'হার্ট অ্যাটাকের টোটাল ডিসিশনটাই আসে এনজিওগ্রাম থেকে'
অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদে ও সঞ্চালক ডা. আনিছা নওশীন।
হার্ট অ্যাটাক হয়েছে বুঝতে পারার সাথে সাথে ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। দিন দিন হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। হার্ট অ্যাটাক হলে এনজিওগ্রাম কতটা প্রয়োজন সে সম্পর্কে রাজধানীর সিরাজুল ইসলাম মেডিক্যাল কলেজ হসপিটালের ক্লিনিক্যাল অ্যান্ড ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজি বিভাগের চিফ কনসালটেন্ট সহকারী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদের নির্দেশনা এবং কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হলো। যা ডা. আনিছা নওশীনের সঞ্চলিত ডক্টর টিভির ধারাবাহিক অনুষ্ঠান 'স্বাস্থ্য সমাধান'র ১২৪ তম পর্বের অনুষ্ঠান থেকে নেয়া হয়েছে।
ডক্টর টিভি: অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার, এনজিওগ্রামটা আসলে কি? হার্ট অ্যাটাকের জরুরি চিকিৎসায় এনজিওগ্রামের গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তরে ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: আমরা যদি এটাকে একটু বুঝিয়ে বলি, আমরা যারা কার্ডিওলজিস্ট বা যেকোনো ডাক্তাররা আমরা যারা প্রফেশনাল প্রেকটিস করি, আমরা কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল গাইড লাইনকে ফলো করি। সো ইন্টারন্যাশনাল গাইড লাইন অনুযায়ী এভরি হার্ট অ্যাটাকের পেশেন্ট তার কিন্তু এনজিওগ্রাম করা লাগবে। আমি যদি উদাহরণ দিয়ে বুঝিয়ে দেই ,আমাদের হার্টের বাম দিকে দুইটা রক্ত নালী থাকে আর ডান দিকে একটা রক্ত নালী থাকে। আমি ধরে নিলাম বাম দিকের রক্ত নালী বন্ধ হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে তাহলে এটাকি বলা যায় বাম দিকের রক্তনালী ভালো আছে? বাম দিকের রক্তনালীতেও ব্লক থাকতে পারে। এবং মেবি (সম্ভবত) ঐ বাম দিকের রক্ত নালীর ব্লক দিয়ে হার্ট অ্যাটাকের রোগীটা এ যাত্রার হার্ট অ্যাটাক থেকে বেচেঁ গেলেও পরবতীর্ হার্ট অ্যাটাক তার বাম দিকের রক্তনালী দিয়ে হতে পারে। তাহলে আমাদের এই এনজিওগ্রামটা এতটাই জরুরি, আমাদের এই মুহুর্তের যে রক্তনালীটা দিয়ে ব্লক হয়ে হার্ট অ্যাটাক হয়েছে এই রক্ত নালীটাকে খোলে রক্তচলাচল স্বাভাবিক করে তার হার্টের মাসেল কে সেইভ করতে হবে। এটা যেমন জরুরি তেমনভাবে পরবতীর্ হার্ট অ্যাটাক থেকে তার মৃত্যু ঝুকি থেকে বাচাঁনোর জন্য, বাম দিকের অন্য রক্ত নালীতেও যদি ব্লক থাকে সে ব্লক যদি ৭০% এর উপরে থাকে ৮০ বা ৯০ % যেটা ওষুধের চিকিৎসায় তার ভালো হওয়ার সম্ভাবনা নেই সেখানে অবশ্যই তাকে রিং করে দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, তারপরে আমরা যদি দেখি রোগীর চিকিৎসা ওষুধ দিয়েই করতে হবে। রিং করা যাবে না ,বাইপাস করা যাবে না, কাজেই আমি একটা রোগীকে শুধু ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা দিবো, নাকি তার হার্টে রিং করে চিকিৎসা করবো নাকি তাকে বাইপাস করে চিকিৎসা করতে হবে, এই টোটাল ডিসিশনটাই কিন্তু আসবে এনজিওগ্রাম থেকে। সো আমরা যদি এনজিওগ্রাম না করি তাহলে আমরা রোগীকে সঠিক ট্রিটমেন্ট দিতেও পারবো না, ট্রিটমেন্টের পরামর্শও দিতে পারবো না। দিস ইজ দ্যা গেট ওয়ে এন্ট্রি যে আমরা হার্টের চিকিৎসা কিভাবে দিবো। এনজিওগ্রাম ইজ দ্যা এন্ট্রি টেস্ট ।
ডক্টর টিভি: জ্বী স্যার, অসংখ্য ধন্যবাদ স্যার, এত সহজভাবে বুঝিয়ে বলার জন্য। স্যার তাহলে এখন জানতে চাইবো, এনজিওগ্রাম নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি কেনো কাজ করে? পরীক্ষাটা কি এতটাই ঝুকিপূর্ণ যে মানুষ এটা করাতে চাইনা বা অনিহা প্রকাশ করে এ ব্যাপারে। সো এটা নিয়ে একটু জানতে চাই স্যার...
ডা. মোহাম্মদ সেলিম মাহমুদ: আচ্ছা, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে রিং, এনজিওগ্রাম বা ওপেন হার্ট বাইপাস সার্জারি এই বিষয়গুলো নিয়ে অনেকেরই ভুল ধারনা আছে। আপনি একটি বিষয় চিন্তা করে দেখেন, ১০বছর আগে আমাদের মোবাইল টেকনোলজি কেমন ছিলো, আর এখন কেমন। সো আমাদের কিন্তু ইন্টারভেনশন বা এনজিওগ্রাম এই জায়গাগুলোতে কিন্তু অনেক আধুনিকতার ছোঁয়া চলে এসেছে। আমরা এখন শুুধু ২ঘণ্টা থেকে ৩ঘণ্টা একটা রুগিকে এডমিশন দিয়ে ডে কেয়ার বেসিসে হাত দিয়ে এনজিওগ্রাম করে দিচ্ছি। এবং একটা এনজিওগ্রাম করতে ৫ থেকে ৭ মিনিট সময় লাগে। এবং সেখানে শুধু লোকাল এনুন্তিশিয়া ইউস করি আমরা হাতের এই জায়গাটায়। কাজেই দেখা যায় যে কোনো অজ্ঞান না করে মাত্র ১০ মিনিটের মধ্যে আমরা একটা পূর্ণাঙ্গ এনজিওগ্রাম করে দিতে পারি। এবং রোগীর ব্যথা মুক্ত ভাবে আমরা করতে পারি। সো এনজিওগ্রাম আমি মনে করি অনেক সিম্পল একটা টেস্ট। কোনো রিস্ক নেই। এবং আমাদের দেশে এখন আমার যারা রোগীরা আছে। আমি দেখেছি ওনারাই কিন্তু রোগী নিয়ে আসে। আরেকটা হচ্ছে ৮০-৯০% ব্লক যে থাকবে সে ব্লক গুলো ওষুধ দিয়ে কাভার করবে না। আমরা কুসংস্কারের মধ্যে থাকলে হবে না। আর ৯০ ব্লককে আমরা যদি ওষুধ দিয়ে ট্রিটমেন্ট করতে যাই এটা পসিবল না। এটা কিন্তু তারা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখেছে ইউরোপিয়ান, আমেরিকান, সব জানার্ল ,সব স্টাডিতে পরীক্ষিত, ৯০% একটা ব্লক নিয়ে আমি যদি বসে থাকি ওষুধ খেয়ে ভালো হয়ে যাবো, যে কোনো মুমেন্টে হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে। কাজেই ঐখানে আমাদের রিং দিতেই হবে। আর যদি বাম দিকের রক্তনালীতে ব্লক থাকে এবং ডান বাম দুই দিকের গুড়ার দিকে ব্লক থাকে। রিং করে রোগীকে সুস্থ করা যাবে না
তিনি বলেন, বহু বছরের পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখা গেছে তাকে ওপেন হার্ট সার্জারি করে দিতে হবে। ওপেন হার্ট করে দিয়ে তাকে কিন্তু নতুন তিনটা রক্তনালী তাকে দেওয়া হবে। এই রক্তনালীটা মানুষের দেয়া না। আপনি একটু চিন্তা করে দেখেন যে, আমাদের বুকের ভেতরে বাম পাশে যে একটা রক্তনালী আছে লীমা আর ডান পাশে যে রক্ত নালী আছে রিমা। এই দুইটা রক্তনালী কেটে আমরা হার্টের মধ্যে লাগিয়ে দিতে পারি। তো আমাদের সৃষ্টিকর্তা কিন্তু আমাদের বাড়তি দুইটা রক্তনালী আমাদের দিয়ে দিয়েছে। কেনো, আমরা যেনো বাইপাস করতে পারি। এই দুইটা রক্তনালী কেটে যখন আমরা হার্টের বাইপাস করি, ঐ দুইটা রক্তনালীর নির্দিষ্ট কাজ থাকলে কিন্তু আমাদের সমস্যা হতো, কিন্তু হচ্ছে না। আবার আরও যদি রক্তনালী লাগে সেটাও রিজার্ভ হিসাবে সৃষ্টিকর্তা আমাদের দিয়ে দিয়েছেন আমাদের পায়ে। কাজেই এগুলো আল্লাহর দেয়া সৃষ্টি। এবং এই চিকিৎসা পদ্ধতিও কিন্তু আল্লাহর ই দান । আপনি ভগবান বলেন বা আল্লাহ বলেন বা যিশু বলেন, এটা উপরওয়ালার ই দান। এই জিনিসগুলোকে আমরা কেনো ব্যবহার করবো না আমরা কুসংস্কারের জন্য।
এসম্পর্কে তিনি আরও বলেন, ডেফিনিয়েটলি যে রোগীটার বাইপাস লাগবে সে যদি একটা বাইপাস করে। আল্লাহ জন্মের সময় তাকে তিনটা রক্তনালী দিয়েছে আবার আপনি নতুন করে তিনটা রক্তনালী আল্লার দেওয়া রক্তনালী লাগিয়ে নিলেন। তাহলে আপনি নতুন জীবন পেলেন। আবার ২০ বছর ৩০ বছর আপনি ভালো থাকবেন। কিন্তু এত বড় একটা অপারেশন সব রোগীর প্রয়োজন নাই। যখন আমাদের যেই বাম দিকের দুইটা এবং ডান দিকের একটা রক্তনালী এই রক্তনালী গুলোর গোড়া ভালো থাকবে। শুধু মাঝামাঝি একটা বা দুইটা ব্লক থাকবে, সে ব্লক গুলো ৮০, ৯০ বা ৯৫% ব্লক থাকবে, সেখানে কিন্তু আমারা ১টা বা ২টা রিং বসিয়ে দিলেই রোগী অনেক বছর ভালো থাকে। কাজেই এই রিং, বাইপাস কিংবা এনজিওগ্রাম এটা নিয়ে ভয়ের কোনো কারণ নেই। এনজিওগ্রামটা একেবারেই সেইফ। আমরা এখন হাত দিয়ে এনজিওগ্রাম করি, হাত দিয়ে রিং করি, দুই রাত্র হাসপাতালে থেকে রোগী বাসায় চলে যায়। ইটস ভেরি সিম্পল এবং খুব ই সহজ এই ঝুকি খুব ই কম। একটি এভিন্ডিসাইটের অপারেশনের ঝুকি আমি মনে করি এরচেয়ে অনেক বেশি। কারণ আপনি যখন একটা সিম্পল এপিন্ডিসাইটের অপারেশন করেন, আপনি যখন একটা সিম্পল জানারেল এনেসথিসিয়া দেন, তখন আপনি ফোল অজ্ঞান করেন রোগীকে। পিত্তথলির অপারেশন করলে ফোল অজ্ঞান করেন রোগীকে। কিন্তু আমরা আপনার হার্টের ভেতরে গিয়ে রিং বসিয়ে দিয়ে আসতেছি একটু লোকাল এনেস্তেশিয়া হাতের এই জায়গাটা দিয়ে। এবং আপনার সাথে কথা বলতে বলতেই কাজ হয়ে যাচ্ছে। এন্ড ইটস অ্যা মেটার অফ অনলি থারটি মিনিটস। একটা রিং বসানো কমপ্লিট। একটা এনজিওগ্রাম করা ফাইভ মিনিটস টু টেন মিনিটস। সো এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার তো কোনো কারণ নেই। যারা এই রকম এনজিওগ্রাম করেছেন বা যারা রিং পরেছেন বা যাদের বাইপাস হয়েছে। ঐরকম রোগীর সাথে আপনারা যখন কথা বলবেন তখন আপনাদের মনের ভয় চলে যাবে।
হার্ট অ্যাটাক নিয়ে ডক্টর টিভির পুরো অনুষ্ঠানটি ভিডিওসহ দেখতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন।