এনজিওগ্রাম নিয়ে মানুষের মাঝে আতংক কেন?

2020-10-19 02:29:59
এনজিওগ্রাম নিয়ে মানুষের মাঝে আতংক কেন?

ছবিটি প্রতীকী

এনজিওগ্রাম এক ধরণের পরীক্ষা।  হার্টের রক্তনালিতে ব্লক রয়েছে কিনা-সেটি নির্ণয়ের জন্য এনজিওগ্রাম করা হয়। অনেকে এই পরীক্ষার ধরণকে ঝুঁকি মনে করে এনজিওগ্রাম করাতে অনীহা প্রকাশ করেন।  সম্প্রতি ডক্টর টিভির 'স্বাস্থ্য সমাধান' অনুষ্ঠানে হার্টের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করার সময় এনজিওগ্রাম নিয়ে কথা বলেন রাজধানীর সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চলনা করেন ডা. আনিছা নওশীন।

ডক্টর টিভি: এনজিওগ্রাম নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি কেন কাজ করে? পরীক্ষাটা কি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে মানুষ এটা করাতে চাই না বা অনীহা প্রকাশ করে এ ব্যাপারে?

ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে রিং, এনজিওগ্রাম বা ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারণা আছে। আপনি একটি বিষয় চিন্তা করে দেখেন, ১০বছর আগে আমাদের মোবাইল টেকনোলজি কেমন ছিলো, আর এখন কেমন।  তাই আমাদের কিন্তু ইন্টারভেনশন বা এনজিওগ্রাম এই জায়গাগুলোতে কিন্তু অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া চলে এসেছে।

আমরা এখন শুুধু দুই ঘণ্টা থেকে তিন ঘণ্টা একটা রুগিকে এডমিশন দিয়ে ডে কেয়ার বেসিসে হাত দিয়ে এনজিওগ্রাম করে দিচ্ছি। এবং একটা এনজিওগ্রাম করতে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগে এবং সেখানে শুধু লোকাল এনুন্তিশিয়া ইউজ করি আমরা হাতের এই জায়গাটায়। কাজেই দেখা যায় যে কোনো অজ্ঞান না করে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ এনজিওগ্রাম করে দিতে পারি এবং রোগীর ব্যথামুক্তভাবে আমরা করতে পারি। সো এনজিওগ্রাম আমি মনে করি অনেক সিম্পল একটা টেস্ট। কোনো রিস্ক নেই।

আমাদের দেশে এখন আমার যারা রোগী আছে। আমি দেখেছি ওনারাই কিন্তু রোগী নিয়ে আসে। আরেকটা হচ্ছে ৮০-৯০% ব্লক যে থাকবে সে ব্লক গুলো ওষুধ দিয়ে কাভার করবে না। আমরা কুসংস্কারের মধ্যে থাকলে হবেনা। আর ৯০ ব্লককে আমরা যদি ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে যাই এটা পসিবল না। এটা কিন্তু তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে ইউরোপিয়ান, আমেরিকান, সব জানার্ল ,সব স্টাডিতে পরীক্ষিত, ৯০% একটা ব্লক নিয়ে আমি যদি বসে থাকি ওষুধ খেয়ে ভালো হয়ে যাবো, যে কোনো মুমেন্টে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। কাজেই ঐখানে আমাদের রিং দিতেই হবে। আর যদি বাম দিকের রক্তনালীতে ব্লক থাকে এবং ডান বাম দুই দিকের গুড়ার দিকে ব্লক থাকে।

রিং করে রোগীকে সুস্থ করা যাবে না। এটা বহু বছরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে তাকে ওপেন হার্ট সার্জারি করে দিতে হবে। ওপেন হার্ট করে দিয়ে তাকে কিন্তু নতুন তিনটা রক্তনালী তাকে দেওয়া হবে। এই রক্তনালীটা মানুষের দেয়া না। আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন যে, আমাদের বুকের ভেতরে বাম পাশে যে একটা রক্তনালী আছে লীমা আর ডান পাশে যে রক্ত নালী আছে রিমা। এই দুইটা রক্তনালী কেটে আমরা হার্টের মধ্যে লাগিয়ে দিতে পারি। তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা কিন্তু আমাদের বাড়তি দুইটা রক্তনালী আমাদের দিয়ে দিয়েছে। কেনো, আমরা যেনো বাইপাস করতে পারি।

ওই দুইটা রক্তনালী কেটে যখন আমরা হার্টের বাইপাস করি, ঐ দুইটা রক্তনালীর নির্দিষ্ট কাজ থাকলে কিন্তু আমাদের সমস্যা হতো, কিন্তু হচ্ছে না। আবার আরও যদি রক্তনালী লাগে সেটাও রিজার্ভ হিসাবে সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন আমাদের পায়ে। কাজেই এগুলো আল্লাহর দেয়া সৃষ্টি। এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতিও কিন্তু আল্লাহরই দান। আপনি ভগবান বলেন বা আল্লাহ বলেন বা যিশু বলেন, এটা উপরওয়ালারই দান। এই জিনিসগুলোকে আমরা কেনো ব্যবহার করবো না আমরা কুসংস্কারের জন্য। ডেফিনিয়েটলি যে রোগীটার বাইপাস লাগবে সে যদি একটা বাইপাস করে। আল্লাহ জন্মের সময় তাকে তিনটা রক্তনালী দিয়েছে আবার আপনি নতুন করে তিনটা রক্তনালী আল্লার দেওয়া রক্তনালী লাগিয়ে নিলেন। তাহলে আপনি নতুন জীবন পেলেন। আবার ২০ বছর ৩০ বছর আপনি ভালো থাকবেন।

এত বড় একটা অপারেশন সব রোগীর প্রয়োজন নাই। যখন আমাদের যেই বাম দিকের দুইটা এবং ডান দিকের একটা রক্তনালী এই রক্তনালীগুলোর গোড়া ভালো থাকবে। শুধু মাঝামাঝি একটা বা দুইটা ব্লক থাকবে, সে ব্লক গুলো ৮০, ৯০ বা ৯৫% ব্লক থাকবে, সেখানে কিন্তু আমারা একটা বা দুইটা রিং বসিয়ে দিলেই রোগী অনেক বছর ভালো থাকে। কাজেই এই রিং, বাইপাস কিংবা এনজিওগ্রাম এটা নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এনজিওগ্রামটা একেবারেই সেইফ। আমরা এখন হাত দিয়ে এনজিওগ্রাম করি, হাত দিয়ে রিং করি, দুই রাত্র হাসপাতালে থেকে রোগী বাসায় চলে যায়। ইটস ভেরি সিম্পল এবং খুব ই সহজ এই ঝুঁকি খুবই কম।

একটি এভিন্ডিসাইটের অপারেশনের ঝুঁকি আমি মনে করি এরচেয়ে অনেক বেশি। কারণ আপনি যখন একটা সিম্পল এপিন্ডিসাইটের অপারেশন করেন, আপনি যখন একটা সিম্পল জানারেল এনেসথিসিয়া দেন, তখন আপনি ফোল অজ্ঞান করেন রোগীকে। পিত্তথলির অপারেশন করলে ফোল অজ্ঞান করেন রোগীকে। কিন্তু আমরা আপনার হার্টের ভেতরে গিয়ে রিং বসিয়ে দিয়ে আসতেছি একটু লোকাল এনেস্তেশিয়া হাতের এই জায়গাটা দিয়ে। এবং আপনার সাথে কথা বলতে বলতেই কাজ হয়ে যাচ্ছে। এন্ড ইটস অ্যা মেটার অফ অনলি থারটি মিনিটস। একটা রিং বসানো কমপ্লিট।

একটা এনজিওগ্রাম করা ফাইভ মিনিটস টু টেন মিনিটস। সো এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। যারা এই রকম এনজিওগ্রাম করেছেন বা যারা রিং পরেছেন বা যাদের বাইপাস হয়েছে। ঐরকম রোগীর সাথে আপনারা যখন কথা বলবেন তখন আপনাদের মনের ভয় চলে যাবে।

হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ডক্টর টিভির পুরো অনুষ্ঠানটি ভিডিওসহ দেখতে ক্লিক করুন- 'স্বাস্থ্য সমাধান'-এ।


আরও দেখুন: