক্রান্ত হলে প্রাথমিকভাবে অভিভাবকরা কিভাবে বুঝবেন?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: এক্ষেত্রে লক্ষনীয় উপসর্গগুলো হলো শিশু ঘুম থেকে ওঠার পর চোখ মুখ ফুলে যাওয়া, প্রস্রাবের চাপ কমে আসা, হাতে-পায়ে পানি চলে আসা, পেটে পানি চলে আসা, প্রস্রাব কমে যাওয়া। প্রস্রাবের সাথে রক্ত যাওয়া, প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া, জ্বর, বমি বমি ভাব। ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বেড়ে গেলে মাথাব্যথা, খিচুনি এসব উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়াও শিশুদের রক্তশূন্যতা, ক্ষুধামন্দা, দুর্বলতা, ওজন কম হওয়া ইত্যাদি উপসর্গও দেখা দিতে পারে। তাহলে অভিভাবকরা শিশুদের নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যাবেন।
ডক্টর টিভি: দেশে কিডনি রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা কত?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: আমাদের দেশে ৪০ থেকে ৫০ লাখ শিশু বিভিন্ন ধরনের কিডনির নানা রোগে ভুগছে।
ডক্টর টিভি: কিডনির কোন কোন রোগ নিয়ে শিশুরা কিডনি বিশেষজ্ঞদের কাছে আসে?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: শিশুরা জন্মগত এবং বংশগত কিডনি রোগে আক্রান্ত হয়। জন্মগত কিডনি রোগগুলো অনেকটাই আল্ট্রাসনোগ্রাফিতে ধরা পড়ে। জন্মের পরে কিডনি রোগ প্রস্রাবে ইনফেকশন, নেফ্রোটিক সিনড্রোম, ড্রাগ এর ফলে কিছু ইনফেকশন হয়। এছাড়া ডিহাইড্রেশন, কিডনি ছোট হওয়া, ডান অথবা বাম যেকোনো এক পাশে দু’টো কিডনি চলে যাওয়াসহ কিডনির সব ধরণের রোগ নিয়েই শিশুরা শিশু কিডনি বিশেষজ্ঞদের কাছে যায়।
ডক্টর টিভি: করোনার সময়ে শিশু কিডনি রোগের ঝুঁকি কতটুকু?
অধ্যাপক ডা. গোলাম মঈন উদ্দিন: দেশে করোনা পরিস্থিতিতে রোগী তাদের প্রয়োজনীয় পর্যাপ্ত চিকিৎসা নিতে পারছে না। এতে রোগীদের বিভিন্ন ধরনের কিডনি রোগের-জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। নেফ্রোটিক সিনড্রোম এর রোগী যাদেরকে সবসময় তদারকিতে রাখতে হয়, বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে তাদের ওষুধের ডোজ বাড়ানো কমানো হয়, তারা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিতে পারছেন না। এতে তাদের বিভিন্ন রকমের জটিলতা বাড়ছে। তারা সুস্থ হতে না পেরে এক পর্যায়ে মুমূর্ষ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। এই করোনাকালিন শিশুদের কিডনিসহ নানা ধরণের রোগে আক্রান্তের ঝুঁকি আরো বেশি। এজন্য চিকিৎসক এবং শিশুদের পিতা-মাতাকে আরো বেশি সচেতন থাকতে হবে।
অনুলিখন: প্রিয়াঙ্কা হাসান