মলমূত্র আটকে রাখলে হতে পারে কিডনি রোগ

ডা. শারমিন ইয়াসমিন খান
2021-01-11 09:19:20
মলমূত্র আটকে রাখলে হতে পারে কিডনি রোগ

ফাইল ছবি

কিডনি রোগ মানবদেহে দীর্ঘমেয়াদি নানা সমস্যার সৃষ্টি করে। এর প্রভাবে ইনফেকশন, পাথর হওয়া, প্রদাহ, আকস্মিক কিডনি বিকলসহ শরীরে নানা জটিল রোগ হতে পারে। কি কারণে কিডনী রোগ হতে পারে সে বিষয়ে ডক্টর টিভির সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের কিডনি বিভাগের প্রধান ডা. ইউশা এ এফ আনসারী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. শারমিন ইয়াসমিন খান

ডক্টর টিভি: কেমন আছেন স্যার?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: আল্লাহর রহমতে ভালো আছি।

ডক্টর টিভি: কিডনিজনিত রোগটি সম্পর্কে কিছু বলুন?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: কিডনির বাংলা অর্থ হচ্ছে বৃক্ক। কিডনি রোগ বলতে ক্রনিক কিডনি ডিজিস বা সিকেডি (CKD) বুঝে থাকেন। এটি দীর্ঘমেয়াদি রোগ। কিডনির নানা ধরনের রোগ হতে পারে। যেমন; কিডনিতে ইনফেকশন, কিডনিতে পাথর, কিডনি প্রদাহ, আকস্মিক কিডনি বিকল হওয়া। আমাদের দেশে আকস্মিক কিডনি বিকল অনেক বেশি পরিমাণে হয়।

ডক্টর টিভি: কি কি কারণে কিডনি রোগ হতে পারে?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ডায়রিয়া, অনেক বেশি বমি, তীব্র রক্তক্ষরণ অথবা কোন ওষুধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার কারণে একজন সুস্থ মানুষের কিডনি আকস্মিকভাবে নষ্ট হতে পারে। এটাকে আমরা আকস্মিক কিডনি রোগ বলি। আরেকটি হচ্ছে জন্মগত কিডনি রোগ। কিডনিতে জন্মগতভাবে ত্রুটি থাকতে পারে। প্রস্রাবের রাস্তায় অর্থাৎ মূত্রথলিতে বাধা সৃষ্টি হওয়া, কিডনিতে টিউমার হওয়া ইত্যাদি নানা রকমের কিডনি রোগও হতে পারে।

ডক্টর টিভি: কিডনির রোগ একেআই এবং সিকেডি কি ধরনের হয়ে থাকে?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: একজন ব্যক্তির যদি ঘন্টায় প্রস্রাব ৩০ এমএল এর কম হয়, তাহলে বুঝতে হবে তিনি একেআই অর্থাৎ কিডনি রোগের প্রথম ধাপে আছেন। কারো প্রেসার কমে গেলে, প্রস্রাবও কমে যায়। এ ক্ষেত্রে কিডনির কার্যক্ষমতা কিছুটা কমে যায়। সিকেডি বা ক্রনিক কিডনি রোগ হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি রোগ। সিকেডির ক্ষেত্রে রোগের ব্যাপ্তির অর্ধেক সময় পার হওয়ার পর রোগের লক্ষণগুলো প্রকাশ হতে থাকে। এক্ষেত্রে রোগীরা শুরুতে বুঝতে পারেন না যে, তার কিডনি ধীরে ধীরে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সিকেডি (CKD) এর প্রধান তিনটি লক্ষণ হচ্ছে, এদের ৫০ শতাংশ রোগী ডায়াবেটিসে ভুগেন। তাদের উচ্চ রক্তচাপ থাকতে পারে এবং কিডনি প্রদাহ হয়ে থাকে।

ডক্টর টিভি: প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ইউটিআই এর লক্ষণ গুলো কি কি?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ৫০ শতাংশ নারীদের ক্ষেত্রে ইউটিআই হয়ে থাকে। পুরুষ- নারী উভয়ের ক্ষেত্রেই কমপ্লিকেটেড ইউটিআই হতে পারে। নারীদের ক্ষেত্রে ইউটিআই হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে সময় মতো প্রস্রাব-পায়খানা না করে অনেকক্ষণ সময় আটকে রাখা। প্রস্রাবে ইনফেকশন দুই ধরনের। একটি হচ্ছে লোয়ার আর ইউ টি আই, অপরটি হচ্ছে আপার ইউটিআই। লোয়ার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে মূত্র থলিতে ইনফেকশন হয়ে থাকে। আপার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে কিডনিতে ইনফেকশন হয়ে থাকে। আর কিডনিতে ইনফেকশন হলে সাথে সাথে মূত্র থলিতেও ইনফেকশন হতে পারে। অথবা দুই পাশের কিডনিতে ব্যথা হতে পারে। এক্ষেত্রে অনেক সময় কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। আপার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে ইনফেকশন রক্তে ছড়িয়ে যেতে পারে। আপার ইউটিআই এর ক্ষেত্রে কিডনিতে ফোঁড়ার মত হয়ে যায়।

ডক্টর টিভি: একজন মানুষের একটি কিডনি নষ্ট হলে কি কি অসুবিধা হতে পারে?

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: একজন সুস্থ মানুষের দু’টি কিডনির মধ্যে প্রতিটি কিডনি ৫০ শতাংশ করে কার্যক্ষম থাকে। কিছু কিছু মানুষ একটি কিডনি নিয়েই জন্মগ্রহণ করেন। আবার কেউ তার একটি কিডনি দান করে দেন। এক্ষত্রে অবশিষ্ট কিডনিটি কিছুদিন পর আকারে বড় হয়ে যায়। তখন কিডনির কার্যক্ষমতা বেড়ে যায়। মহান আল্লাহ এই কিডনির মাধ্যমেই না থাকা কিডনির কার্যক্রমগুলোও চালু করে দেন। তবে যাদের একটি কিডনি রয়েছে, তাদের সর্বদা চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

ডক্টর টিভি: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ডা. ইউশা এ এফ আনসারী: ডক্টর টিভির দর্শকদেরও আন্তরিক ধন্যবাদ।


আরও দেখুন: