কিডনী রোগের নানা দিক
ফাইল ছবি
কিডনি সমস্যা একটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। ইনফেকশন, পাথর হওয়া, প্রদাহ, আকস্মিক কিডনি বিকলসহ নানা ধরনের রোগ হয় কিডনিতে। কিডনী রোগের নানা দিক ও লক্ষণ নিয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. ইউশা এ এফ আনসারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. শারমিন ইয়াসমিন খান।
ডক্টর টিভি: কিডনি রোগ কী?
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: কিডনির বাংলা অর্থ হচ্ছে বৃক্ষ। কিডনি রোগ বলতে ক্রনিক কিডনি ডিজিস বা সিকেডি বুঝায়। এটি দীর্ঘমেয়াদি কিডনি রোগ। এ রোগের ক্ষেত্রে এক পর্যায়ে ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। কিডনির নানা ধরনের রোগ হয়ে থাকে। যেমন; কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর হওয়া, কিডনি প্রদাহ, আকস্মিক কিডনি বিকল হওয়া।
ডক্টর টিভি: কিডনি রোগগুলো কিভাবে বিশ্লেষণ করা যায়?
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ডায়রিয়া, অনেক বেশি বমি অথবা তীব্র রক্তক্ষরণ, কোন ওষুধের সাইড ইফেক্ট বা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াজনিত কারণে একজন সুস্থ মানুষের কিডনি আকস্মিকভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এটাকে আমরা আকস্মিক কিডনি ডিজিজ বলি। আমাদের দেশে আকস্মিক কিডনি বিকল অনেক বেশি পরিমাণ হয়ে থাকে। এছাড়াও জন্মগত কিডনি রোগ থাকতে পারে। কিডনিতে জন্মগতভাবে ত্রুটি থাকতে পারে। প্রস্রাবের রাস্তায় অর্থাৎ মূত্রথলিতে বাধা সৃষ্টি হওয়া, কিডনিতে টিউমার ইত্যাদি নানা রকমের কিডনি রোগ হতে পারে।
ডক্টর টিভি: প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউটিআই এর লক্ষণগুলো কি কি?
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ৫০ শতাংশ নারীদের ক্ষেত্রে প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউটিআই হয়ে থাকে। পুরুষ- নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই কমপ্লিকেটেড ইউটিআই হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে ইউটিআই হওয়ার প্রধান কারণ সময়মতো প্রস্রাব না করে অনেকক্ষণ ধরে রাখা। প্রস্রাবে ইনফেকশন দুই ধরনের হয়। একটি হচ্ছে লোয়ার আর ইউটি আই, অপরটি হচ্ছে আপার ইউটিআই। লোয়ার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে মূত্র থলিতে ইনফেকশন হয়ে থাকে। আপার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে কিডনিতে ইনফেকশন হয়ে থাকে। আর কিডনিতে ইনফেকশন হলে সাথে সাথে মূত্র থলিতে ইনফেকশন হতে পারে। দুই পাশের কিডনিতে ব্যথাও হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আপার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে ইনফেকশন রক্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। আপার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে কিডনিতে ফোড়ার মত হয়ে যায়।
ডক্টর টিভি: কিডনির রোগ একেআই কি ধরনের?
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: একজন ব্যক্তির ঘন্টায় প্রস্রাব ৩০ এমএল এর কম হলে বুঝে নিতে হবে, তিনি একেআই অর্থাৎ একিউট কিডনি ইনজুরির প্রথম ধাপে আছেন। কারো প্রেসার কমে গেলে তার প্রস্রাবও কমে যায়। এক্ষেত্রে কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা কমে যায়।
ডক্টর টিভি: কিডনির রোগ সিকেডির লক্ষণগুলো কেমন?
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: সিকেডি বা ক্রনিক কিডনি সমস্যা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি রোগ। সিকেডির ক্ষেত্রে রোগের ব্যাপ্তির অর্ধেক সময় পার হওয়ার পর লক্ষণগুলো ধরা পড়ে। এক্ষেত্রে রোগীরা শুরুতে বুঝতে পারে না যে তার কিডনি আস্তে আস্তে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়মিত চেকআপ এর মাধ্যমে এটি শনাক্ত করা সম্ভব। সিকেডি এর প্রধান তিনটি লক্ষণ হচ্ছে, ৫০ শতাংশ রোগী ডায়াবেটিসে ভুগেন। তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে এবং কিডনি প্রদাহ হয়ে থাকে।
ডক্টর টিভি: একজন মানুষের একটি কিডনি নষ্ট হয়ে গেলে কি কি অসুবিধা হতে পারে?
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: একজন সুস্থ মানুষের দুটি কিডনির মধ্যে প্রতিটি কিডনি ৫০ শতাংশ করে কার্যক্ষম থাকে। কিছু কিছু মানুষ একটি কিডনি নিয়ে জন্মগ্রহণ করেন। আবার কিছু কিছু মানুষ তার একটি কিডনি দান করে থাকেন। একটি কিডনি দান করার পর তার অবশিষ্ট কিডনিটি কিছুদিন পর আকারে বড় হয়ে যায়। তখন কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। আল্লাহ তায়ালা বাকি নেফ্রনগুলিকে একটিভ করে দেন। যাদের একটি কিডনি রয়েছে তাদের সর্বদা চিকিৎসকের ফলোআপে থাকতে হবে।
ডক্টর টিভি: আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ডক্টর টিভির দর্শকদেরও অসংখ্য ধন্যবাদ।