ফুল এবং শিশু পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি, সবচেয়ে কোমল, সবচেয়ে নিষ্পাপ। সন্তান জন্মলাভ তাই একটি পরিবারের জন্য অত্যন্ত আনন্দের বিষয়। তার মধ্যে যদি আবার হয় যমজ সন্তান তাহলে তো আর কোনো কথাই নেই, আনন্দের যেন শেষই হয় না।তবে এই ব্যাপারটা যতটা না আনন্দের ততোটা ঝুঁকিরও।  যমজ সন্তান গর্ভধারণ নিয়ে কথা বলেছেন একাডেমিক ডিরেক্টর ইস্ট ওয়েস্ট মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক ডা. রাতু রোমানা। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ডা. তানিয়া রহমান মিতুল

ডক্টর টিভি: যমজ সন্তান গর্ভধারণ তো সবার হয় না। তো এরকম কী রয়েছে যে, কোন ফ্যাক্টর এখানে কাজ করে। অর্থাৎ, কাদের যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনাটা বেশি? 

অধ্যাপক ডা. রাতু রুমানা: ধন্যবাদ। যমজ সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা কাদের সম্ভাবনা বেশি এ বিষয়ে জানার জন্য একটু বিস্তারিত বলতে হবে। যমজ সন্তান দুই ধরনের হয়। একটা হচ্ছে যারা হুবহু একই রকম দেখতে। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যটা অনেকটা একই রকম। ওদেরকে আমরা বলি আইডেন্টিক্যাল টুইন। আরেকটা হচ্ছে হুবহু দেখতে একই রকম না, ভাইবোন যেমন হয় বা বোন-বোন বা ভাই-ভাই যেমন হয় সেইরকম। তো যেটা প্রথমে বললাম সেটা হচ্ছে আইডেন্টিক্যাল টুইন আর যারা দেখতে এক রকম না বা তাদের বৈশিষ্ট্য একরকম নাও হতে পারে সেটা হচ্ছে ফ্যাটার্ন্যাল টুইন।

আইডেন্টিক্যাল টুইনের কারণ খুব বেশি একটা জানা যায় না। যেমন একটা ডিম্বাণু দিয়ে যদি একটি শুক্র কীটের মিলন হয়। একটা ভ্রুণ তৈরি হয় তখন যদি ওইটা হার্ড হয়ে যায় তখন হবে হুবহু এক রকম দেখতে জমজ বাচ্চা। ওদের কারণ বেশি একটা জানা যায় না।

তবে ফ্যাটারম্যান টুইন বা দেখতে ভাই বোনের মত ওদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে যে, জাতিগত কিছু কারণ থাকতে পারে। যেমন আফ্রিকানরা। আফ্রিকানদের অনেক বেশি জমজ বাচ্চা হয় এশিয়ানদের চাইতে। এছাড়া মায়ের বয়সটা একটা ব্যাপার যেমন মায়ের বয়স ৩০-৩৫ এর মধ্যে হয় তাহলেও জমজ বাচ্চা হবার সম্ভাবনা থাকে। অথবা আজকাল যেটা বেশি দেখতে পাচ্ছি যে, বন্ধ্যাত্ব চিকিৎসার জন্য যে ঔষধগুলো প্রয়োগ করা হয় এটার জন্য অনেক জমজ বাচ্চা আমারা দেখতে পাচ্ছি।

কারণ ওই ওষুধগুলোর কাজ হচ্ছে একটু বেশি বেশি ডিম ফুটানো। আমরা জানি যে, প্রতিটা মেয়েরই মাসিক হওয়ার পর প্রতি মাসে একটা করে ডিম ফুটবে। এই ওষুধগুলোর দ্বারা একটু বেশি বেশি ডিম ফুটে। যার জন্য জমজ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা ওদের একটু বেশি।

ডক্টর টিভি: সাধারণ মানুষের মাঝে একধরনের মিথ আছে যে, জোড়া কলা বা জয়েন্ট কলা খেলে নাকি যমজ সন্তান হয়। এটা আমরা আগে শুনতাম এটা খাওয়া যাবে না। এরকম কিছু কুসংস্কার আমাদের মাঝে ছিল। এ ব্যাপারে কিছু বলুন।

অধ্যাপক ডা. রাতু রুমানা: হ্যাঁ। তবে আরেকটা সায়েন্টিফিক কারণ হচ্ছে জমজ মায়ের মেয়ের জমজ বাচ্চা হতে পারে। কারণ ওখানে কিন্তু একটা জন্মগত ধারা আসে। মায়ের যদি সেই জিনটা থাকে, সেই জিনটা যদি মেয়ের থাকে,যেটা থেকে ডিম একটু বেশি ফুটবে।তাহলে যে মায়ের যমজ সন্তান থাকে সে মায়ের মেয়েরও যমজ সন্তান হতে পারে। মানে জন্মগত একটা দিকও আছে। আর জোড়া কলা বা জয়েন্ট কলা খেলে নাকি যমজ সন্তান হয়- এমন ধারণা নিতান্তই কুসংস্কার।